একমুঠো মুড়ি আর পানিই ইফতার
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৩৪ এএম, ২৫ মে ২০১৯ শনিবার
পরিবারের সঙ্গেতো নয়ই, বেশিরভাগ সময়ই ইফতার করতে হয় ব্যস্ততম রাস্তায়। সারাদিন রোজা রেখে উচ্চ শব্দের মাঝে একটুও ভেঙে না পড়ে উল্টো দায়িত্ব ভেবে হাসিমুখেই হাত উঁচিয়ে ইশারা দিয়েই চলেন অবিরাম।
বুকভরা কষ্ট থাকলেও মুখে আক্ষেপ নেই নগরীর যানজট সামলানো ট্রাফিক সদস্যদের। তাই তো হাতে একমুঠো মুড়ি নিয়েই ট্রাফিক বক্স থেকে নেমে পড়েন রাস্তায়। আবার কেউ কেউ শুধু মুখে পানি নিয়েই ফের নেমে পড়েন যানজট মুক্ত করতে। একটা সময় ঠান্ডা হয়ে যায় ইফতারি। তেলে ভেজা নরম মুড়ি-ছোলা আর উঠে না মুখে। তারপরও উপোস ভাঙতে একমাত্র আশ্রয় সেই একমুঠো মুড়ি কিংবা এক বোতল পানিই।
যানজটের নগরী হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকা। অনেক সময় সরকারি ছুটির দিনেও চোখে পড়ে দীর্ঘ যানজট। তাছাড়া অফিস আদালতের দিনে গাড়ির চাকা যেন ঘোরেই না।
ব্যস্ততম শহরে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে যারা মানুষের চলাচল সহজ করতে ছুটছেন তারা হলেন বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের চৌকস সদস্যরা।
দিন নেই রাত নেই নিরলস ভাবে ব্যস্ততম রাস্তায় দাঁড়িয়ে উচ্চ শব্দের মাঝে যানজট মুক্ত করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় তাদের। তবে রমজান মাসে রোজাদারদের দ্রুত বাসায় ফেরা,পরিবারের সঙ্গে ইফতারির সুযোগ করে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্রাফিক পুলিশ।
কিন্তু প্রশ্ন, সড়ক আইন না মেনে যারা চলাচলে তাড়াহুড়ো করে ছুটে চলেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেন ট্রাফিক পুলিশেরও পরিবার স্ত্রী সন্তানরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। উল্টো সামান্য ভুলে কটুকথা বলতে দ্বিধা করেন না।
বেশিরভাগ সময়ই নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কেই দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তির শেষ নেই নগরবাসীর। রমজান এলে তা রূপ নেয় ভয়াবহ মাত্রায়। এমনিতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নাভিশ্বাস উঠে ট্রাফিক পুলিশের। আর ইফতারের আগমুহূর্তে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাদের।
শুক্রবার ইফতারের আগমুহূর্তে বনানী সিগন্যাল। ট্রাফিক সিস্টেম সামলাতে ১২-১৪ জন পুলিশের ঝড়ছে ঘাম। এর মধ্যেই দুই-একজন ট্রাফিক বক্সে নিচ্ছেন ইফতারের প্রস্তুতি। সময় ঘনিয়ে এসেছে, তবুও মনোযোগ রাস্তার এপার-ওপার গাড়ি সামলানোতেই।
এর মধ্যেই কথা প্রসঙ্গে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সার্জেন্ট মো. রবিউল ইসলাম জানান, প্রত্যেকের জন্যই নিজ নিজ বিভাগ থেকে ইফতারের বক্স সরবরাহ করা হয়। যেখানে খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি আর ছোট পানির বোতল থাকে। ইফতারের সময় ট্রাফিক বক্সে সবগুলো একসঙ্গে মাখিয়ে নিজেরা আরো কিছু যোগ করে দ্রুত সারতে হয় ইফতার। তবে কমপক্ষে একজনকে থাকতে হয় সিগন্যালে।
তিনি বলেন, এখন রমজানের মাঝামাঝি সময়। এখন শুধু অফিস থেকে ঘরে ফেরার তাড়া নয়, সেই সঙ্গে কেনাকাটার তাড়াও রয়েছে সবার মাঝে। তাই ইফতারের পর গাড়ির চাপ থাকে বেশি। এ জন্য যানজট কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে ইচ্ছে হয় কি-না জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম হাসিমুখে বলেন, আমাদের কাজটাই সেবামূলক। এতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। দায়িত্ব পালন করছি বলেই আর দশজন ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে পারছেন,যা ট্রাফিক পুলিশের সার্থকতা।
খিলক্ষেতে আব্দুর রাজ্জাক নামে আরেক ট্রাফিক সদস্য বলেন, শিফট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আমরা দুই-এক দিন পর পর বাসায় ইফতারের সুযোগ পাই। কিন্তু ২০ থেকে ২৫ রমজানের মধ্যে চাপ বেড়ে গেলে ডিউটি বাড়বে, তখন সুযোগটা কমে যাবে।
মুখে হাসি নিয়েই তিনি বলেন, চাকরির প্রথমে একটু খারাপ লাগতো। এখন বলতে পারেন অনেকটা অভ্যাস হয়ে গেছে। আমাদের কাজ তো রাস্তায়। আমরা রাস্তা ছেড়ে দিলে, অনেকের ইফতার হবে রাস্তায়।
পাশে থাকা আর এক সদস্য বলেন, ইফতার হয়তো পরিবারের সঙ্গে করতে পারি না, কয়দিন পর ঈদ আসবে, তখন ছুটি পাবো কি-না জানি না’বলতেই কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে তার।
সাধারণত, রমজানে প্রায় সব অফিসেই কমে যায় কর্মঘণ্টা। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের ক্ষেত্রে তা হয় উল্টো। পরিবারের সঙ্গে ইফতারের জন্য সবাই যখন ছুটছেন ঘরে, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে হাত উঁচিয়ে সড়কের শৃঙ্খলায় ব্যস্ত তারা।
এতো কিছুর পরও ট্রাফিক পুলিশের ইফতারের মান নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। অনেক সময় পানির পিপাসাও মেটেনা তাদের।