‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে উস্কানি সত্ত্বেও অস্থিতিশীলতা বাড়তে দিইনি’
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:২১ এএম, ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের চরম উস্কানি সত্ত্বেও বাংলাদেশ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়তে দেয়নি বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে টোকিওর হোটেল ইমপেরিয়ালে আয়োজিত ২৫তম আন্তর্জাতিক নিকেই সম্মেলনে ‘কি নোট স্পিকার’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। নানা চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতে জর্জরিত বর্তমান বিশ্ব কাঠামোতে কীভাবে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে নিজের ভাবনা তিনি তুলে ধরেছেন ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে।
প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতা আর শুভ শক্তির জয় হবেই। বিশ্ব আজ অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, এই উদীয়মান এশিয়ার দিকে। উদ্ভাবনে, অনুপ্রেরণায় বিশ্বকে শান্তি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এশিয়াকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, চরম সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও দায়িত্বশীল জাতি হিসেবে আমরা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা শুধু মানবতার ডাকে সাড়াই দিইনি, আমরা এই সচেতনতার সঙ্গে সংকটটিকে নৈরাজ্য ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাও বাড়তে দিইনি।
রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান ও পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চরম সংকটের মধ্যেও আমরা সংলাপ এবং ঐকমত্য চেয়েছি। আমাদের অঞ্চলসহ বিশ্বের অন্যান্য সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি, মানবতা ও উন্নয়নের জন্য সংঘাত এড়ানো এবং ঐকমত্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এটি শিক্ষণীয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে যাবে। আর এ জন্য বহুপাক্ষিক সফলতায় প্রয়োজন এশীয় দেশগুলোর যৌথ পরিকল্পনা। এ সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য জাপান যে ক্ষেত্রেই আগ্রহ দেখাবে, সেখানেই তার সরকার সহযোগিতা করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে বুধবার টোকিওতে জাপান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
চুক্তির পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি আমরা। এ লক্ষ্য পূরণে জাপান আমাদের পাশে থাকবে ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। জাপান এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী দেশ। ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর দুটি ৩৬ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর এবং ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থই দিচ্ছে জাপান। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জাপানের জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর থেকেই জাপানের সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। জাপানের ঐতিহাসিক উন্নয়নে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে পারি যে, সেই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এখন আমরা সঠিক পথ ধরেই এগিয়ে চলেছি।
উল্লেখ্য, চার দিনের সরকারি সফরে বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমন্ত্রণে এ সরকারি সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী। গত জানুয়ারিতে টানা তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর শেখ হাসিনার এটিই প্রথম জাপান সফর।