শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলা-ইংরেজি পড়তে ও বলতে পারবে শিশু শিক্ষার্থীরা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:২১ এএম, ২৯ মে ২০১৯ বুধবার

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পারদর্শী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব বিষয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের আলাদাভাবে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার রুটিনও তৈরি করা হয়েছে।

 

এছাড়া প্রাথমিকের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীরা যাতে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হবে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সব মন্ত্রণালয়কে বিশেষ কিছু করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতর-বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সভা করা হয়। কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিষয়টি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ভাষাজ্ঞান বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত পাঠাভ্যাস তৈরিতে প্রতিদিন বাংলা ও ইংরেজি বই থেকে একটি প্যারা বা পৃষ্ঠা হাতের লেখা হিসেবে বাড়ির কাজ দেয়া, ক্লাসের শুরুতে সংশ্লিষ্ট শ্রেণিশিক্ষক সকল শিক্ষার্থীকে আবশ্যিকভাবে পঠন করাবেন, শিক্ষার্থীদের উচ্চারণ জড়তা দূর করতে এবং প্রমিত উচ্চারণ শৈলী বাড়াতে শিক্ষকরা নিজেরা শিশুদের সঙ্গে উচ্চারণ করে পাঠদান করবেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চারণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধি করাবেন, বুককর্ণার ও এসআরএম-এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করবেন, প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের একটি বাংলা ও ইংরেজি শব্দ বলা ও লেখার শেখার ব্যবস্থা করবেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করবেন এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ইন্সট্রাক্টর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় উপ-পরিচালকগণ নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জামা দেবেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন  বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ার দক্ষতা তৈরির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এটি বাস্তবায়নে অধিদফতরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

‘আমাদের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সারাদেশে ৬৬ জেলায় ৬৩ জন মেনটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের স্ব স্ব জেলায় মেনটর তৈরি করা হয়েছে। তারা নিয়মিত মনিটরিং করবেন। মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রধান দায়িত্ব পালন করবেন।’

সচিব আরও বলেন, বর্তমানে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে। ইংরেজি বিষয়ে তারা একটু পিছিয়ে আছে। ২০২০ সালের মধ্যে তা শতভাগ উন্নীত করা হবে। আমরা বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্যমাত্র অর্জন করা সম্ভব হবে।


‘বর্তমানে আমরা বাংলা বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়া ও লেখার ওপর জোর দিয়েছি। তার সঙ্গে ইংরেজি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে আশা করি, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’

সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। পঞ্চম শ্রেণিতে ১১ বছর পর্যন্ত যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা মূলত সাড়ে ছয় বছরে পাওয়ার কথা। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান এডো এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণির ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঠ্যবইয়ের সাধারণ গণিত পারে মাত্র ২৫ জন। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ ঠিকভাবে বাংলা পড়তে পারে। প্রাথমিক স্তরে ১১ বছর পর্যন্ত যা শেখানো হচ্ছে তা মূলত অন্যান্য দেশের বাচ্চারা সাড়ে ছয় বছরের মধ্যেই শিখছে।

এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বাড়ানোর নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভাষাজ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ক্লাসে নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি বই থেকে একটি পৃষ্ঠা থেকে রিডিং ও বাড়ির কাজ দিতে নির্দেশ জারি করা হয়। পাশাপাশি প্রতিদিন একটি করে বাংলা অথবা ইংরেজি বিষয়ে নতুন শব্দ শেখানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়।


পাশাপাশি ওই দুই বিষয়ে ক্লাসে বেশি দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদা করে তাদের কোথায় কোথায় সমস্যা তা নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন ছুটির পর তাদের বিশেষ ক্লাসের মাধ্যমে এসব সমস্যা দূর করতে চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা। এ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে হচ্ছে কি-না, তা মনিটরিং করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তা স্ব স্ব এলাকার বিদ্যালয় নিয়মিত মনিটরিং করছেন।


সচিব আকরাম আল হোসেন আরও বলেন, নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বর্তমানে বাংলায় শতভাগ শিক্ষার্থী যাতে সুন্দরভাবে পাঠ্যবই পড়তে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। আমরা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি এবং সবাই মিলে চেষ্টা করছি এ চ্যালেঞ্জে সফল হতে। আশা করি, আগামী এক বছরের মধ্যে ভালো ফল পাব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের ২১ লাখ নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনাসহ মোট ১৭টি চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।