শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতের চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় পুলিশসহ ছয়জনের দণ্ড

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ১১ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার

ভারতের জম্মু কাশ্মিরের কাঠুয়ায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। যা পুরো ভারতকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। আসিফা বানু নামে আট বছর বয়সী এক শিশুকে মন্দিরের ভেতর দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়।

ওই শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে আট আসামির মধ্যে ছয় জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন ভারতের দ্রুত বিচার আদালত। এক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় শিশু আইনে পৃথকভাবে তার বিচার হবে। আরেকজন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

সোমবার পাঞ্জাবের পাঠানকোটের জেলা ও সেশন আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আসিফা বানু নামে এক মুসলিম শিশুকে অপহরণ করে গণধর্ষণ ও পরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি শিশুটিকে অপহরণ করে কাঠুয়ার একটি মন্দিরে আটকে রাখা হয়। সেখানে দিনের পর দিন তাকে মাদক দিয়ে, অভুক্ত রেখে, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করা হয়। এমনকি, মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাথরের সঙ্গে মাথায় আঘাত করা হয় তার। অভিযোগ আছে, হত্যার আগমুহূর্তেও শিশুটিকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল একজন।

ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি জঙ্গলে আসিফার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়। এর তিন দিন পর অভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সানজি রামের ভাইপোকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে, তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক সানজি রাম, তার বন্ধু পরবেশ কুমার, পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া ও সুরেন্দ্র ভার্মা, হেড কনস্টেবল তিলক রাজ, সাব-ইন্সপেক্টর আনন্দ দত্তকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয়।

 

এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি জানান বহু মানুষ। এর মধ্যে গ্রেফতার আট জনেরই নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কাশ্মীরে অবরোধ করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও আইনজীবীরা। তাদের সমর্থন জানিয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির তৎকালীন দুই মন্ত্রী সমাবেশে যোগ দিলে বিক্ষোভ আরো বেড়ে যায়।

তদন্তকারীরা জানান, শিশুটিকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়, যেন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান।

ধর্মীয় দ্বন্দ্বের কারণে বিচারে যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য জম্মু-কাশ্মীরের আদালত থেকে মামলাটি উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পাঞ্জাবের পাঠানকোট আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, তারা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা কাঠুয়ায় হুমকির মুখে রয়েছেন।

আসিফার মা অভিযুক্ত সানজি রাম ও দীপক খাজুরিয়াকে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী দাবি করে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন।

 

তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি’কে বলেন, আমার মেয়ের চেহারা এখনো দেখতে পাই। তাকে হারানোর কষ্ট কখনো যাবে না। আশপাশে যখন তার বয়সী শিশুদের খেলতে দেখি, আমার মন ভেঙে যায়।

আসিফা ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডটি ভারতের অন্যতম চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যার কারণে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুকে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে নতুন আইন পাস করা হয়।

দোষী সাব্যস্ত হওয়া ছয় আসামিই সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

সোমবারের রায়ে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে একমাত্র সানজি রামের ছেলেকেই খালাস দিয়েছেন আদালত।

ভুক্তভোগী পরিবারের আইনজীবী বিবিসি’কে বলেন, ধর্মীয় বাধা সত্ত্বেও সারাদেশ একসঙ্গে এ মামলা লড়েছে। এ রায় আইনি শাসনের বিজয়।