রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রমজান যায় চলিয়া...

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:৫৮ এএম, ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার

চলছে রমজানের শেষ দশক। বিদায়ের বার্তা দিচ্ছে রমজান। মর্যাদাপূর্ণ দিনগুলো চলে যায়। নিজ আমলের থলি ইবাদতে কতোটুকু ভারি হয়েছে হিসাব করে দেখার সময়। সামনের একটি দিনও যেন অলসতা আর অবহেলায় না কাটে, থাকতে হবে সতর্কতায়।   

রমজানের প্রতিটি দিন-রাতই রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের আবহে ভরপুর। যারা রমজানের প্রথম বিশ দিন কাজে লাগিয়েছে, তারা বেশ কল্যাণ অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। আর যারা কাজে লাগাতে পারেননি তাদের জন্য শেষ দশ দিনে পুষিয়ে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ। 

আমাদের পূর্ববর্তী নবীর উম্মতগণের আয়ু কয়েকগুণ বেশি ছিল। এজন্য তারা বছরের পর বছর টানা ইবাদত করতে পারতেন। আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিকে খুব স্বল্প আয়ু দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাই চাইলেও আমাদের পক্ষে টানা এতো ইবাদত করা সম্ভব হয় না। তবুও আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদিকে একেবারে বিরত করেননি। আল্লাহ তাদের এমন বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত দান করেছেন, যেন সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে সহজেই আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা হতে পারে।

 

মাহে রমজানের শেষ দশক এর মধ্যে অন্যতম। কেননা এই সময়ে রয়েছে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আপনি কী জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ (সূরা কদর আয়াত ২-৩)

এ রাতে আল্লাহ তায়ালা পুরো কোরআন কারিমকে লাউহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। তাছাড়া অন্য আরেকটি মত আছে যে, এ রাতেই কোরআন নাজিল শুরু হয়। পরবর্তী ২৩ বছরে বিভিন্ন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে রাসূল (সা.) এর ওপর অবতীর্ণ হয়।

এই রাতের ফজিলত সম্বন্ধে হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল নামাজ আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে, আল্লাহ তার ইতোপূর্বের সকল সগিরা (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯০১; মুসলিম : ৭৬০)

কদরের রাত্রি কোনদিন?
রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমাজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।’ (বুখারি, হাদিস: ২০২০; মুসলিম, হাদিস: ১১৬৯) অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমাজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর।’ (বুখারি, হাদিস: ২০১৭) কিন্তু আমরা শুধু ছাব্বিশ রমজান দিবাগত রাত্রিকে শবেকদর ভেবে বসে আছি। এই রাত ছাড়া বাকি রাতগুলোতে ইবাদতের ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট শিথিলতা লক্ষ্য করা যায়। বছরের বাদবাকি সময়ের মতো এই সময়ে স্মার্টফোনে ফেসবুক-ইমোসহ বিভিন্ন স্যোশাল সাইটগুলো এবং নেটে ঢুকে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করি। এটা কোনো মুমিনের জন্যই কাম্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা (অর্থাৎ মুমিনরা) অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত: ০২)

 

শেষ দশকে অনেকের একটা বড় সময় কাটে ঈদ শপিংয়ের পেছনে। অথচ চাইলে এই কাজগুলো আরো আগেই সেরে রাখা যেতো। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল (সা.) শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৭)

কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের অনেকের পক্ষে ইতিকাফ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এই সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার পাশাপাশি তারাবির ও তাহাজ্জুদ নামাজ যথাসাধ্য আদায়ের চেষ্টা করবো। কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আযকার এ রত থাকবো।

এই সময়ে কোনোভাবে যেন আমাদের লাইলাতুলকদর মিস না হয়, সেজন্য ফজর ও এশার নামাজ জামাতে আদায় করতে হবে। হজরত ওসমান (রা) বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের পড়েছে, সে যেন অর্ধরাত পর্যন্ত নামাজ পড়েছে। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়েছে, সে যেন সম্পূর্ণ রাত নামাজ পড়েছে।’ (মেশকাত, পৃষ্ঠা: ৬২)

অন্যদিকে তারাবির ফজিলত সম্বন্ধে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় সাওয়াবের আশায় রাতে তারাবি ও তাহাজ্জুদ আদায় করবে, আল্লাহ তার পূর্ববতী (সগিরা) গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। (বুখারি, হাদিস: ৩৭; মুসলিম, হাদিস: ৭৫৯)

 

শেষরাতে সাহরি খাওয়ার জন্য আমাদের জাগতেই হয়। এই সময় নামাজে দাঁড়িয়ে চোখের দুই ফোঁটা পানি ছেড়ে দিয়ে মহান প্রভুর নিকট আমাদের গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করতে পারি। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নিচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছ, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে চাইছ, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেবো?’ (বোখারি)