ভূমির ‘অসাধারণত্ব’কে জাগিয়ে তোলার গল্প
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৫১ এএম, ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার
ভূমি পেড়নেকর হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ছয় বছর যশ রাজ ফিল্মসের সহকারী কাস্টিং পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর, এই কোম্পানির প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক দম লগা কে হইশা (২০১৫) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। আর সেখানেই তাক লাগিয়ে দেন ভূমি। কখনো ভাবেননি পর্দায় এসে এতটা জনপ্রিয়তা পাবেন তিনি, তবে এই ছবির পর থেকে তাকে অন্যভাবে চিনেছে মানুষ।
আপনাদের কী মনে আছে ‘দাম লাগাকে হ্যায়শা’ চলচ্চিত্রে স্থূলকায় ‘সন্ধ্যা’র কথা? মনে আছে ‘টয়লেট: এক প্রেম কাথা’ চলচ্চিত্রের ‘জয়া’র কথা? দু’টি চরিত্রেই অভিনয় করে সুখ্যাতি পেয়েছিলেন ভূমি পেদনেকার। দর্শকদের স্থূলকায় সন্ধ্যার সঙ্গে জয়ার চরিত্র মেলাতে কষ্ট হলেও এটা সত্য যে, অভিনয়ে জাত চিনিয়েছেন তিনি।
আর ‘দাম লাগাকে হ্যায়শা’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় সমাদৃত হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর ভূমি পেড়নেকর ২০১৭ সালে ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ ও ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’ ছবিতে একঘুঁয়ে নারী চরিত্রে অভিনয় করে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। পরের ছবিতে তার কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
আগেই বলেছি, ১৯৮৯ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেয়া এই অভিনেত্রী ছয় বছর কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন ‘যশ রাজ ফিল্মস’ এর মতো নামী জায়গায়। সে জায়গায় তিনি পরিচালনার হাতেখড়ি হয়ে অভিনয়ে পদার্পণ করেন। এরপরই মূলত ২০১৫ সালে আয়ুষ্মান খোরানার বিপরীতে ‘দাম লাগাকে হ্যায়শা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে তার অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রটি সমালোচক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং চতুর্দিকে দারুণ সাড়া ফেলে।
তার অভিনয় দক্ষতা এতটাই বেশি যে, এই পর্যন্ত ভূমি পেড়নেকর জিতে নেন ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার, জি সিনে পুরস্কার, স্ক্রিন পুরস্কার, প্রোডিউসার গিল্ড পুরস্কার, ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি পুরস্কার। এছাড়া ‘টয়লেট: এক প্রেম কাথা’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি পান ‘দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফাউন্ডেশন পুরস্কার’। এদিকে গেলো বছর তাকে দেখা গিয়েছে নেটফ্লিক্সের ‘লাস্ট স্টোরিজ’-এ। তাছাড়া চলতি বছর (২০১৯ সালে) সুশান্ত সিং রাজপুত-এর বিপরীতে ‘সনচিরিয়া’য় দেখা যাবে ভূমিকে।
চলচ্চিত্রে আসার আগে ভূমির ইচ্ছে ছিল এই জায়গায় অনেক বড় হবেন তিনি। তাই’তো কিছুদিন আগে পেডেনকার এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি নাকি ১২ বছর বয়সে প্রথম তার মাকে এই খবর জানান যে, তিনি অভিনেত্রী হতে চান। কিন্তু, তার কথাটিকে একেবারে পাত্তা দেয়নি। তার মতে, আমার পরিবারের কেউ বিষয়টি নিয়ে আর প্রশ্নই তুলেননি। তারা ভেবেছেন, আমি আজাইরা বকছি। এদিকে, যশ রাজ ফিল্মসে অ্যাসিস্ট্যান্ট কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজটা ছিল তার জন্য একটি শিক্ষা ক্ষেত্র। কিন্তু, কাজটি সহজ ছিল না বলেও জানান ভূমি। মোকাবিলা করেছেন অনেক প্রতিকূলতার।
তারপরেও যশ রাজে কাজ করা অবস্থায় পিছনে হটেননি তিনি। অভিনেত্রী হিসেবে দিয়েছেন অনেক অডিশনও। এরই মধ্যে আসে জন্মদিন, পার্টি করছিলেন বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে। ওইসময়ই মূলত একটি ফোন কল বদলে দেয় তার জীবনের কাহিনী। যেখানে আসে একটি বড় সুসংবাদ, জানতে পারেন নায়িকা হিসেবেই নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এরপর শুরু হয় ‘দাম লাগাকে হ্যায়শা’র কাজ।
মূলত শুরুটা এভাবে হলেও প্রতিটি সিনেমায় ভিন্ন চরিত্র করে অভিনয়ের জাত চিনিয়েছেন ভূমি। নায়িকা মানেই হতে হবে লম্বা আর রোগা চেহারা, হতে হবে দ্যুতিময়– প্রচলিত সেই ধারাকে ভেঙে দিয়েছেন তিনি। তবে চরিত্রে তিনি তার নিজেকে দেখে উপলব্ধি করেন, তাকে বদলাতে হবে। এরপর লেগে জান শরীরচর্চায়। বর্তমানে তিনিও নায়িকাদের মতো রোগা হয়েছেন।
তবে ভূমি নিজেকে দর্শকদের সামনে যেভাবে উপস্থাপন করবেন, দর্শকেরা সেভাবেই তাকে গ্রহণ করবে, সেটাও উপলব্ধি হয় তার। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি সাধারণ কেউ নন। নিজের মাঝে বিদ্যামান অসাধারণত্বকে আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন ভূমি। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, নিজেকে পুরোপুরি বদলাবেন, এবং তিনি সেটা পেরেছিলেনও।
এই প্রসঙ্গে ভূমি বলেন, নতুনদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোটা শিখতে হয়। করতে হয় কঠোর পরিশ্রম। এর আগে নিজেকে ভালবাসতে হয়। এখানে প্রত্যেকটা মানুষই আলাদা। প্রত্যেকেরেই কিছু না কিছু গুণ থাকে, সেটা মানুষের কাছে ফুটিয়ে তুলতে হবে। আর সেই গুণ দিয়েই হয়ে উঠতে হবে অসাধারণ। আর কেউ যদি তার নিজের মাঝে থাকা, ‘অসাধারণত্ব’কে জাগাতে না পারে, তাহলে সে কখনো নিজেকে ভালো জায়গায় দাড় করাতে পারবে না, এমনটা মনে করেন ভূমি পেড়নেকর।