শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

থেমে নেই এসপি হারুন !

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৫১ পিএম, ১৮ মে ২০১৯ শনিবার

একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিনকয়েক আগে পুলিশ সুপার হিসেবে নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেন এসপি হারুন অর রশিদ। নারায়ণগঞ্জে যোগদেয়ার পর পরই বেশ কিছু কাজে হাত দেন তিনি। এর মধ্যে জেলার পুলিশ সদস্যদের নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধেও তার অবস্থান জানান দিয়েছেন তিনি। 


বিশেষ করে জেলার বিভিন্ন থানায় যে সমস্ত সিভিল টিম পরিচালিত হতো তিনি তা বন্ধ করে দেন। এ কারণে সন্ত্রাসী, ভুমি দস্যু, মাদক বিক্রেতাদের মধ্যেও এক ধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার হয় বেশ কিছু সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিরা।


জেলার প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায় এই এসপির। সব কিছু মিলিয়ে জেলার সাধারণ মানুষের একটি আস্থার জায়গা এসপি হারুন। 


নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষ কোন ঝামেলায় পড়লেই এখন সরাসরিতার  সাথে দেখা করে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন।  ইতিমধ্যে  জেলায় বেশ কয়েকটি সফল অভিযানও করেছেন তিনি। তবে যে কারণে তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত তা হলো তার সময়েই প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। 


মাদক, জ্বালানী তেল চুরি , জুয়ার আসরসহ সাংসদের আত্মীয়ের পাগলার মেরিএন্ডারসনে মাদক বিক্রিতেও বাধা দিয়েছে তিনি। এসপির কর্মকান্ডে নিরীহ ও ভুক্তভোগী মানুষ আশার আলো দেখছে। সব সময় দ্রুত অ্যাকশনে থাকেন তিনি। তাই মানুষের আস্থার জায়গাটিও খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি দখল করে নিয়েছেন এমনটিই মনে করে জেলাবাসী।


নারায়ণগঞ্জ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই জেলায় এ পর্যন্ত যত এসপি এসেছেন তারা প্রভাবশালী মহলের বলয়ে থেকেই কাজ করেছেন। তবে এসপি হারুন এর ব্যতিক্রম। জেলায় যোগদানের পর তিনি নিজেকে ব্যতিক্রম বলেই জানান দিয়েছেন বিভিন্ন সভা সেমিনারে ও তার কর্মকান্ডে। জেলার সাধারণ মানুষ সেই ব্যতিক্রম চিত্রই দেখছে এসপি হারুনের মাঝে। তবে তিনি জেলার সকল সাংসদদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রেখেই কাজ করছেন বলেও বিভিন্ন সভা সেমিনারে কথা বলেন। এসপির উপর যে  দায়িত্ব ও কর্তব্য তা তিনি ঠিকভাবেই পালন করার চেষ্টা করছেন বলেও মনে করনে সাধারণ মানুষ। 

জুলুম ও অত্যাচারের শিকার জেলার মানুষগুলোকে প্রতিদিন সকাল থেকেই ভীড় করতে দেখা যায় এসপি হারুনের কার্যালয়ে। জামতলা এলাকায় একজন প্রবাসীর জমি দখলের অভিযোগে সাংসদ শামীম ওসমানের আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা নেন এসপি হারুন। এ নিয়ে সাংসদ ও এসপির মধ্যে দুরত্ব তৈরির সংবাদ চাউর হয়। যদিও এসপি বক্তব্যে  বলেছেন, সাংসদদের সাথে তার সম্পর্ক ভাল, কোন দ্বন্দ্ব নেই। ঠিক এর পরেই নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাট সংলগ্ন একটি জুয়ার আসরে হানা দেয় পুলিশ। 
সেখান থেকে ৪১জন জুয়ারীকে আটক করে জেলা গোয়োন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই জুয়ার আড্ডাটি রাজু সাংবাদিক নামে একজন চালাতেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এছাড়াও গত ১ এপ্রিল পাগলা মেরিএন্ডারসনে এসপির নির্দেশে হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৭১জনকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ।
 
এসময়  মেরিএন্ডারসনে মাদক বিক্রির সাথে সাংসদ শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর  সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ উঠে আসে। পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে এই নামটিও উঠে আসে। এনিয়ে এসপি হারুনকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করলেও এসপি তার অবস্থান থেকে পিছপা হননি।

অপরদিকে জেলার ডিস ক্যাবলের ডন হিসেবে পরিচিত আব্দুল করিম বাবুকে বন্দরে একটি চাঁদাবাজীর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও সাংসদ শামীম ওসমানের দেহরক্ষী মামুন ফকিরের (বর্তমানে অন্য জেলায় বদলী) কাছে পুলিশের  যে ওয়াকিটকি ছিল তা পুলিশ লাইনে জমা নেন এসপি হারুন। 

অভিযোগ ছিল ওয়াটকির মাধ্যমে শামীম ওসমান পুলিশের গতিবিধি শুনে থাকতে পারেন। সাংসদের দেহরক্ষীর কোন ওয়াকটকির বিধান না থাকলেও সাংসদ শামীম ওসমানের দেহরক্ষী ওয়াকিটকি ব্যবহার করতেন। এর আগের জেলার এসপি যারা ছিলেন তারা এ ব্যাপারে কোন শব্দও করেননি। কিন্তু এসপি হারুন এব্যাপারে শক্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন। 

এছাড়াও ফতুল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী মীর হোসেন ওরফে মীরু, পাগলা বাজার মালিক সমিতির নেতা টেনু গাজী, তেল চোর সিন্ডিকেটের  সদস্য ইকবাল চৌধূরীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেন এসপি হারুন। জেলায় দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা সন্ত্রসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এসপি হারুণের অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ।