পরিনীতির ভিন্ন পেশা গড়ার গল্প
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৩৩ পিএম, ৮ জুন ২০১৯ শনিবার
সময়টা ২০১১ সালের। ওই সময় প্রথম অভিষেক ঘটে বলি পাড়ার এক নায়িকার। যিনি রূপে গুণে সকলকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কাজিন পরিনীতি চোপড়া। ওই বছরই তার ‘লেডিস ভার্সেস রিকি ব্যাল’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে পরিনীতির নায়ক ছিলেন রণবীর সিং।
এদিকে, প্রথম ছবিতে অভিনয় করে একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছিলেন পরিনীতি চোপড়া। যার ফলে, সেবার ফিল্ম ফেয়ারে সেরা নবাগত অভিনেত্রীর পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি। এছাড়াও সেরা সহকারী অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও পেয়েছিলেন এই নায়িকা। এর বাইরেও আইফা, অপ্সরা, স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড জুটেছিল পরিনীতির কপালে।
সব কিছু মিলে তিনি অনেকটা সুনাম কুড়িয়েছেন প্রথম ছবিতেই। বলতে গেলে, এতেই তাকে চিনেছিল পুরো বলিউড। এরপর পরিনীতির আরো কপাল খুলে ২০১২ সালে আসে। এই বছর মুক্তি পায় বনি কাপুরের ছেলে অর্জুন কাপুরের সঙ্গে তার সিনেমা ‘ইশাকজাদে’। সেখানে পরিনীতি এতটাই মুগ্ধ করলেন যে, পেয়ে যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর একেধারে ‘শুধ দেশি রোম্যান্স’ (২০১৩), ‘হাসি তো ফাসি’ (২০১৪), ‘দাওয়াত-ই-ইশক’ (২০১৪), ‘কিল দিল’ (২০১৪) করে তিনি প্রশংসিত হন।
পরিনীতি কখনো ভাবেননি, এইভাবে বলিউডে নিজেই জায়গা করে নিতে পারবেন তিনি। তবে আগে থেকেই তার মধ্যে প্রবল সাহস ছিল, যা তাকে আরো বেশী আত্নবিশ্বাসী করে তুলেছিল। এই কারণে বলিউডে জায়গা করতে বেশ একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে। তবে ২০১৪-এ এসে ছোট্ট একটা বিরতি দেন তিনি। এরপর ২০১৬ এ এসে তিনি সিনেমায় ছোট একটা চরিত্রে হাজির হন। সেখানে একটি আইটেম সং-ও করেন তিনি।
এদিকে, ২০১৭- এ এসে তার কপাল আবারো নতুনভাবে খুলে যায়। এরপর পরিনীতি হাজির হন দু’টি সিনেমায়। আয়ুষ্মান খোঁড়ানার সঙ্গে তার ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’ মোটামুটি ব্যবসা করার পর একই বছর এসেছে তার আরো একটি ধামাকা। ওইসময় ‘গোলমাল’ সিরিজের পঞ্চম সিনেমা ‘গোলমাল এগেইন’-এ তিনি হাজির হন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। আর বলাই বাহুল্য, এই ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলে এবং ওই বছরই ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ব্ল্যাক কমেডি সিনেমা এটি।
১৯৮৮ সালের ২২ অক্টোবর পরিনীতির জন্ম। ছোটকাল থেকে তিনি ছিলেন খুবই পড়ুয়া। দ্বাদশ শ্রেণিতে তিনি রাষ্ট্রপতির পদকও পেয়েছিলেন। একাই তিনটা ভিন্ন বিষয়ে (বিজনেস, ফিন্যান্স ও ইকোনমিক্স) তিনি স্নাতক করেছেন। উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে। পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছিলেন ২০০৯ সালে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবেও কাজ করেন পরিনীতি। ওখানকার ক্যাটারিং সার্ভিসের টিম লিডার হিসেবে পার্টটাইম চাকরী করতেন তিনি। অভিনয় নয়, পরিনীতির বেশি ঝোঁক ছিল গান বাজনায়। এমনকি মিউজিকে তার পড়াশোনাও রয়েছে। তবে রাখে আল্লাহ মারে কে! হয়ত এই কারণেই সিনেমায় আসতে হল তাকে।
শিক্ষাজীবনে থাকাকালীন তার জীবন পাল্টে যায় ২০০৯ সালে। ওই সময় প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে যশরাজ ফিল্মসের একটা পার্টিতে গিয়েছিলেন পরিনীতি। সেখানে পরিচয় হয়েছিল তাদের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে। এতে পরিনীতির একটা চাকরিও পেয়ে যায় পিআর কনসালটেন্ট হিসেবে। ফিল্ম ইন্ড্রাস্টিকে বোঝার জন্য এই চাকরিটা ছিল বেশ যুৎসই। পরবর্তীতে মানিশ শর্মা তার ব্যাপারে অনুরোধ করেন আদিত্য চোপড়াকে।
তবে ম্যানেজমেন্টের একজনকে এনে নায়িকা বানানোর আইডিয়াটা একেবারে পছন্দ হয়নি যশরাজ ফিল্মসের ভাইস প্রেসিডেন্টের। পরে পরিনীতি চাকরি ছেড়ে অভিনয়ের স্কুলে যোগ দেয়ার কথা ভাবতে থাকেন। পরিচালক মানিশ তখন মজা করেই একটা স্ক্রিন টেস্ট করেন তার। আর সেটা পছন্দ হয় আদিত্যের। বাকিটি পুরাই ইতিহাস! মাঝে কিছুটা কাণ্ড ঘটিয়েছেন পরিনীতি। তার গান গাইতে পারার প্রতিভার কথা তো আগেই বলা হয়। সে সুবাদে মেরি পেয়ারি বিন্দু ও গোলমাল এগেইন সিনেমায় প্লে-ব্যাকও করেছেন তিনি।
আর পরিনীতিই মনে হয় বলিউডের একমাত্র অভিনেত্রী, যিনি একই সঙ্গে কোক ও পেপসির বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। তবে জুতো নিয়ে তার দারুণ আদিখ্যেতা। ব্র্যান্ডের জুতো পায়ে দেয়ার চেয়ে ১০টা নতুন জুতো বেশী কিনতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। এছাড়া এত বড় একজন অভিনেত্রী পরিনীতি, এখনো বিমান মাটিতে অবতরণ করার সময় ভয়ে কাঁপতে থাকেন তিনি।
এদিকে, জীবনের সবচেয়ে বড় রেকর্ড পরিনীতির, সেটা হল মাত্র আট বছরের ক্যারিয়ারে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ মোট ২২ টি পুরস্কার জিতে নিতে সক্ষম হন তিনি।