রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ মারত্মক অপরাধ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৩৭ এএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার

মিথ্যা সাক্ষ্য দান করা মানে মিথ্যা বলা। দু'টিই কবীরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। 

মিথ্যা সাক্ষ্য দানকে কোরআন ও হাদিসে ভয়াবহভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মিথ্যা সাক্ষ্য দানকে শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যিনি মুমিন তিনি কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারেন না।

মুমিনদের কতিপয় গুনাবলীর মধ্য একটি হলো- আল্লাহ বলেন, ‘যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না।’ (সূরা আল-ফুরকান-৭২)

সূরা হজ্জের ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য থেকে বেঁচে থাক। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মিথ্যা সাক্ষ্য দান আল্লাহর কাছে শিরকের সমান।’ (আবু দাউদ,তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

 

রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার জন্য জাহান্নামের ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত সে পা নাড়াতেও পারবেনা।’ (ইবনে মাজাহ)

ইমাম আয যাহাবী বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, সে কতগুলো পাপে লিপ্ত হয় ‘ 

প্রথমত: সে মিথ্যা ও মনগড়া কথা বলে। 

এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ অপব্যয় মিথ্যাবাদীকে হেদায়াত দান করেন না।’ (সূরা মুমিন-২৮)

দ্বিতয়িত: সে যার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় তার ওপর যুলুম করে। কেননা এ দ্বারা সে তার জানমাল অথবা মান সম্মানের সাধন করে।

 

তৃতীয়ত: সে যার পক্ষে সাক্ষ্য দেয় তার ওপর যুলুম করে। কেননা এ মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে সে তার জন্য হারাম মাল অর্জন এবং ভোগের ব্যবস্থা করে দেয়, যার পরিনামে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়।

রাসূল (সা.) বলেন, মিথ্যা সাক্ষ্যের প্রভাবে আমি যদি কাউকে অন্য মুমিন ভাই-এর সম্পদ দেয়ার নির্দেশ দেই ,তবে সে যেন তা গ্রহণ না করে। কেননা ঐ সম্পদ তার জাহান্নামের আগুনের একটা টুকরো”(বুখারী ও মুসলিম)

চতুর্থত: সে মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে একটা নিষিদ্ধ সম্পদ, প্রাণ বা সম্ভ্রমের ওপর অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ বানিয়ে দেয়। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কী তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় তিনটি কবিরা গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? উপস্থিত সবাই বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, (সেগুলো হলো) (১) আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা; (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, তিনি হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় ছিলেন। এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, শুনে রাখ (৩) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। এ কথাটি এত অধিকবার বলতে থাকলেন যে, সাহাবাগণ মনে মনে বলতে লাগলেন, ‘আর যদি তিনি না বলতেন। (বুখারি)

 

মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া মারত্মক অপরাধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দিয়ে বসা থেকে সোজা হয়ে বসে একাধিকবার মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে তাগিদ করাই প্রমাণিত হয় যে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া মারাত্মক অপরাধ। পাশাপাশি সত্য সাক্ষ্যকে গোপন করাও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া নামান্তর।

সুতরাং সব সময় সত্য সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে। সত্য সাক্ষ্য গোপন থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে সত্য সাক্ষ্য দেয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।