শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘অপর্ণা’ হয়ে রাতারাতি তারকা বনে যান সুমাইয়া শিমু

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:০৩ এএম, ১৮ মে ২০১৯ শনিবার

সুমাইয়া শিমু। একাধিক গুণে গুণান্বিত এই তারকা কখনো অভিনয়, কখনো মডেলিং, আবার কখনো নাচে দর্শকদের মাঝে সরব ছিলেন। নাটকে তার আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৯ সালে। এরপর থেকে হরেক রকমের কাজ করে জায়গা করে নিয়েছিলেন ভক্তদের মনে। মূলত তিনি খণ্ড এবং ধারাবাহিক নাটকে নিয়মিত অভিনয়ের পাশাপাশি গুটিকয়েক চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। মডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও নিয়মিত হননি তাতে, মাঝে মধ্যে বিজ্ঞাপনে মডেলিং করেন। 

এদিকে, সুমাইয়া শিমু শুধু অভিনয়ে নয়, পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন পড়াশোনাও, পিএইচডি করছেন মিডিয়া বিষয়ে। তিনি অন্যদের মতো এত কাজ করেননি ঠিকই, তবে দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অনেক বেশি। কারণ শুরু থেকে গল্পের ব্যাপারে অনেক সতর্ক ছিলেন এই অভিনেত্রী। ‘অভিনয় করবো টাকা পাবো’ এই ধর্মে একেবারে বিশ্বাসী ছিলেন না তিনি।


 

 

শুরুতে সুমাইয়া তুহিন অবন্তের ‘মনোবাসিতাল’ ও সাইদুর রহমান রাসেলের ‘মধুরা’ নাটকে অভিনয় করে দারুণ সাড়া পেয়েছিলেন। এরপর কবি নজরুলের গল্প অবলম্বনে কাওনাইন সৌরভের নাটক ‘অভিমানিনী’। এ নাটকে ‘শ্যামা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এ নাটকটিরও ভালো দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বলা হয় ‘স্বপ্নচূড়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় সুমাইয়ার শিমুর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এছাড়া ‘ললিতা’ নাটকেও তিনি বেশ ভালো অভিনয় করেন। যা এখনো পর্যন্ত দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। 

সুমাইয়া শিমু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে এমএসএস করার পর নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে এমফিল শেষ করে বর্তমানে পিএইচডি করছেন। তিনি ‘শৈল্পিক ও আর্থসামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের টেলি-প্লে অভিনয়ে নারীর ভূমিকা’ এই বিষয়ের ওপর গবেষণা করছেন। গবেষণায় ব্যস্ততার কারণে তিনি অভিনয় থেকে এখন খানিকটা দূরে আছেন।


 

 

এবার আসি সুমাইয়া শিমুর ধারাবাহিক নাটক ছিল ‘স্বপ্নচূড়া’ প্রসঙ্গে। মূলত এই নাটকটি সুমাইয়া শিমুর ক্যারিয়ার বদলে দিয়েছিল। নাটকটি গল্পের দিক দিয়ে বিশেষ কিছু না হলেও এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘অপর্ণা’র কাণ্ডকারখানা দেখার জন্য দর্শকরা অপেক্ষায় থাকতেন। অপর্ণার বাংলা-হিন্দি’র মিশেলে বলা সংলাপগুলো দর্শকরা উপভোগ করতেন। এতে অপর্ণা চরিত্রে অভিনয় করা সেই মেয়েটি রাতারাতি হয়ে যান দর্শক নন্দিত তারকা।

এরপর থেকে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মিষ্টি হাসির ভক্ত হন অনেকেই। শুধু ‘স্বপ্নচূড়া’র গৃহবধূ অপর্ণায় নন এরপর থেকে অভাবের মাঝেও স্বপ্নে বিভোর ‘ললিতা’ কিংবা ‘হাউজফুলে’র বড় মেয়ে হয়েও প্রতিটি চরিত্রের জন্য মানুষের মন জয় করেন শিমু। তার চোখ, চাহনি ও অভিনয়ের পাগল ছিল অনেকে। এমনকি অনেক বড় বড় আর্টিস্টরাও তার প্রশংসায় মুখর ছিল। এই জন্যই তো ‘এই মেয়েটি তো একেবারে পুতুলের মতো দেখতে’– প্রথম অভিনয়ের দিনই তাকে দেখে এমন মন্তব্য করেছিলেন গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুর। 

