শনিবার   ০৯ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ২৪ ১৪৩১   ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সহজ ছিল না ‘হৃতিক’ হয়ে ওঠার গল্প

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:০৩ এএম, ২ জুন ২০১৯ রোববার

হৃতিক রোশন হলেন একজন বলিউড অভিনেতা। তিনি ভারতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় সেলিব্রিটিদের মধ্যে অন্যতম। চলচ্চিত্র পরিচালক রাকেশ রোশনের ছেলে। হৃতিক এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে হাজির হয়ে এক দক্ষ অভিনেতা ও নৃত্যশিল্পী হিসেবে বলি পাড়ায় দারুণ খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের সর্বাধিক পারিশ্রমিক-প্রাপ্ত অভিনেতাদের অন্যতম। ক্যারিয়ারে ছ’টি ফিল্মফেয়ারসহ বহু পুরস্কার জয় করেছেন এই অভিনেতা।

তবে হৃতিক রোশন প্রায়শই তার বাবা রাকেশ রোশনের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। তার বাবাও আগে একজন অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে এখন তিনি শুধু পরিচালনার কাজ করে থাকেন। 

এর আগে, ১৯৮০-এর দশকে বেশ কয়েকটি ছবিতে হৃতিক রোশনকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করতে দেখা গেছে। পরে রাকেশ রোশন পরিচালিত চারটি ছবিতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন। এরপর হৃতিক পরিচালক থেকেই মূলত অভিনয়ে পা রাখেন।  

 

তার প্রথম ছবি ‘কাহো না পেয়্যার হ্যায়’। এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন হৃতিক। আর প্রথম ছবিতে তার অভিনয় বাজিমাত করে। ‘কাহো না পেয়্যার হ্যায়’ বক্স-অফিসে দারুণ সাফল্য অর্জন করে। এই ছবিতে অভিনয় করে হৃতিক বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। 

এরপর ২০০০ সালে হৃতিকের করা ‘ফিজা’ ও ২০০১ সালে ‘কভি খুশি কাভি গম’ ছবি দু’টি তার ক্যারিয়ারে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। কিন্ত তার অভিনীত পরবর্তী ছবিগুলো সাফল্য অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এরপর ২০০৩ সালে ‘কোই মিল গায়া’ নামে একটি কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে অভিনয় করে হৃতিক আবারো ঘুরে দাঁড়ান। এই ছবিটি তার ক্যারিয়ারে দু’টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা অর্জনে সক্ষম হয়।  


 

 

‘কোই মিল গায়া’ মূলত তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি এই নায়ককে। পরবর্তীতে এর দু’টি সিকুয়েল নির্মিত হয়: কৃষ-২ (২০০৬) ও কৃষ-৩। পরের দু’টি ছবিতেও নামভূমিকায় অভিনয় করেন হৃতিক এবং ছবি দু’টিও প্রভূত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। 

 

এরপর হৃতিকের ক্যারিয়ারের আরেকটি বড় অর্জন ‘ধুম ২’। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এতে তিনি একজন চোরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে তিনি ঐতিহাসিক রোম্যান্স ‘যোধা আকবর’ ছবিতে মুঘল সম্রাট আকবরের ভূমিকায় এবং ২০১০ সালে ‘গুজারিশ’ নামে এক ড্রামা চলচ্চিত্রে এক কোয়াড্রিপ্লেজিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সর্বত্র প্রশংসা অর্জন করেন। এছাড়াও কম আলোচনা হয়নি তার অভিনীত ‘জিন্দগি না মিলেগি দোবারা’ (২০১১), ‘অগ্নিপথ’ (২০১২) ও ‘ব্যাং ব্যাং’ছবিগুলোও! সবকটিতে হৃতিক কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। 

হৃতিক শুধু বড় পর্দায় নয়, তিনি মঞ্চেও অভিনয় করেছেন। এই নায়ক ‘জাস্ট ড্যান্স’ (২০১১) অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম টেলিভিশন শো-তে উপস্থিত হন। এই অনুষ্ঠানের বিচারক হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতীয় টেলিভিশনের সর্বাধিক পারিশ্রমিক-প্রাপ্ত তারকা। অভিনয়ের পাশাপাশি হৃতিক একাধিক দাতব্য ক্রিয়াকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। সেই সঙ্গে একাধিক ব্র্যান্ড ও উৎপাদিত সামগ্রীর হয়ে বিজ্ঞাপনও করেছেন।

 

হৃতিক রোশন মূলত ১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি রাকেশ রোশনের ঘর আলো করে দুনিয়াতে আসে। এরপর রাকেশ রোশনের ডাকনাম ছিল ‘গুড্ডু’, সেটাকে উল্টিয়ে হৃতিকের ডাকনাম রাখা হয় ‘ডুগ্গু’! হৃতিক পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন। মুম্বাইয়ের সিডেনহ্যাম কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করার পর তার আমেরিকায় স্কলারশিপও অর্জন করার সুযোগ হয়। এরপর পরিবার চেয়েছিলেন তিনি শিক্ষিত হয়ে কিছু একটা করবেন। 

মোদ্দাকথা হৃতিককে অভিনয়ে আনার ব্যাপারে কেউ রাজি ছিলেনর না পরিবারে। কিন্তু, তার মন পড়েছিল অভিনয়ে। তীব্র স্বপ্ন ছিল তিনি নায়ক হবেন। তাই বাবাকে তিনি নিজের ইচ্ছার কথা বলেন। বাবা অবশ্য শুরুতেই খুব সহজে হৃতিককে সুযোগ দিয়ে ফেলেননি। বরং বাবার সঙ্গে লম্বা সময় পর্দার আড়ালে তাকে রাখা হয়েছে। ওই সময় কি না করেছেন তিনি। কখনো ট্রলি টেনেছেন, কখনো ক্যামেরার লাইট ধরেছেন। 


 

 

নায়ক হওয়ার আগে হৃতিক দীর্ঘ ছয় বছর বাবার সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। যখন তিনি এই প্ল্যাটফর্মে পরিপক্ক হন তখন শুরু হয় তার ক্যামেরার সামনের কাজ। এরপর ১৯৯৮ সালে শুরু হয় ‘কাহো না প্যায়ার হ্যায়’ সিনেমার শ্যুটিং। যেটি আলোড়ন সৃষ্টি করে পুরো পৃথিবীজুড়ে। বাকিটা ইতিহাস! সিনেমাটি কেবল বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করেনি বরং সে বছর সিনেমাটি সর্বোচ্চ আয় করে আর জিতে নেয় মোট ৯৩ টি পুরস্কার!

হৃতিক বাস্তবেই মাইকেল জ্যাকসনের বড় ভক্ত ছিলেন। তবে মঞ্চ বা সিনেমায় যখন তিনি নাচেন, তখন লোকে তাকে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে তুলনা করেন। এদিকে, হৃতিক ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেছিলেন সুজান খানকে। তাদের দুই ছেলে রয়েছে। তবে বর্তমানে আলাদা থাকছেন তারা। তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক চৌদ্দ বছর স্থায়ী হয়েছিল।