আলোর সমান গতিতে পৌঁছালেই ‘সময়’ থামানো যাবে!
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:৩৩ এএম, ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার

সৃষ্টির শুরু থেকেই সময় নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। কথায় আছে সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। কিন্তু শৈশবে কিংবা বড় হয়েও আমরা অনেকেই সময় থামিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারার কথা চিন্তা করেছি। কিছু কিছু বিজ্ঞানী আবার এক ধাপ এগিয়ে বাস্তবেই সময় থামানোর চেস্টা করেছেন। কিন্তু সারাজীবন চেস্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। তবে অনেক সুপারহিরো সিনেমাতেই সময় থামানোর মত অসম্ভব কাজ ও দেখানো হয়েছে। তবে বাস্তবেই কি সময় থামানো যায়? আর কি-ই বা হবে যদি থমকে যায় সময়?
সময় থমকে গেলে কি হবে তা জানার পূর্বে আমাদের জেনে নিতে হবে আসলেই কি সময় থামানো সম্ভব? আর যদি তা সম্ভব হয় তাহলে কীভাবে?
ফিজিক্সের সূত্র অনুযায়ী বাস্তবে এই পৃথিবীতে সময় থামানো সম্ভব নয়। কারণ পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী সময় হল দূরত্বের এবং গতি এর ভাগফলের সমান। তাহলে যদি সময়কে থামাতে হয় তাহলে দূরত্বের এবং গতির ভাগফল শূন্য হতে হবে। যা বাস্তবিক পৃথিবীতে সম্ভব নয়। কারণ আমাদের পৃথিবীর এবং সৌরজগত উভয়ই সর্বদা গতিশীল এবং পৃথিবীর সাথে পৃথিবীর অন্তর্গত সকল বস্তুই গতিশীল। এই গতি থামানো সম্ভব নয়। যদি কোনোভাবে সম্ভব হয় তবে পৃথিবীর অস্তিত্বই থাকবেনা। কিন্তু বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী যদি কোনো বস্তু বা ব্যাক্তিকে আলোর সমান গতিতে পৌঁছানো যায়। তবে সেই বস্তু বা ব্যাক্তির জন্য সময় থমকে যাবে। কিন্তু তা কখনো সম্ভব নয়। কারণ আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। এসকল তত্ত্ব বিবেচনায় নিয়েও বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখেছেন সময় থেমে গেলে কি হতে পারে। তাহলে জেনে নেয়া যাক কি হবে সময় থমকে গেলে?
আমরা জানি পৃথিবীর সবকিছুই ছোট ছোট পরমাণু দিয়ে তৈরি যার মধ্যে রয়েছে প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন। এই ইলেকট্রনগুলো পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রন এর চারিদিকে ঘুর্ণায়মান। ফলে যদি সময় থেমে যায় তহলে গতিও থেমে যাবে। ফলে পৃথিবীর সকল অনু পরমাণু থমকে যাবে। যে কারণে পৃথিবীতে অবস্থিত সকল বস্তুই স্থির হয়ে যাবে। মানুষ থেকে শুরু করে জীবজন্তু সকল বস্তুই স্থির হয়ে যাবে। এই স্থির মানুষ এবং জীবজন্তুরা দেখতে বা শুনতে পাবেনা। কারণ আলোর ফোটন রশ্মি এবং শব্দ তরঙ্গের গতিও থেমে যাবে। ফলে তা আমাদের কানে এবং চোখে পৌছাবেনা। তাই সময় থেমে গেলে মানুষের দৃষ্টি এবং শ্রবন শক্তি দুটিই চলে যাবে। এমনকি মানুষের ব্রেন ও কাজ করা বন্ধ করে দিবে। কারণ ব্রেনকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় নিউরনের সিগন্যালও গতিময়।
সময় থেমে গেলে এসকল সিগন্যাল থেমে মানব তথা জীবজন্তু সকলকেই অবশ করে দিবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। যদি এই অবস্থা কিছুক্ষণ থাকে তবে প্রাণীজগতের জন্য সবথেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সাপ্লাই এবং বায়ুমন্ডল ও থমকে যাবে। যার কারণে আস্তে আস্তে পৃথিবীর সকল জীবজন্তু শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাবে। ফলে পৃথিবী একটি মৃত গ্রহে পরিণত হবে। কিন্তু যদি আইন্সটাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো মানুষকে আলোর গতিতে নেয়া যায় তবে?
পৃথিবীর পরিবেশে কোনো মানুষকে আলোর গতিতে নেয়া সম্ভব নয়। তবে যদি কোনো উপায়ে নেয়া হয় তাহলে ওই ব্যাক্তির জন্য পৃথিবীর সবকিছু থেমে যাবে এবং ওই ব্যাক্তির দৃষ্টিশক্তি শ্রবণ শক্তি সবকিছুই ধীরে ধীরে লোপ পাবে। কিন্ত যদি কোনো বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যাক্তিকে সময়ের গতিতে নেয়া হয়। তবে ওই যন্ত্রের মধ্যে যতক্ষণ অক্সিজেন সাপ্লাই থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাক্তি অচেতন অবস্থায় জেগে থাকবে। অক্সিজেন শেষ হওয়া মাত্রই তিনি মারা যাবেন। তাই পরবর্তীতে সুপারহিরোদের মত সময় থামানোর পরিকল্পনা আনার আগে অবশ্যই ভেবে নিবেন।