শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সেই ৫২ পণ্য সরে যাচ্ছে ঢাকার বাজার থেকে

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ২৩ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বিএসটিআইর পরীক্ষায় নিম্ন মানের হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় যে ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ঢাকার বড় বাজারগুলো থেকে তা প্রায়ই উঠে গেছে। দোকানিরা বলছেন, আদালতের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে তারাও পণ্যগুলো বিক্রি করছেন না, আবার কোম্পানিগুলোও সেগুলো ‍তুলে নিয়ে যাচ্ছে। গত ১২ মে বিএসটিআইএর পরীক্ষায় অনুত্ত্বীর্ণ ১৮টি কোম্পানির ওই ৫২টি পণ্য নিয়ে বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই আদেশের ১০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগে বুধবার ঢাকার মিরপুর, কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচা, শ্যামলী এলাকার বড় বাজারগুলোর ঘুরে অধিকাংশ দোকানেই সেই পণ্যগুলো দেখা যায়নি।

কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এতদিন দোকানগুলোতে এসিআই ব্র্যান্ডের যে লবণ ছিল সেখানে তা আর নেই। সেখানে সিএসআই ব্রান্ডের সুপার সল্ট ও মোল্লা সুপার সল্টের আধিক্য। নিষিদ্ধ অন্যান্য পণ্যগুলো কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে নিজ উদ্যোগে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ দোকানি। ঢাকার কারওয়ান বাজারের দোকানগুলোতে এক সপ্তাহ আগেও মিলছিল ৫২টি পণ্যের অনেকগুলো, যা এখন নেই ঢাকার কারওয়ান বাজারের দোকানগুলোতে এক সপ্তাহ আগেও মিলছিল ৫২টি পণ্যের অনেকগুলো, যা এখন নেই।

পীরেরবাগে মুদি দোকানি আবুল কালাম বলেন, “মোল্লা লবণ নিষিদ্ধ করা হলেও মোল্লা সুপার সল্টের লবণে নিষেধাজ্ঞা নেই। কোম্পানি মোল্লা লবণ প্রত্যাহার করে নিয়ে মোল্লা সুপার সল্ট দিয়ে গেছে।” বিএসটিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মোল্লা সুপার সল্টের উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকার কথা জানা যায়।

মিরপুর বড়বাগের মুদি দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, তীর ও রূপচাঁদার সরিষার তেল তার দোকান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। এসিআই লবণও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগিনা জেনারেল স্টোরের দোকানি কাজী আনোয়ার বলেন, “যে দিন হাই কোর্ট থেকে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে, এর পরের দিন থেকে কোম্পানিগুলো তাদের সেসব পণ্য নিয়ে যাওয়া শুরু করে। এরপর থেকে আমরাও ওইসব কোনো পণ্য আর বিক্রি করছি, কাস্টমারও সেগুলো নিচ্ছে না।”

আনোয়ার দাবি করেন, তার দোকানে ওই ৫২টি পণ্যর কোন একটিও এখন আর নেই। একই বাজারের সাদ্দাম জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী মাসুদ হোসেন বলেন, “আমার দোকানে রূপচাঁদা, তীরের সরিষার তেল ছিল, যখন শুনলাম এগুলো হাই কোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে এরপর থেকে এগুলো আর বিক্রি করি না। কোম্পানির লোকেরা এসেছিল, আমরা তাদের কাছে সেগুলো ফেরত দিয়ে দিয়েছি।”

উচ্চ আদালত থেকে ৫২টি পণ্য বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর ক্রেতারাও সেগুলো আর নিচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “খারাপ জেনে কোনো পণ্য ক্রেতারা নিতে চায় না। আমরা যে পণ্য বেশি বিক্রি করতে পারি, সেগুলোই বেশি রাখি। প্রতিযোগিতার বাজারে বিক্রি বেশি হলে লাভ কম হলেও পোষানো যায়।”

বিজয়নগর এলাকায় ফারিয়া জেনারেল স্টোরের মালিক ইসমাইল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার দোকানে ওই ৫২টি পণ্যে কোনটি রয়েছে কি না? তিনি বলেন, “আমার এখানে খাদ্য আইটেম বেশি, এই লিস্টের মধ্যে কেবল সান চিপসটি রয়েছে। তবে হাই কোর্ট যেহেতু বিক্রি না করতে বলেছে তাই এটা বিক্রি করব না।”

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢা্কা বিভাগীয় প্রধান মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, তাদের অনুরোধে অধিকাংশই কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছে। জেলা পর্যায়ে দোকানিরা কিছু নিষিদ্ধ পণ্য রেখে দিয়েছে। অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়গুলো এধরনের অপরাধ চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই ওই ৫২টি পণ্য নিয়ে বাজার তদারকি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাজার থেকে পণ্যগুলো প্রত্যাহার করতে একইভাবে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মধ্যে সেই আদেশ বাস্তবায়ন করা না হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তুষার আহমেদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ৫২টি পণ্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই দিন ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন তারা।
“সেখানে কিছু নিষিদ্ধ পণ্য পেয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই আরও চারটি মোবাইল কোর্ট চালানো হবে।”