শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মৌসুমী অপরাধী ধরতে তৎপর ডিবি পুলিশ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:২৩ এএম, ১৯ মে ২০১৯ রোববার

ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর বেড়ে যায় মৌসুমী অপরাধীদের তৎপরতা। শুধু রাজধানীতই নয়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও প্রতারণার ফাঁদ পাতে এসব চক্র। অন্যবারের মতো এবারো তৎপর রয়েছে একাধিক চক্র; এমন তথ্যে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঈদের কেনাকাটার ব্যস্ততায় বেড়ে যাওয়া ছিনতাইসহ মৌসুমী অপরাধী ধরতে এরইমধ্যে অভিযান শুরু করেছে ডিবির ৩২ টিম। সে সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ ও র‌্যাব। এসব অপরাধী ধরতে গোয়েন্দা বেশে নগরীর ব্যস্ত জায়গা ও শপিংমলগুলোর পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ডিবির একাধিক সদস্য।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির ৬৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি।

এ বিষয়ে ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এসব সংঘবদ্ধ অপরাধীরা রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় আসা লোকজনকে টার্গেট করে সখ্যতা স্থাপন করে। পরে তাদের অপর সহযোগিরা টার্গেটকৃত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো পানীয় বা খাদ্যদ্রব্য খেতে আমন্ত্রণ জানায়।

টার্গেট করা ব্যক্তি রাজি হলে তাকে চেতনা নাশক মেশানো ওই খাবার খাওয়ায় ও নিজেরা সাধারণ খাবার খায়। এসব পানীয় বা খাবার খেয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি অজ্ঞান হলে, তারা তার মূল্যবান জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা ও মোবাইলফোন নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে।

এসব ক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, ক্রিম জাতীয় বিস্কুটসহ বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে। আবার কখনো কখনো অজ্ঞান ব্যক্তির মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তার স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ ও অন্যান্য মাধ্যমে মুক্তিপণও আদায় করে।

তবে এবার বড় অঙ্কের অর্থবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানি এস্কর্ট সেবা দিচ্ছে ডিএমপি। তাই বড় অঙ্কের অর্থ বহন ও উত্তোলনে সতকর্তা অবলম্বনসহ এ সেবা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে ডিবি সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রতারকদের তৈরি কোটি টাকার জাল নোট। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো সারাবছর তৎপর থাকলেও উৎসবে বড় টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে তারা। এ সময় মুদি দোকান থেকে শপিংমল সবখানে থাকে উপচেপড়া ভিড়। এ সুযোগে জাল নোটগুলো মাঠে ছাড়ে চক্র। অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকে লেনদেন ও এটিএম বুথেও জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়।

তবে জাল নোটের এসব চক্র ধরতেও মাঠে সক্রিয় রয়েছে ডিবি। এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মশিউর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার কারবারি, অজ্ঞান, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তাই নগরবাসীর নিরাপত্তায় এসব মৌসুমী অপরাধীকে গ্রেফতারে কাজ শুরু করা হয়েছে।

পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতায় রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারের পর কারামুক্ত হয়ে তারা একই কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে তারা খুব সর্তকতার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। এ দিকটাও নজরে রয়েছে।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সাধারণ জনগণকে সতর্ক হতে হবে। কারণ তারা পান, ডাব, শরবত, মসলা-মুড়ি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাদ্যের বিক্রেতা হিসেবে হকারি করে। ভদ্র চেহারার যাত্রীবেশে বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, সদরঘাট এমনকি বিমানবন্দরে ঘুরে যাত্রীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে।

সম্প্রতি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ও এসব তৈরির সরঞ্জামসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি দক্ষিণ বিভাগের গাড়ি চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম। 

এ বিষয়ে ডিএমপি’র গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের ডিসি মো. মাসুদুর রহমান বলেন,  গোয়েন্দা তথ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ব রসুলপর থেকে সবুজ ও জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকার জাল টাকার নোট উদ্ধার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের ইসলামবাগের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার জাল নোট ও এ সব তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, জাল টাকা তৈরি করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করত।

এ দিকে কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া জাল নোট, অজ্ঞান, চুরি, ছিনতাই ও মলম পার্টি সম্পর্কে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতারক চক্রের সব নেটওয়ার্ক আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাদের হাতের নাগালে রয়েছে। আশা করি এবার প্রতারক চক্র তেমন বড় ধরণের ঘটনা ঘটাতে পারবে না। 

তিনি আরো বলেন, প্রতিনিয়ত এসব প্রতারক চক্রের সদস্য ধরা হচ্ছে। তারপরও আপনারা সচেতনভাবে চলাফেরা করবেন। অন্যের দেয়া কিছু খাবেন না এবং ব্যাংক থেকে বেশি অর্থ লেনদেনের সময় পুলিশের সহযোগীতা নেয়ার আহ্বান জানান।