র্যাম্বোকে একনজর দেখতে জনসমুদ্র
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:০৯ এএম, ২৬ মে ২০১৯ রোববার
পালে দে ফেস্তিভাল ভবনের সাল দুবুসি প্রেক্ষাগৃহের সামনে লালগালিচা। এর ওপর কেবল দু’জন নিরাপত্তা কর্মী। তবে ফটকের বাইরে জনসমুদ্র!
কান উৎসবের একাদশ দিনে শুক্রবার (২৪ মে) দুপুর পৌনে ১টার চিত্র এটি। ভবন থেকে বেরিয়ে একজন বয়স্ক নারীর হাতে লেমিনেটিং করা একটি কাগজে চোখ আটকে গেলো। তাতে লেখা, ‘সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে দেখতে একটি নীল রঙের টিকিট চাই, প্লিজ।’ লেখার শেষে আছে হতাশার ইমোজি।
আরেকটু সামনে এগোতেই সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা একজন দৃষ্টি কাড়লেন। এতে সিলভেস্টার স্ট্যালোনের র্যাম্বো রূপী একটি ছবির ছাপ। এর নিচে লেখা, ‘জন জে. র্যাম্বো। অক্টোবর ২২, ১৯৮২।’ লোকটার নাম রদ্রিগেজ। বাড়ি ব্রাজিলে। পেশায় সাংবাদিক। তার মোবাইল ফোনের ব্যাককাভারে র্যাম্বোর একটি স্টিকার। তার সঙ্গে গত চার বছর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। টি-শার্ট আর মোবাইল ফোন দেখিয়ে তিনি জানালেন, আজ ৩৮ জনের সামনে তাকে পোজ দিতে হয়েছে!
চলচ্চিত্র দুনিয়ার বিখ্যাত চরিত্রগুলোর মধ্যে আমেরিকান-কানাডিয়ান ঔপন্যাসিক ডেভিড মোরেলের সৃষ্টি জন র্যাম্বো অন্যতম। ছোটবড় সবাই তাকে চেনে। তাই দক্ষিণ ফ্রান্সের কানসৈকতে সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে ঘিরে উন্মাদনার ঢেউ উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। আয়োজকরা তাই তার মাস্টারক্লাসকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিলেন। পালে দে ফেস্তিভাল ভবনের সাল বুনুয়েল থিয়েটারে শুক্রবার বিকাল ৪টায় হওয়ার কথা থাকলে তা দুপুর ২টায় এগিয়ে আনা হয়। বেশিসংখ্যক ব্যাজধারী ও ইনভাইটেশন থাকা দর্শককে সুযোগ দিতে বদলানো হয় ভেন্যু।
সাল দুবুসিতে একেবারে সামনে থেকে তিন সারি পেছনে আসন ফাঁকা পাওয়া গেলো। দুপুর ২টার ঘর পেরোতেই কান উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো মঞ্চে উঠে শুভেচ্ছা বক্তব্য শুরু করলেন। সেদিকে কারও নজর নেই। সবার চোখ দরজার দিকে। তাই তিনি সবাইকে মঞ্চে তাকানোর আহ্বান জানালে পড়ে যায় হাসির রোল। থিয়েরির ডাক পেয়ে দুবুসিতে ঢোকেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় সবাই। কানায় কানায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত দর্শকদের হাততালি চলছে তো চলছেই!
অবিরাম করতালিতে সিক্ত ‘র্যাম্বো’ তারকা হাত নাড়লেন। মুখে হাসি। হাততালি থামছে না দেখে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে ভক্ত, দর্শক, সংবাদকর্মীদের পেছনে রেখে সেলফি তুললেন। তার বয়স নাকি ৭২ বছর। অথচ এখনও কী শক্তিমান! পেশীবহুল শরীরটা তরুণদের চেয়েও আকর্ষণীয়। জিন্স ও কালো টি-শার্ট পরেছেন। এর ওপরে জ্যাকেটের মতো করে সাদা-নীল চেক শার্ট। পায়ে তামাটে রঙের কাউবয় বুট। তার স্বাচ্ছন্দ্যই বলছিল, এ আয়োজনে অংশ নেওয়াটা তিনি বেশ উপভোগ করেছেন।
ঘণ্টাখানেক ক্যারিয়ারের ব্লকবাস্টার ছবিগুলোর পাশাপাশি জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন স্ট্যালোন। এর মধ্যে জানালেন, সত্তর দশকে ‘রকি’ (১৯৭৬) ছবিতে ব্যবহৃত দুটি কচ্ছপ আজও নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন তিনি। এগুলোর নাম কাফ ও লিংক। তাদের বয়স ৫৫ বছর! তিনি বললেন, ‘ওরাই আমার একমাত্র জীবিত বন্ধু। বাকি সবাই চলে গেছে।’
জীবনের দর্শন প্রসঙ্গে স্ট্যালোন বলেন, ‘কখনও হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। লেগে থাকতে হবে। এভাবেই আমি এগিয়েছি। নিজেকে সবসময়ই প্রমাণ করতে হয়। ব্যর্থতা মানুষকে খাঁটি করে। কখনও কখনও সাফল্য বোকা বানিয়ে দেয় আমাদের।’
মাস্টারক্লাস শেষে বিজয়ীর মতো দুই হাত তুলে ধরেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। তাকে উপহার দেওয়া হয় ফ্রেমে বাঁধাই করা র্যাম্বোর সাজে তার পুরনো একটি ছবি।
এর আগে শুক্রবার সকালে পালে দে ফেস্তিভাল ভবনে ফটোকলে অংশ নেন স্ট্যালোন। সেখানে আলোকচিত্রীদের সামনে তিনি একহাত মুষ্টি করে তুলে ধরেন রকির মতো।
গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় টেড কোচেফ পরিচালিত ‘র্যাম্বো-ফার্স্ট ব্লাড’-এর ফোরকে প্রিন্টের স্পেশাল স্ক্রিনিং হবে। এটি মুক্তি পায় ১৯৮২ সালের ২২ অক্টোবর। প্রদর্শনী শুরুর আগে মঞ্চে এসে ‘র্যাম্বো’র পঞ্চম কিস্তির ফার্স্ট টিজার উপস্থাপন করেন স্ট্যালোন।
অ্যাড্রিয়ান গ্রানবার্গ পরিচালিত ‘র্যাম্বো ফাইভ-লাস্ট ব্লাড’ ছবির প্রচারণায় সাগরপাড়ের শহরে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে এসেছেন স্ট্যালোন। এতে পঞ্চম ও শেষবারের মতো জন র্যাম্বো চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাবে এ বছরের ২০ সেপ্টেম্বর। এতে রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশন দেখা যাবে বলে মাস্টারক্লাসে জানিয়ে রেখেছেন তিনবার অস্কার মনোনীত এই তারকা।