পাঁচ ক্ষমতাধর ব্যক্তি, যাদের প্রভাব আজো চিরস্মরণীয়
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৪৭ এএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি কে? এমন প্রশ্নে উঠে আসবে চীনের প্রেসিডেন্ট শী জিনপিং-এর কথা। তবে আপনি জানেন কী এর চেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিল এই বিশ্বে? যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে তাদের দুর্দান্ত প্রভাব বিস্তার করে গেছেন। আজ তালিকায় রয়েছে এমনই ৫ জন ব্যক্তির নাম, যারা বাস্তবে যেমন প্রভাবশালী ছিলেন, তেমনই কৃত কাজের জন্য আলোচিতও হয়েছেন।
অ্যাডলফ হিটলার
অ্যাডলফ হিটলার। বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় প্রথমেই চলে আসবে তার নাম। অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার হাঙ্গেরিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার জার্মানির হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধে তার সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য ১৯১৮ সালে তাকে ফার্স্ট ক্লাস আয়রন ক্রস দেওয়া হয়। ১৯১৯ সালে তিনি জার্মান ওয়ার্কাস পার্টিতে সামরিক রাজনৈতিক এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে তিনি পার্টি প্রধান হয়ে ওঠেন এবং দলের নতুন নাম দেন ন্যাশনাল ওয়ার্কাস পার্টি।
এরপর হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফিউরার ছিলেন। ১৯৩৯ সালে তার নেতৃত্বে জার্মানরা পোল্যান্ড জয় করে নিলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই সূচনা ঘটে ২য় বিশ্বযুদ্ধের। হিটলারের রাজ্য জয় ও ইহুদী বিদ্বেষের কারণে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। এ সময় পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয় প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে। ইতিহাসে এই ঘটনা হলোকাস্ট নামে পরিচিত।
কার্ল লিনিয়াস
পৃথিবীর সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কার্ল লিনিয়াস। তিনি ছিলেন একাধারে একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও প্রাণিবিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম জীবজগতকে উদ্ভিদ ও প্রাণি এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেন বলে তাকে আধুনিক শ্রেণীবিন্যাসের জনক বলা হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণিবিজ্ঞানে অবদানের পাশাপাশি তিনি দ্বিপদী নামকরণ ও আধুনিক বাস্তুবিজ্ঞানেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
১৭০৭ সালের ১৩ই মে, দক্ষিণ সুইডেনের স্মালান্দের এক গ্রামে লিনিয়াসের জন্ম। তিনি তার শিক্ষাজীবনের অধিকাংশ সময় কাটান Uppsala University তে। এখান থেকেই তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৭৩০ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং শ্রেণীবিন্যাস বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণির নামকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে দ্বিপদী নামকরণের প্রবক্তা বলা হয়।
১৭৫৮ সালে প্রকাশিত Systema Naturae বইতে তিনি ৭,৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৪,৪০০ প্রজাতির প্রাণীর নামকরণ করেন। এছাড়া তার লেখা উল্লেখযোগ্য তিনটি বই হল Species Plantarum, Genera Plantarum ও Philosophia Botanica. ১৭৭৮ সালের ১০ই জানুয়ারী আপসালা ইউনিভার্সিটিতে এই মহান বিজ্ঞানী মৃ্ত্যুবরণ করেন।
আব্রাহাম লিংকন
আব্রাহাম লিংকন। তার জন্ম ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি রাজ্যের হার্ডিন কাউন্টিতে। অতি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা এই শাসক ছিলেন স্বশিক্ষিত এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো প্রদান এবং আমেরিকার অখন্ডতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাকে এখনো আমেরিকার আদর্শ বলে বিবেচনা করা হয়। ১৮৬৫ সালের ১৫ই এপ্রিল লিংকন জন উইলকেস বুথ নামে আততায়ীর হাতে নিহত হন।
লিংকন তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন ব্ল্যাক হ্যাক যুদ্ধের পর থেকে। ১৮৪৭ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬১ সালে তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে আমেরিকার ১৬ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। একই বছর দাস প্রথাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তিনি উত্তরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন বাহিনীর নেতৃত্ব দেন এবং দক্ষিণ কনফেডারেট জোটকে পরাজিত করেন। ১৮৬৩ সালে লিংকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ ক্রীতদাস মুক্ত করেন।
ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট
ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে অন্যতম তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি ৩ বার এ পদের জন্য নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ ১২ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফলভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতি হিসেবে অভিহিত রুজভেল্ট ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং সুদক্ষ কূটনীতিবিদ।
১৮৮২ সালের ৩০ জানুয়ারি, রুজভেল্ট নিউইয়র্কের হাইড পার্কের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার ১১ বছর আগে পোলিও-তে আক্রান্ত হয়ে তার কোমরের নিচের অংশ চিরতরে অবশ হয়ে যায়। ১৯৩৩ সালে তিনি প্রথমবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। এসময় দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় উইনস্টন চার্চিল এবং জোসেফ স্ট্যালিনের মত বিশ্বনেতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন তিনি।
তিনিই প্রথম জাতিসংঘের প্রস্তাবক ছিলেন। ১৯৪৫ সালের ১২ এপ্রিল জর্জিয়ার ওয়ার্ম স্প্রিং-এ ৬৩ বছর বয়সী রুজভেল্ট মৃত্যুবরণ করেন।
উইনস্টন চার্চিল
উইনস্টন চার্চিল। যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের একজন সম্মানিত ও দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ হলেন তিনি। উইনস্টন চার্চিল ১৯৪০-১৯৪৫ এবং ১৯৫১-১৯৫৫ এই দুই মেয়াদে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যকে নেতৃত্ব প্রদানের জন্যই তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। একজন ব্রিটিশ হিসেবে তিনি প্রথম সম্মানসূচক আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০০২ সালে বিবিসির এক জরিপে চার্চিল সর্বকালের সেরা ব্রিটেনবাসী হিসেবে মনোনীত হন।
উইনস্টন চার্চিল ১৮৭৪ সালের ৩০ শে নভেম্বর ইংল্যান্ডের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত, সুদান, মিশরসহ বেশ কয়েকটি দেশের মিলিটারি সার্ভিসে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে কৌশলে ব্রিটেনকে রক্ষা করেন। সুদক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি চার্চিল একজন সফল লেখকও ছিলেন। তিনিই একমাত্র ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যিনি ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। চার্চিলের লেখা ৪০টির বেশি বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে ৬ খন্ডে প্রকাশিত ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বইটি। ১৯৬৫ সালের ২৪ শে জানুয়ারি ৯০ বছর বয়সে চার্চিল মারা যান।