শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বসবে ‘বিশেষ অধিবেশন’ থাকছে ‘নানা আয়োজন’

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:২৬ এএম, ২৬ মে ২০১৯ রোববার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে ঘিরে মেগাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জাতীয় সংসদ। এরমধ্যে প্রথমবারের মতো শুধুমাত্র জাতির জনকের জীবন ও কর্মসহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের মাধ্যমে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে। 

বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি চালাতে করণীয় নির্ধারণে এরইমধ্যে জাতীয় সংসদের সব সংসদীয় কমিটির সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে তিনটি সাব-কমিটি। প্রাথমিকভাবে সংসদ চত্বরে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ তৈরির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই মঞ্চে শুধু এমপিরা নন, বঙ্গবন্ধু প্রাণ যে কেউ বাংলাদেশের অবিসংবাধিত এই নেতার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাবেন।   

সংসদ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মুজিব বর্ষ উদযাপনের জন্য চমকপ্রদ নানা কর্মসূচির কথা ভাবছে সংসদ। এ নিয়ে শতাধিক খসড়া প্রস্তাবনাও তৈরি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরইমধ্যে সব মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে তিনটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকাশনা বিষয়ক দুটি উপ-কমিটি কাজ শুরু করেছে। আরেকটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি বিদেশি অতিথিদের নির্বাচন ও তাদের আমন্ত্রণ, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। প্রায় সব এমপিকে সম্পৃক্ত করা হবে মুজিব বর্ষ পালনের কর্মসূচিতে। তাদের সঙ্গে থাকবেন সংসদ সচিবালয়ের ১২শ কর্মকর্তা ও কর্মচারি। 

 

কর্মসূচি পালনে সংসদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে তৈরি করা হবে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ। বছরব্যাপী ওই মঞ্চে থাকবে নানা আয়োজন। ডাকা হবে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা। দেশি-বিদেশি অতিথিদের অংশগ্রহণে থাকবে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে বিশ্বের সব দেশের পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে পাঠানো হবে বিশেষ উপহার প্যাকেট। প্যাকেটে থাকবে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ইংরেজী ভার্সন, প্রকাশনা, ব্রুসিয়ার, মেমোরিয়াল কয়েন। 

জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে ঘিরে উচ্ছসিত স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও। সাংবাদিকদের কাছে নিজের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী অনেক বড় বিষয়। আমরা যে এই সময়টা সেলিব্রেট করতে পারছি সেটাও কিন্তু একটি ঐতিহাসিক ব্যপার। আমরা প্রত্যেকে একটি ইতিহাসের অংশ হবো। আমরা তো আর কেউ চিরকাল থাকব না। আগামীতে আরো অনেক প্রজন্ম আসবে। এটি আমাদের জন্য একটি মাইলস্টোন হিসেবে থাকবে। এ সুযোগ পাওয়াটা অনেক বিরল বিষয়। 

 

স্পিকার বলেন, সংসদের পক্ষ থেকে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা দিতে চাই যে, যার জন্য আমাদের এই দেশ, যার জন্য আমাদের এই সংসদ, যার জন্য আমরা আজকে সারাবিশ্বে মাথাউঁচু করে স্বাধীন জাতি হিসেবে দাঁড়াতে পারি, যাকে ঘিরে সারাবিশ্বে আমাদের আত্মপরিচয়, বাঙালি হিসেবে আত্মপরিচয়, এজন্য তার জীবনকে, জন্মকে আমরা সেলিব্রেট করব। একজন মহান নেতা কিন্তু সচরাচর একটি জাতির জীবনে আসে না। 

তিনি বলেন, কর্মসূচি নিয়ে অনেক ধরনের প্রস্তাব আছে। এক্ষেত্রে সমন্বয়টা খুব জরুরি। কারণ জাতীয় কমিটি যে কাজ করবে আমরা তার ডুব্লিকেট করতে চাই না। আমরা আমাদের স্বাতন্ত্রিকতা রেখে সংসদ কেন্দ্রিক কিভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা যায় সেটা দেখব। প্রত্যেকের একটি বিষয়বস্তু আছে। পার্লামেন্টেরও একটা বড় বিষয়বস্তু আছে। যেমন-গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, দেশকে এগিয়ে নেয়া, উন্নয়ন সবকিছু। গণপরিষদ, সংবিধান প্রণয়ন থেকে শুরু করে জাতির পিতার কাজগুলো সেগুলো আমরা ফোকাস করব। একটি দেশসৃষ্টি ও সংবিধান প্রণয়নের জন্য যা কিছু তিনি করেছেন তা তুলে ধরা হবে। তারপর কিভাবে গণপরিষদে সংবিধান পাস হলো এসব দিক থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখব। পাশাপাশি সংসদে উনি কি কি বক্তব্য রেখেছেন তা দেখা হবে। বঙ্গবন্ধুর তো অনেক বক্তব্য রয়েছে। তবে পার্লামেন্ট কেন্দ্রিক যে বক্তব্যগুলো আছে সেসব বিষয় হাইলাইট করা হবে। 

 

নিজের একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ড. শিরীন শারমিন বলেন, আমরা বিশ্বের বিভিন্ন সংসদকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বিষয়টি জানাতে চাই। সে বিষয়ে আমার নিজস্ব একটি চিন্তা রয়েছে। তাহলো-বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ইংরেজির কপি, তার সঙ্গে আরো কিছু প্রকাশনা বা মেমোরিয়াল কয়েন, একসঙ্গে একটি প্যাকেজ করে সারাবিশ্বের সব স্পিকারের কাছে পাঠাতে পারি। 

স্পিকার বলেন, পুরো বছরব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি সাজানো হবে। বেশকিছু সেমিনার, ওয়ার্কশপ থাকবে বঙ্গবন্ধুর ওপরে। সেখানে হয়তো বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টারিয়ান, স্পিকারসহ কাদের আনা যায় সেটা চূড়ান্ত করা হবে। অনেক প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ করার প্রস্তাব। বছরব্যপী ওই মঞ্চ রাখা হবে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান চলবে। বঙ্গবন্ধুর ওপরে কোনো বিশেষ অধিবেশন ডাকা যায় কিনা সেটিও ভাবা হচ্ছে। সেটি হলে কিভাবে তা সাজানো হবে, কারা বক্তব্য রাখবেন, বাইরের কোনো অতিথি আসবেন কিনা তা ভাবা হচ্ছে।