সাইক্লোনে অর্থনীতি রক্ষা করে উপকূলীয় বন: গবেষণা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:২৮ পিএম, ১০ জুন ২০১৯ সোমবার
গ্রীষ্মপ্রধান এবং উপ-গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার উপকূল রক্ষায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলগুলো অবিশ্বাস্য রকমের কার্যকর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা হিসেবে কাজ করে। ঘন সবুজ এসব বনাঞ্চল সবচেয়ে বিখ্যাত মাটির ওপরে উঠে আসা এবং দেখতে অদ্ভূত রকমের শিকড়ের জন্য। এসব গাছের শিকড় এত জটিল যে মাছের আবাস হিসেবে কাজ করে। আর এর ওপর ভরসা করে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের আশপাশের মৎস্যজীবীরাও তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।
তবে এসব লোনাপানির বন মানুষের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে আশপাশের সম্প্রদায়গুলোকে বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করে। বিগত বছরগুলোতে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে, তাতে যে শুধু বৈশ্বিক উষ্ণতাই বাড়ছে, তা নয়। বরং এর পাশাপাশি সাইক্লোন, হারিক্যান ও তুফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতাও বাড়ছে। এর অন্যতম উদাহরণ সাম্প্রতিক সাইক্লোন ফণী। বঙ্গোপসাগরের এই দুর্যোগটি ভারতের ইতিহাসে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যানগ্রোভ বনের গাছপালার শিকড় তীব্র ঝড়ের শক্তি কমিয়ে দেয় এবং উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচায়। তবে বেশিরভাগ মানুষই এসব বনের যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারছে না, তেমনি ম্যানগ্রোভ রক্ষায়ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোনও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কাজ করার জন্য না আছে জনবল, আর না আছে প্রয়োজনীয় তহবিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল সায়েন্সেস’-এর ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষায় আমাদের দরকার একটি বৈশ্বিক নিয়ম, যা সব জায়গায় প্রয়োগ করা যায়। এ ধরনের গবেষণা হওয়া উচিত প্রমাণনির্ভর এবং সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ ও অর্থবিভাগের হিসাব করার জন্য যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য।
‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল সায়েন্সেস’-এর ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন জ্যাকব হোচার্ড। তিনি এবং তার সহকর্মীরা মিলে ২৩টি দেশের ২ হাজার উপকূলীয় সম্প্রদায় ও ১৯৪টি ম্যানগ্রোভ এলাকার উপাত্ত সংগ্রহ করেন। ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে এই গবেষণা প্রতিবেদন করা হয়েছে।
এতে রাতের বেলার স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কীভাবে একটি এলাকাকে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় আরও বলা হয়, সারা পৃথিবীর মোট উপকূলীয় অঞ্চলের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। অথচ কার্বন অপসারণ করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের নীচু ভূমিগুলো সমুদ্রের নীচে তলিয়ে যাওয়া থেকেও রক্ষা করে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
উদাহরণ হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কথা বলা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সাগরের পানি কৃষিজমিতে প্রবেশ করায় বাংলাদেশে ধান চাষ দিন দিন অসম্ভব হয়ে উঠছে। ফলে অনেক সম্প্রদায়ই চিংড়ি চাষের দিকে ঝুঁকছে। আবার চিংড়ি চাষ বেড়ে যাওয়ার কারণে ম্যানগ্রোভ বনে অতিরিক্ত জায়গার দরকার হচ্ছে। এতে বনাঞ্চলেরই ক্ষতি হচ্ছে। ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ও ক্ষতির মুখে পড়ছে। এছাড়া ম্যানগ্রোভ বন শুধু চিংড়ি চাষের কারণেই ধ্বংস হচ্ছে না। দূষিত পানির কারণেও এসব বনের ক্ষতি হচ্ছে।