শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

১২ কাঠা জমি কবরস্থানে দান করলেন হিন্দু বৃদ্ধা 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:২১ এএম, ৩০ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বয়স ৭৯ বছর। ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেন না। তবে বয়সের ভারে জীর্ণ শরীরেও কথাবার্তা টনটনে। এলাকায় অনেকেই তাকে ‘মাদার তেরেসা’ বলে ডাকেন। 

পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এই নারী তার পুরো জীবনের সঞ্চিত অর্থ ভারত সেবাশ্রম সংঘকে এবং কবরস্থানের জন্য ১২ কাঠা জমি দান করেছেন। 

তার জন্ম হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের বল্লভপুরের ঠাকুরবাড়িতে। বাবা ছিলেন অবিনাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মা বিমলা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারটি খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ।
 
এই বৃদ্ধা ভারত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরে চাকরি পাওয়ার পর পারিবারিক বিবাদের কারণে ঘর ছাড়েন। সেই সময় থেকে বিভিন্ন জেলা ঘুরে অবশেষে ২০০০ সালে অবসর নেন।

বিভিন্ন সময়ে ভাড়া বাড়িতে থাকার পর অবসরের আগে একটা নদীর তীরে পাঁচ শতক জমির ওপর শিবমন্দিরসহ দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেন।

পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তার গ্রামের এক মুসলিম নারী বলেন, পূর্ণিমাদেবী আমার পূর্ব পরিচিত ছিলেন। সেই সুবাদে গল্পের ছলে আমি ওনাকে বলেছিলাম, আমাদের গ্রামে মুসলিম পরিবারের কেউ মারা গেলে কবরস্থান না থাকায় বাড়ির উঠোনে কবর দিতে হয়।

এই কথা শোনার পর তিনি বলেন, নদীর ওপারে আমার ১২ কাঠা জমি আছে। ওই জমি আমি মুসলিম ভাইদের দান করে দেব। এর কয়েকদিন পর তিনি কাগজপত্র তৈরি করে কবরস্থানের জন্য জমি দান করেন।
 
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, রাস্তার পাশে গ্রামের দুর্গামন্দির করার জন্য তার অবদান ভোলার নয়। বলতে গেলে তার অর্থেই পাকা মন্দিরটি তৈরি করতে পেরেছি আমরা।

এক যুবক জানায়, পূর্ণিমাদেবীর নিজের বলতে আর কিছুই নেই। বসতবাড়িটিও ভারত সেবাশ্রমকে দান করে দিয়েছেন, পেনশনের টাকায় চলছে।

এসব প্রসঙ্গে পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমার আমার করে কী লাভ। নিজে সংসার করিনি, ঠাকুরের নাম করে ৭৯টা বছর পার করে দিলাম।

তিনি বলেন, নিজের ১২ কাঠা জমি মুসলিম ভাইদের অসুবিধের কথা জেনে বিমলা–অবিনাশ সমাধিক্ষেত্র নামে দলিল করে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি, বাসন্তী মন্দির-দুর্গামন্দির করে দিয়েছি। 

তিনি আরো বলেন, অবশেষে নিজের মন্দিরসহ দোতালা বসতবাড়ি ও অবশিষ্ট ৫ লাখ টাকা ভারত সেবাশ্রমকে দান করে দিয়েছি। এখন আমার সম্বল বলতে সামান্য কয়েক হাজার টাকার পেনশন।