শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কচুশাক বিক্রেতা থেকে মন্ত্রী!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:২৮ এএম, ২ জুন ২০১৯ রোববার

ভারতে সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে ফের সরকার গঠন করেছে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি। এক সময়কার চা বিক্রেতা মোদি টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন।

তবে শুধু চা বিক্রেতাই নয়, মোদির এই মন্ত্রিসভায় রয়েছেন কচুশাক বিক্রেতাও।

এক সময় তিনবেলা খাবার জুটতো না তার। বেশিরভাগ সময় জঙ্গল থেকে কচু এবং ঢেকি শাক তুলে এনে ক্ষুধার চাহিদা মেটাতেন।

 

আবার অতিরিক্ত কচু শাক হাটে বিক্রি করে অন্যান্য খাবার কিনে আনতেন পরিবারের সদসদের জন্য। এমন অভাবী ব্যক্তি এবার হয়েছেন ভারতে মোদির মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী।

এক সময়ের কচু বিক্রেতা রামেশ্বর তেলি এবার আসামের দুলিয়াজান থেকে বিজেপির হয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তাকে এবার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

রামেশ্বর তেলির দরিদ্র জীবন বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।

সেখানে বলা হয়েছে, ছেলেবেলা থেকে দারিদ্রতার কষাঘাতে পিষ্ট হয়েছেন রামেশ্বর তেলি। বাবা ছিলেন সামান্য চা শ্রমিক। ডিব্রুগড়ের চা বাগানে কাজ করতেন। তবে ভাই, দুই বোন নিয়ে ৬ জনের সংসার বাবার সেই টাকায় তেমন একটা চলত না।

মাসের অর্ধেকটা না পার হতেই শেষ হয়ে যেত সে টাকা। বাকি অর্ধেকটা সময় পরিবারের খাবার যোগাতে ১২ বছর বয়স থেকে কাজে নেমে পড়েন রামেশ্বর।

সংবাদমাধ্যমে আরও বলা হয়েছে, কিশোর বয়স থেকেই ২ বছরের ছোট ভাই গুণেশ্বরকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন আশেপাশের জঙ্গল ঘুরে বেড়াতেন রামেশ্বর। জঙ্গল থেকে কচু আর ঢেকি শাক সংগ্রহ করে ঝুড়িতে করে নিয়ে চলে যেতেন স্থানীয় বাজারে। সারাদিন সেগুলো বিক্রি করে যা পয়সা পেতেন তা দিয়ে পরিবারের জন্য খাবার কিনে আনতেন।

এর মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন রামেশ্বর। তবে বাবার মৃত্যুর পর মা, ভাই এবং দুই বোনের পুরো সংসারের দায়িত্ব চাপে তার কাঁধে। কচু বিক্রি করে যা চালানো সম্ভব নয়। তাই সংসারের হাল ধরতে রামেশ্বর তেলি বাড়ির কাছেই একটি পানের দোকান দেন। সেই দোকানের উপার্জন দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই বোনের বিয়েও দেন রামেশ্বর।

 

যেভাবে কচু বিক্রেতা রামেশ্বর নেতা হয়ে উঠলেন

কলেজে পড়ার সময় রামেশ্বর আসামের চা জনগোষ্ঠী ছাত্র সংস্থা (আটসা)য় যোগ দেন। চা শ্রমিকদের জন্য তার সাংগঠনিক ভূমিকা বেশ প্রশংসনীয় হয়ে ওঠে।

আসামে চা শ্রমিক নেতা হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। রামেশ্বরের এই জনপ্রিয়তা ও নেতাসুলভ গুণ নজরে পড়ে রাজ্য বিজেপি নেতাদের। তাকে দলে ভেড়ান তারা। সুযোগ করে দেন রাজনীতির মাঠে বিচরণের।

২০০১ সালে নিজের জনপ্রিয়তা ও বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতায় দুলিয়াজান থেকে বিজেপি বিধায়ক হন রামেশ্বর। ২০০৬ সালেও বিধায়ক হন। এরপর ২০১১ সালে হেরে গেলেও ২০১৪ সালে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিন হন। সেই নির্বাচনে কংগ্রেসের ৫ বারের সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনসিংহ ঘাটোয়ারকে ১ লাখ ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেন তিনি।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে আসামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের রেকর্ডে জয় লাভ করেন রামেশ্বর। এবার সেই একই প্রতিপক্ষ পবনসিংকে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৬ ভোটে হারিয়েছেন রামেশ্বর।

এমন বিপুল ভোটে প্রতিপক্ষকে হারানোয় নরেন্দ্র মোদির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন রামেশ্বর। তার এমন জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রামেশ্বরকে স্থান কর দিয়েছেন মোদি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, মন্ত্রী হয়ে গেলেও জীবনযাপনে তেমন একটা পরিবর্তন ঘটেনি রামেশ্বরের।

সুযোগ পেলেই চা বাগানের সেই ছোট ঘরে গিয়ে মা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার ছেলেকে শপথ নিতে দেখে আপ্লুত হয়ে রামেশ্বরের মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, এখন অভাব নেই তাদের। কচু শাকও সারা মাস ধরে খেতে হয় না। তবে বিলাসী জীবনও উপভোগ করছেন না তারা। তেমন ইচ্ছাও নেই তাদের। শুধু একটাই ইচ্ছা তার, রামেশ্বরের জন্য ভালো একটা পাত্রী খুঁজছেন তিনি। যত জলদি পুত্রবধূ আনতে চান ঘরে।