জিহাদ কী এবং কেন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:০০ এএম, ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার
জিহাদ (আরবি: جهاد), যার অর্থ সংগ্রাম; কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করাকে বোঝানো হয়। তবে সচরাচর ইসলামী পারিভাষিক অর্থে ‘জিহাদ’ কথাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পবিত্র কোরআনে জিহাদের কথা ৪১ বার উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে ‘আল্লাহের পথে সংগ্রাম করা’ অর্থে ‘জিহাদ’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। জিহাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে মুজাহিদ বলা হয়। জিহাদকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসাবে গণ্য করা হয়।
প্রাচ্য বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড লুইসের মতে কোরআন ও হাদিসের অধিকাংশ জায়গাতেই জিহাদ শব্দটি ধর্মযুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইসলামী পণ্ডিত ইয়াহিয়া ইবন শরাফ আল-নাদভী বলেছেন, (জিহাদ অর্থ) ‘সমাজের সবার সামগ্রিক দায়িত্ব হলো ন্যায্য প্রতিবাদে অংশ নেয়া, ধর্মের সমস্যা দূর করা, স্রষ্টার আইনের কথা জানা, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা ও অন্যায়কে দূর করা।’ কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী স্থানভেদে জিহাদ তিন প্রকার হতে পারে:(ক) পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য স্বীয় কৃপ্রবৃত্তির বিরূদ্ধে জিহাদ, (খ) মুসলিম সমাজকে উন্নয়নের সংগ্রাম, এবং (গ)যুদ্ধক্ষেত্রে সংগ্রাম।
শক্র বাহিনী যদি মুসলিম বাহিনীর দ্বিগুণ বা তার কম হয় তখন মুসলিম সৈন্যদের জন্য যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পলায়ন করা কবিরা গুনাহ। তবে মুসলিম সৈনিক যদি শক্রপক্ষকে ধোঁকা দেয়া বা অন্য মুসলিম সৈনিকদের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য ময়দান ত্যাগ করে বা ময়দান ছেড়ে কৌশল হিসেবে দূরে চলে আসে তাতে কোনো গুনাহ নেই।
আল্লাহ বলেন,
وَمَن يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلاَّ مُتَحَرِّفاً لِّقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزاً إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاء بِغَضَبٍ مِّنَ اللّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
‘যে ব্যক্তি যুদ্ধের দিন শক্রদের মুকাবিলা থেকে পালাবে, সে আল্লাহর গযবে পতিত হবে এবং তার প্রত্যাবর্তন স্থল হবে জাহান্নাম। আর তা বড়ই জঘন্য জায়গা। তবে যদি কেউ রণকৌশল হিসাবে অথবা কোনো সেনাদলের সঙ্গে মিলিত হবার উদ্দেশ্যে পলায়ন করে তবে সেটা ভিন্ন কথা।’ (সূরা আনফাল -১৬)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে বিরত থাকবে। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, (২) যাদু করা, (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে খুন করা, (৪) সুদ খাওয়া, (৫) ইয়াতিমের মাল আত্নসাৎ করা, (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন এবং (৭) কোনো মুসলিম সতী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া । (বুখারী ওমুসলিম)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমাদের মধ্যে বিশ জন দৈর্যশীল সৈন্য থাকে তবে তারা দু‘শ শক্র সৈন্যর ওপর জয়লাভ করবে।’
আয়াতটি নাজিল করে তাদের বলে দিলেন যে, শক্র সেন্য দু‘শ বা তার কম থাকলে বিশ জন মুসলিম সৈন্যের তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা ফরজ এবং যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালাতে পারবে না। আবার নাজিল হলো,
الآنَ خَفَّفَ اللّهُ عَنكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا فَإِن يَكُن مِّنكُم مِّئَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُواْ مِئَتَيْنِ وَإِن يَكُن مِّنكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُواْ أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللّهِ وَاللّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
‘এখন বোঝা হালকা করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর এবং তিনি জেনে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর ওপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দু’হাজারের ওপর আর আল্লাহ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত লোকদের সঙ্গে।’ (সূরা আনফাল-৬৬)