রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আল কুদস দিবস: জেগে উঠুক মুসলিম উম্মাহ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:০৭ এএম, ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার

পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবার বিশ্ব কুদস দিবস। ফিলিস্তিন ও পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসের দখলদার ইহুদিদের হাত থেকে মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল আকসা মসজিদকে মুক্ত করার জন্য মুসলমানদের জাগিয়ে তোলাই এ দিবসের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। 

এ ছাড়াও মজলুম ফিলিস্তিনি জাতির ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা ইহুদি শাসন, শোষণ, নিপীড়ন ও তাদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের অবসান ঘটানো এবং বায়তুল মোকাদ্দাসকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনি জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মোকাবেলার জন্য মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এ দিবস।

 

জেরুজালেম শহরের অপর নাম ‘কুদস’ বা ‘আল কুদস’। জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাস হলো- মুসলমানের প্রথম কেবলা। মুসলিম ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অসংখ্য নবী-রাসূলের (সা.) পদধূলিতে ধন্য এই নগরী। মিরাজ রজনীতে এই মসজিদেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সব নবীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নামাজের ইমামতি করেছিলেন। হজরত সোলায়মান (আ.) সর্বপ্রথম এই মসজিদ নির্মাণ করেন। অসংখ্য নবী-রাসূলের দাওয়াতি মিশন পরিচালিত হয়েছে এই মসজিদকে কেন্দ্র করে।

জেরুজালেম নগরী বিশ্বের অন্যতম পবিত্র স্থান। সব ধর্ম-বর্ণ, জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এই নগরীকে শ্রদ্ধা করে থাকেন। কিন্তু আফসোসের কথা হচ্ছে, বায়তুল মোকাদ্দাস ও জেরুজালেম নগরীতে আজ মুসলমানদের বিচরণ নিষিদ্ধ। নিজেদের পবিত্র স্থানে যেতে তারা আজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য সেখানে যাওয়া নিয়ন্ত্রিত। ইহুদিরা জবরদখল করে আছে সেখানে। বছরের পর বছর ধরে মুসলমানরা সেখানে যেতে পারছে না। হাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যমণ্ডিত এই নগরীতে মুসলমানরা আজ নিগৃহীত। শুধু ফিলিস্তিনবাসীর জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়।

 

ফিলিস্তিন আয়তনগত দিক থেকে তেমন বড় রাষ্ট্র নয়। এর মোট আয়তন মাত্র ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটান। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া ইহুদি-খ্রিস্টান ও মুসলমান তিন ধর্মের লোকদের কাছেই ফিলিস্তিন পুণ্যভূমি বলে গণ্য। ফলে এর কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চলে আসছে শুরু থেকেই। হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) ইন্তেকালের কিছুদিন পর ফিলিস্তিন মুসলমানদের দখলে আসে। মাঝে বিশ্বব্যাপী ক্রসেড চলাকালে স্বল্প সময়ের জন্য আল কুদস খ্রিস্টানদের দখলে গিয়েছিল। পরে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী তা পুনরুদ্ধার করেন।

এরপর থেকে মুসলমানরা নির্বিঘ্নে পবিত্র এই নগরীতে তাদের নিজেদের ধর্ম-কর্ম আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। এর সঙ্গে সমস্ত মুসলিম জাতির একটি নিবিড় রয়েছে। এই শহরকে কেন্দ্র করে আরব বিশ্ব তথা মুসলিম দেশগুলোতে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যের আবহ। মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে ফিলিস্তিন নগরী। কিন্তু বিপত্তি বাধে বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা যাযাবর জাতি ইহুদিদের একটি স্থানে জড়ো করার দাবি ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন এ ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের এনে জড়ো করতে থাকে।

 

এভাবেই একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। জাতিসংঘও সহযোগিতা প্রদান করে। তখন অবশ্য বলা হয়েছিল, এখানে আরেকটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা। কিন্তু সেই আশার কথার চিড়া আজও ভেজেনি। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের সমস্যা দিন দিন ঘনীভূতই হয়েছে। এত কিছুর পরও ফিলিস্তিনের মুসলমানরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে আজও। যদিও তাদের সেই আশা দিন দিন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদীদের চালের কারণে ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। সারাবিশ্বের মুসলমানরা আজ তাকিয়ে আছে ফিলিস্তিনের দিকে। কবে মুক্ত হবে আল কুদস। কবে মুসলমানরা আবার তাদের পুণ্যস্থান বায়তুল মোকাদ্দাসে স্বাধীনভাবে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারবে। কুদস দিবস মুসলমানদের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধারের চেতনাকে ক্রমেই শানিত করছে। মূলত আল কুদস দিবস এক মহাজাগরণের দিন। যে জাগরণের মূল চেতনা হলো- মুসলিম ঐক্য। জেগে উঠুক মুসলিম উম্মাহ।