শিমু ১৯৯৯ সালে চ্যানেল আইয়ের নাটক অরণ্য আনোয়ারের ‘এখানে আতর পাওয়া যায়’-তে প্রথম অভিনয় করেন। ওই সময় টিভি নাটকের যেমন স্বর্ণযুগ ছিল, তেমনি জনপ্রিয় অভিনেত্রীও ছিলো বেশ। তাই নাটকে শুরুতেই জনপ্রিয়তা পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। এই কারণে প্রথম হতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে শিমুকে।

এদিকে, ‘আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে’ বাপ্পা মজুমদারের এই ‘পরী’ গানের মডেল হয়ে গানের মডেলিং-এ প্রথম আলোচনায় চলে আসেন সুমাইয়া শিমু। এর সঙ্গে চিত্রনায়ক রিয়াজের সঙ্গে ইউরো অরেঞ্জের বিজ্ঞাপন ও টেলিফিল্ম ‘কুড়িয়ে পাওয়া সুখ’ও দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া তিব্বত পমেডের বিজ্ঞাপন, অরুণ চৌধুরীর ‘গোলাপ কেন কালো’-সহ বেশ কিছু আলোচিত ছিল। ইত্যাদিতে সেলিম চৌধুরীর গাওয়া ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ গানেও মডেল হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।

‘স্বপ্নচূড়া’ ছাড়াও সুমাইয়া শিমুর বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক জনপ্রিয় হয়েছিল। এর মধ্যে ‘ললিতা’ ও ‘মহানগর’ অন্যতম। তবে একই জনপ্রিয়তার দিক থেকে ‘হাউজফুল’-ও পিছিয়ে নেই। বাড়ির বড় মেয়ে ‘শিমু’ চরিত্রে অভিনয় করে ফাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মোশাররফ করিমের সঙ্গে তার জুটি ছিল দারুণ জনপ্রিয়। যদিও হাউজফুলে মোশাররফ ও শিমু মামা-ভাগ্নীর চরিত্র করেছিলেন। তবে এই জুটির ‘হ্যালো’ নাটকটি ভীষণ দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। এরপর এই জুটি একে একে ‘এফএনএফ’, ‘রেডিও চকলেট’, ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’, ‘জিম্মি’সহ অনেক নাটকে অভিনয় করেছিলেন। যার সবকটি দর্শক বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করেছিল।

পরিচালকরাও এরপর বুঝে গিয়েছিলেন মোশাররফ করিমের বিপরীতে সুমাইয়া শিমুকেই সবচেয়ে ভালো মানায়। তাই তারা এই জুটিকে নিয়ে অনেক নাটকে অভিনয় করান। এছাড়া মাহফুজ আহমেদের সঙ্গেও মানিয়ে যেতেন সুমাইয়া শিমু। ক্যারিয়ারে তার সঙ্গেও অনেক কাজ করা হয়েছে এই অভিনেত্রীর।


 

 

সুমাইয়া শিমুর নাটকের মধ্যে অন্যতম হলো- ‘ফুল একা একা ফোটে’, ‘প্রজাপতি মন’, ‘ঢং’, ‘খেলা’, ‘তৃতীয় নয়ন’ প্রভৃতি। একক নাটক ‘তক্ষক’-এও অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে সবচেয়ে বড় অর্জন ‘স্বপ্নচূড়া’য় দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য দর্শক জরিপে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছিলেন শিমু। তিনি ২০০৯ সালে এই পুরস্কার পান। এর বাইরে ২০১০ থেকে ২০১২’র মধ্যে আরো পাঁচবার মনোনয়ন পান।

শিমুর জন্ম ১৯৮০ সালের ৩০ এপ্রিল। তার শৈশব কেটেছে নড়াইলে। বাবা হলেন সরকারি কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান। মা লায়লা রহমান। শিমু ২০১৫ সালে বিয়ে করেন নজরুল ইসলামকে। বিয়ের পর থেকেই অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে যান তিনি। খুব কম দর্শকই জানেন যে, তার সত্যিকারের নাম হল সুমাইয়া রহমান শিমুল। কাজ শুরু করার সময় কয়েকজন নির্মাতার পরামর্শে নামটা ছোট করে ‘শিমু’ রাখেন তিনি। তখন থেকেই দর্শকদের মনে তিনি শিমু নামেই বেশি পরিচিত।