রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বনি আদমের পাপে কালো হলো যে পাথর

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:০৫ এএম, ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার

হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এটি জান্নাত থেকে প্রেরিত পাথর হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

রাসূল (সা.) এর হাদিস থেকে জানা যায়, এই পাথরটি পূর্বে দুধের চেয়েও সাদা বর্ণের ছিল। কিন্তু বনি আদমের পাপ একে কালো বর্ণে রুপান্তরিত করেছে।

এটি পবিত্র কাবাগৃহের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে প্রায় চার ফুট উঁচু দেয়ালের কিছুটা ভেতরে পোঁতা কালো থালার মতো একটি গোল পাথর। কালো বর্ণের বলে এর নাম রাখা হয়েছে হাজরে আসওয়াদ।

 

বিভিন্ন দেশের হাজীগণ হজব্রত পালন করতে গিয়ে এই পাথরটিতে সরাসরি বা ইশারা করে চুমু দিয়ে থাকেন। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে- পবিত্র কাবা ঘর সম্মানিত তবে হাজরে আসওয়াদ কেন চুম্বন করতে হয়?

 

হাদিসের বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য গ্রন্থে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরে চুমু খাওয়া সম্পর্কে রাসূল (সা.) এর নির্ভরযোগ্য বাণী এবং সাহাবাগণের আমলের বর্ণনা পাওয়া যায়। বিখ্যাত সাহাবী হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমরকে (রা.) হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলকে (সা.) পাথরটি স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি।’ (সহিহ মুসলিম : হা. ১২৬৭)

অন্য এক হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন ‘হাজরে আসওয়াদ’ জান্নাতি একটি পাথর, এর রঙ দুধের চেয়ে বেশি সাদা ছিল। এরপর আদম সন্তানদের পাপরাশি তাকে কালো বানিয়ে দিয়েছে।’ (জামে তিরমিযী : ৮৭৭, মুসনাদে আহমাদ : ১/৩০৭, ৩২৯)

 

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- তোমরা এই পাথরটিকে বেশি বেশি চুম্বন করো। কারণ তোমরা হয়তো অচিরেই তাকে হারিয়ে ফেলবে। এমন একটি সময় আসবে যখন লোকেরা রাতের বেলায় পাথরটিকে চুম্বন করে সকাল উঠে তাকে আর দেখতে পাবে না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে দুনিয়াতে অবস্থিত জান্নাতি সকল বস্তু স্ব-স্থানে ফিরিয়ে দেবেন। (আখবারু মক্কা, আযরুকী : ১/৩৪২-৩৪৩)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) আরো বলেন যে, রাসূল (সা.) বিদায় হজের সময় একটি উটের ওপর সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করছিলেন এবং সে সময় তিনি একটি বাঁকা মাথাওয়ালা লাঠির মাধ্যমে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেছেন। (ফাতহুলবারী : ৩/৫৩৬ হা. ১৬০৭)

 

এছাড়া রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদ পাথরটি ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তখন পাথরটির একটি জিহবা ও দুটি ঠোঁট থাকবে, হজ পালনের সময় কোন হাজী কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে পাথরটি তখন বক্তব্য দেবে। (সহিহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২১, মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৫৭)

আলোচ্য হাদিসের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়তের এই বিধান সাব্যস্ত হয় যে, হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা। আর ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক এই চুমু খাওয়া সুন্নাত। তবে কিছু লোক আছেন, যারা বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে দেন।

 

 

হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের দৃশ্য (ফাইল ফটো)

যদি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন দেয়া সম্ভব না হয়, ডান হাত দিয়ে ইশারা করলেও হবে। কালো পাথরটির দিকে সম্প্রসারিত করে স্বীয় হস্তে চুম্বন করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং আল্লাহ তায়ালা হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের অশেষ সওয়াব ও বরকত দান করবেন।

হাজরে আসওয়াদ নিয়ে ঘটনা: প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সময়ে পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন—এ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান।