বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মসজিদ ভাঙ্গতে রাজি হয়নি বনবিভাগের প্রশিক্ষিত হাতি

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার

খারাপ সময় পার করছেন ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা। ভারতের আসাম রাজ্যে বর্তমান বিজেপি সরকার শুধু ‘অনুপ্রবেশকারী’ নয়, ভারতীয় নাগরিকদেরও উচ্ছেদ করতে শুরু করেছে। আর এক্ষেত্রেও উচ্ছেদ অভিযানের টার্গেট হচ্ছে আসামের সংখ্যালঘু মুসলিমরা। বর্তমানে উচ্ছেদ অভিযানের নিশানায় রয়েছে বরাক উপত্যকা।

বনাঞ্চলের খালি জমিতেও বসবাস অবৈধ এমন যুক্তি দেখিয়ে সেখানে চালানো হয়েছে এই উচ্ছেদের কাজ। আসামে এই উচ্ছেদের কাজে বনবিভাগের কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রশিক্ষিত হাতি। কারণ– অনেক ক্ষেত্রেই পথ-দূর্গমতার জন্য বুলডোজার ব্যবহার করা সম্ভবপর হয় না।

এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় সম্প্রতি একটি অবাক করা ঘটনা ঘটেছে কাছাড় জেলার ধলাই-রজনীখালে। কয়েক দিন ধরে চলা ওই এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ১০০টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙ্গে দেয় হাতি– বনবিভাগের কর্মী ও পুলিশ। এই অভিযানে ১০টি হাতি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যখন হাতি দিয়ে ওই এলাকায় স্থাপিত একটি মসজিদ ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়– দেখা যায় হাতিগুলো তাতে রাজি হচ্ছে না।

 

গত ৭ জুন বনবিভাগের কয়েকটি হাতি নির্দেশমতো ঘরবাড়িগুলি উচ্ছেদ করে। কিন্তু ওই গ্রামের মসজিদের সামনে এসে হাতিগুলি দাঁড়িয়ে পড়ে এবং পরে তারা বসে যায়। উল্লেখ্য, এই উচ্ছেদ অভিযানের পরিচালক জেলা বনবিভাগের আধিকারিক সানিদেও চৌধুরি এবং পুলিশ অধিকর্তারা বহু চেষ্টা করেও হাতিগুলির দ্বারা মসজিদটিকে ভাঙতে সক্ষম হননি।

এরপর হাতির মাহুতরাও হাতিগুলোকে দিয়ে মসজিদের দেয়াল ও কাঠের পিলার ভাঙ্গতে অসমর্থ হয়। কারণ হচ্ছে– হাতিগুলো কোনোমতেই মসজিদের ধ্বংসকার্য চালাতে রাজি হয়নি। ফলে সেখানেই উচ্ছেদ অভিযান শেষ করা হয়।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশগ্রহণকারী এক মাহুত রাজেন কৈলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাতি হচ্ছে ভগবানের প্রতীক। তাই তারা ভগবানের ঘর ভাঙতে রাজি হয়নি। আর সে জন্য হাতিগুলি আমাদের নির্দেশও মানেনি।’

বিষয়টি আসামের ধর্মপ্রাণ হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

 

ধলাই-রজনীখালের বনাঞ্চলের এক পাশে খালি জমিতে উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর বসতি ছিল। দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা ওই স্থানে বসবাস করছিল। এই পরিবারগুলোর বেশিরভাগই ছিল কাছাড়ের স্থানীয় মুসলিম। তারা বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও তাদেরকে সরকার জমির পাট্টা দেয়নি। 

তবে, বিদ্যুৎসহ ওই গ্রামে সাধারণ নাগরিক পরিষেবা দেয়া হয়েছিল। এই পরিবারের সদস্যদের রেশন কার্ড, আধার কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য নথিপত্র রয়েছে। পরিবারগুলো এখন আসামের ঘোর বর্ষার মধ্যে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে রয়ানা হয়েছে।