পদ্মাসেতু ৫৩৭০, মেট্রোরেল পাচ্ছে ৭২১২ কোটি টাকা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:২১ এএম, ২১ মে ২০১৯ মঙ্গলবার
স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ আরো এগিয়ে নিতে আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) জন্য উন্নয়ন বাজেটে ৫ হাজার ৩৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। একই সঙ্গে মেট্রোরেল প্রকল্পে ৭ হাজার ২১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসেই প্রকল্প দুটি সম্পন্ন হওয়ার কথা। সেতু তৈরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের আগে সম্পূর্ণ কাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে। তারপরও প্রকল্প দুটির কাজ এগিয়ে নিতে বরাদ্দ রাখছে সরকার।
পদ্মাসেতুতে ৩১২টি রেলওয়ে স্ল্যাব ও ১৬টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো সম্পন্ন হয়েছে। ৪২টি পিলারের মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে ২৫টি পিলার। নদী অংশের ২৬২টি পাইলের মধ্যে ২৩৬টি পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মাসেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান।
অন্যদিকে নগরীর সড়কজুড়ে দৃশ্যমান হচ্ছে মেট্রোরেল। পিলারের উপরে একে একে বসছে স্প্যান।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
অন্যদিকে ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এ এলাকায় বসবাসকারী লাখো নগরবাসী মেট্রোরেল ব্যবহার করে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। ঘণ্টায় ১শ’ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যাত্রী নিয়ে। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
চলতি বছরেই খুলে যাবে প্যাকেজ-৩ ও প্যাকেজ-৪। এর আওতায় উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। উভয় প্যাকেজের কাজ ২০১৭ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়েছে। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ফলে চলতি বছরেই স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়বে ঢাকাবাসী।
পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের মতো দেশের সকল প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) জন্য উন্নয়ন বাজেটের প্রধান অংশ তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়া এবার এডিপির আকার হবে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এডিপিতে পদ্মাসেতু ও পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগসহ সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ঠিক করতে মঙ্গলবার (২১ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা বসছে। পরিকল্পনা কমিশন আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন কাজের জন্য এডিপির প্রস্তাব করবে বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার ১০টায় এ বৈঠক শুরু হবে। প্রতি বছরই এনইসি সভায় এডিপি চূড়ান্ত করা হয়।
পরিকল্পনা বিভাগ প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) খলিলুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এনইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এবারে স্থানীয় সরকার ও পরিবহন খাততে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এনইসি সভায় ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এডিপি চূড়ান্ত করবেন। দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাড়ছে ফলে এডিপি’র আকারও বাড়ছে।
মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু ও পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হবে ৫২ হাজার ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হবে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ।
এছাড়াও শিক্ষা ও ধর্ম খাতে চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হবে।
পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ, কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৫ কোটি ৯৩ লাখ, পানিসম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে।