ইসলামের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা
ধর্ম ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:০১ এএম, ১৩ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ইসলাম শব্দের অর্থ ও মর্ম: কালিমায়ে তৈয়েবা ইসলামের মূলভিত্তি। (এটি ইসলামের ফটকও বটে। কারণ এর মাধ্যমেই একজন অমুসলিম ইসলামের ছায়াতলে আসতে সক্ষম হয়)
কোরআন-হাদিসের আলোকে ইসলামের মাহাত্ম্য ও মর্যাদার ধারাবাহিক আলোচনা ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
একজন দীন ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির দুনিয়া ও আখেরাতে কী মর্যাদা হবে এবং ইসলাম অস্বীকারকারী, ইসলামের প্রতি শত্রুতা পোষণকারীর কী পরিণতি হবে এ সম্পর্কেও চলমান প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে। এগুলো মুসলিম তো বটেই, অমুসলিমদেরও জানা প্রয়োজন। যাতে এগুলো জেনে দুনিয়াতেই প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ অবস্থান ঠিক করে নেয় এবং আখেরাতে তার গ্রহণ করা ধর্মের মাধ্যমে তাকে প্রতিদান বা শাস্তি দেয়া যায়।
আখেরাত তো কেবল প্রতিদান লাভের স্থান; সেখানে ইসলাম বা কুফুরি কোনোটি গ্রহণের সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই মহান রাব্বুল আলামিন দুনিয়াতে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, যাতে মানুষ দুনিয়াতেই তাঁদের অনুসরণ করে যেতে পারে। পরকালে তাঁদের অনুসরণের কোনো সুযোগ নেই। যারা দুনিয়াতে তাঁদের বাতলানো পথ ও মতের অনুসরণ করবে না, তারা হবে নিশ্চিত শয়তানের অনুসারী। আর শয়তান তার পথ অবলম্বনকারীদের সর্বদা সর্বনিকৃষ্ট গর্ত জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। এ কারণে জেনে-বুঝে নিজ রাস্তা অবলম্বনের সঠিক সময় কেবল এই নশ্বর দুনিয়াতেই, পরকালে এ সুযোগ কাউকেই দেয়া হবে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যে চায় ঈমান আনবে, যে চায় কুফরি করবে।’ (সূরা কাহাফ: ২৯) এ কারণেই দুনিয়াতে যে ইচ্ছা করবে ঈমান আনতে পারে, আর যে ইচ্ছা করবে ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। এ আয়াতের শেষে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, যারা ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্ম গ্রহণ করবে, তাদের কোনো কল্যাণ হবে না। এমন লোক জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর জালেমদের জন্য আমি এমন অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে রেখেছি, যার চারপাশে রয়েছে দেয়াল। তার ধোঁয়া তাদের ঘিরে ফেলবে, তারা পানি চাইলে তেলের নিম্নভাগের কালির মতো পানি দেয়া হবে, তা এতোই গরম হবে যে, মুখ পুড়ে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ)
ইসলাম শব্দের ব্যাখ্যা: ইসলামের আভিধানিক অর্থ ‘আনুগত্য স্বীকার করা’। অর্থাৎ নিজ সত্তাকে ওই সত্তার জন্য উৎসর্গ করা, যার কোনো শরিক নেই। কেবল তাঁরই আনুগত্য করা হবে এবং তার সঙ্গে কাউকে শরিক করা হবে না। এ বিষয়টি সুন্দর করে বুঝে আসে একটি হাদিস দ্বারা। যা ইমাম বুখারি ও মুসলিম (র.)-সহ আরো অনেক মুহাদ্দিসিনে কেরাম রেওয়ায়েত করেছেন। হাদিসটিতে রয়েছে, হজরত জিব্রাইল (আ.) একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে নবী! আপনি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।’ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ইসলাম হলো, তুমি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, নামাজ পড়ো, জাকাত আদায় করো, রমজানে রোজা রাখো এবং সক্ষম হলে হজ করো।’ (বুখারি ও মুসলিম) এটি ইসলামের পরিপূর্ণ পরিচয়। আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো কথা বলতেন না, যতোক্ষণ না সে বিষয়ে তাঁর নিকট ওহি প্রেরিত হতো।
‘লিসানুল আরবে’র গ্রন্থকার লিখেন, ‘ইসলামে শাব্দিক অর্থ, আনুগত্য করা।’ সায়্যিদ কুতুব (র.) নিজ তাফসির গ্রন্থ ‘জিলালুল কোরআনে’ লিখেন, ‘ইসলাম’ অর্থ হলো, গ্রহণ করা, অনুগত হওয়া, কারো সামনে মাথা নত করা। এর দ্বারা বুঝা যায়, ইসলাম অর্থ কেবল মনের মধ্যে ইসলামের একটি ছবি বা আকৃতি অঙ্কন করা নয়, আবার আল্লাহর প্রতি শুধু বিশ্বাস স্থাপনও নয়। বরং ইসলাম অর্থ হলো, বিশ্বাস স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে সে বিশ্বাসের হকও আদায় করা। অর্থাৎ, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী আমল করে জীবন অতিবাহিত করার নামই হলো ইসলাম। (তবে মনে মনে মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রেসালাতের স্বীকারোক্তি থাকলেও পরকালে নাজাত পাওয়া যাবে। এ বিষয়টি পূর্ববর্তী পর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে) এর দ্বারা বুঝা যায়, মহান আল্লাহর হুকুম-আহকাম, আদেশ-নিষেধ অত্যন্ত গুরুত্ব ও মন লাগিয়ে আদায় করার নামই হলো ইসলাম। আর এই হুকুম-আহকাম পাঁচটি আরকানে বিভক্ত। তারো আবার অনেকগুলো শাখা-প্রশাখা রয়েছে।
যেহেতু পূর্বের পর্বে কালিমায়ে তৈয়েবার গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও এর প্রতি দাওয়াতের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, তাই এই পর্বে কালিমার ভাবার্থ, ব্যাখ্যা ও মর্ম সম্পর্কে আলোকপাত করাই অধিক যুক্তিসঙ্গত। এর সঙ্গে সঙ্গে এই কালিমা কবুলকারীকে কী বলা হবে, কবুল করার পর তার ওপর কী হুকুম বর্তাবে, তার কর্তব্য কী, যে ধর্ম সে গ্রহণ করতে যাচ্ছে, সেটা কোন ধর্ম, তার মাহাত্ম্য কী, বড়ত্ব কতোটুকু, দুনিয়া ও আখেরাতে এই ধর্মের মর্ম ও লাভ কী, ইসলাম নিজ আনুগত্য স্বীকারকারী থেকে কী কামনা করে-মানুষের মনে সাধারণত উন্মেষ হওয়া এ সকল প্রশ্নের উত্তর ইনশাআল্লাহ দেওয়া হবে বর্তমান প্রবন্ধে।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও মর্ম: এই মহান কালিমাটি গভীর অর্থবোধক। কোনো ব্যক্তি কালিমাটির পূর্ণ অর্থ ও মর্ম উদঘাটন ব্যতীত তার চাহিদা অনুযায়ী আমল করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে এই কালিমা ত্রিশ বার থেকেও বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা বাকারা, সূরা আলে ইমরান, সূরা নিসা, সূরা আনআম, সূরা তওবা, সূরা ইউনুস, সূরা হুদ, সূরা রা’দ, সূরা ইব্রাহিম, সূরা নহল, সূরা তহা, সূরা আম্বিয়া, সূরা মুমিনুন, সূরা নমল ইত্যাদি সূরায় কালিমাটি উল্লেখিত হয়েছে।
যেমন: লা’ইলাহা ইল্লাল্লাহু হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। (সূরা বাকারা: ৫৫২) সূরা তহায় এসেছে, লা’ইলাহা ইল্লাল্লাহু হুয়াল আসমাউন লাহুল হুসনা। আরবি শব্দ ‘ইলাহ’ অর্থ হলো, ‘মাবুদ’; যার ইবাদত করা হয়। পরিভাষায় মাবুদ বলা হয় তাকে, যিনি ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত। যাঁর সত্তা সর্বগুণে গুণান্বিত। তাঁর গুণ অর্জন করতে কেউ সক্ষম নয়। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা ও মালিক। এই ধরিত্রীতে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ কখনোই ইবাদতের উপযুক্ত হতে পারে না। চাই সে নবী, ওলি, ফেরেশতা বা জিন হোক না কেন। এমনিভাবে অন্যকোনো মাখলুক যেমন: চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, আসমান-জমিন- কোনোকিছুই ইবাদতের উপযুক্ত নয়। ইবাদতের উপযুক্ত কেবল সবকিছুর স্রষ্টা মহান রব্বুল আলামিন।
সেই মহান সত্তাকে আরবিতে ‘আল্লাহ’ বলা হয়। এ নামটি সমগ্র দুনিয়ায় তাঁর জন্যই নির্ধারিত। অন্য কোনো সত্তার জন্য এটি ব্যবহার করা যায় না।