সেই দেড় ঘণ্টার পথ যেতে এখন লাগে ৬ মিনিট
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ২৬ মে ২০১৯ রোববার
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দ্বিতীয় মেঘনা ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য শনিবার (২৫ মে) খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন সেতু দু’টি উদ্বোধন করেন।
এরপরই পাল্টে গেছে এই রুটে যানজটের চিরচেনা দৃশ্য। স্বস্তি ফিরে এসেছে ট্রাফিক পুলিশ, যাত্রী ও চালকদের মাঝে। আগে যেখানে সেতু পার হতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন সেখানে সময় লাগে ছয় থেকে আট মিনিট।
মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন এসে আগে উঠতো এক লেনবিশিষ্ট পুরাতন মেঘনা-গোমতী সেতুতে। তাছাড়া পুরাতন সেতু দু’টি বেশি ঢালু হওয়ায় ধীরগতিতে যান চলাচল করতো। ফলে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ ও সরকারি ছুটির দিনে তীব্র যানজট লেগে থাকতো। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হতো যাত্রী ও চালকদের। কিন্তু এবার ঈদের আগে দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু খুলে দেওয়ায়, মানুষের ভোগান্তি কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেতু দুটি চালু হওয়ায় এ রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের চালকেরা ভীষণ খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের চালক আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে যানজটের কোনও আশঙ্কা নেই। আগের সেতুটি ছিল এক লেনের এবং রাস্তা থেকে বেশ উঁচুতে। ফলে চার লেনের সড়ক থেকে ঢাল বেয়ে ধীরগতিতে গাড়িগুলো গিয়ে উঠতো এক লেনের সেতুতে। এতে যানজট লেগেই থাকতো। দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু চার লেনের। দুই লেনে গাড়ি যাবে এবং দুই লেনে গাড়ি আসবে। এতে করে সেতুতে কোনও যানজট হবে না।’
দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর ওপর দিয়ে চলছে যানবাহনচট্টগ্রামগামী একটি কাভার্ড ভ্যানের চালক এন্তেজার আলী বলেন, ‘আগে মেঘনা ও মেঘনা-গোমতি সেতু পার হতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো। কিন্তু নতুন সেতু দুটি খুলে দেওয়ার পর, ছয় থেকে আট মিনিটে সেতু পার হতে পারছি।’তিনি আশা করেন, এবার ঈদের আগে বা পরে মেঘনা টোল প্লাজা ও দাউদকান্দি টোল প্লাজার আগে ও পরে বা সেতুতে কোনও যানজট হবে না।
ট্রাকেরচালক আসাবুদ্দিন বলেন, ‘এই দু’টি সেতুর দু’পারেই এত যানজট লেগে থাকতো যে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হিমশিম খেতে হতো। সেতু দু’টি খুলে দেওয়ায় যানজট নেই, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও পরিশ্রম কমে গেছে।’
যাত্রী সামসুল হক বলেন, ‘প্রতিটি উৎসবে এ দুটি সেতু পার হতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। গরমে বাসের মধ্যে বসে থাকা অসহ্য যন্ত্রনা। আশা করি, এবার দুর্ভোগ হবে না। মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
শনিবার (২৫ মে) সেতু খুলে দেওয়ার পর, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু দেখতে এসেছেন সোনারগাঁয়ের ইসলামপুর এলাকার দম্পতি সায়লা বেগম ও নুরুনবী চৌধুরী। তারা বলেন, ‘সেতুতে এসে খুব ভালো লাগছে। সেতুর নির্মাণ শৈলি চমৎকার। সড়কে অনায়াসে যানবাহন চলাচল করছে, কোনও যানজট নেই।’
দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর ওপর দিয়ে চলছে যানবাহনমেঘনা সেতুতে দায়িত্বপালনকারী পুলিশের কনস্টেবল ফরিদ মিয়া বলেন, ‘গত ঈদে এই সেতুতে ডিউটি করেছি। যানজট নিরসন করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এক মিনিটের জন্যও দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ পাইনি। সারাক্ষণ হ্যান্ড মাইকে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে হয়েছে। শনিবার নতুন সেতু দুটি খুলে দেওয়ার পর, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছি। গাড়ি এক মিনিটের জন্যও কোথাও থামছে না। দায়িত্ব পালনে কোনও কষ্ট হচ্ছে না।’
সোনারগাঁয়ের কাচঁপুর হাইওয়ে পুলিশের (ওসি) কাউয়ুম আলী সরদার বলেন, ‘সেতু দুটি খুলে দেওয়ায় এ পথের মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন। সেতু চার লেনের হওয়ায় আমাদের পরিশ্রমও এবার কম হবে। গত বছর মহাসড়কে যে পরিমাণ ফোর্স মোতায়ন করা হয়েছিল, এবার তা করা লাগবে না।’
মেঘনা ও মেঘনা-গোমতি সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক শওকত আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম কোনও বড় প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পন্ন হলো। এটি সম্ভব হয়েছে মূলেত দুটি কারণে— সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং এবং জাপানের আধুনিক প্রযুক্তি ও তাদের কর্মদক্ষতা প্রয়োগ। এটি দেশের জন্য ও বর্তমান সরকারের জন্য একটি মাইফলক হয়ে থাকবে।’