বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জুলাইয়ে দেশের প্রথম প্রিপেইড মিটার উৎপাদন শুরু

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ১৫ জুন ২০১৯ শনিবার

খুলনায় অবস্থিত দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার তৈরির কারখানায় আগামী জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে কোম্পানি গঠনসহ উৎপাদনের যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে প্রথম বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার তৈরির লক্ষ্যে যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়নার হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তি সই করা হয়।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক নির্ধারিত ‘বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড’ নামে কোম্পানির নামকরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি অনুমোদন পায়। তবে বছর না গড়াতেই আগামী জুলাই মাসেই উৎপাদন শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। খুলনা মহানগরীর মোহাম্মদনগরে প্রাথমিকভাবে এই কাজ শুরু হয়।

 

পরে নগরীর শেখপাড়ায় ওজোপাডিকো’র নিজস্ব জায়গায় স্থায়ীভাবে উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করা হবে। এই কাজের জন্য ২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কমপক্ষে দুইশ জনের কর্মসংস্থান হবে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে দুই শিফটে ১০ লাখ মিটার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) কোম্পানি সচিব আব্দুল মোতালেব বলেন, এ কোম্পানির মাধ্যমে বর্তমান বাজার মূল্য থেকে বিদ্যুৎ গ্রাহকদেরকে কম মূল্যে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা সম্ভব হবে। উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা যাবে। উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের ফলে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। কারিগরি বিষয়েও অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।

তিনি বলেন, এই মিটারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সার্ভিস চার্জও নেই। 

সূত্র জানায়, বর্তমানে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) মাধ্যমে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২১টি জেলা ও ২০টি উপজেলা সদরে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৯ জন বিদ্যুৎ গ্রাহককে সেবা দেয়া হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যুৎ গ্রাহকদের আধুনিক এবং আরো মানসম্মত সেবা প্রদান ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওজোপাডিকো’র আওতায় ১৪ লাখ ৬৮ হাজারটি প্রিপেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৪টি প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩৬টি মিটার আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে স্থাপন করা হবে।

সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী (২০১৬-২০২০) পরিকল্পনায় সারাদেশে ৭৫ লাখ ইলেকট্রোমেকানিক্যাল বা ডিজিটাল এনার্জি মিটারকে প্রিপেইড মিটার দ্বারা প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত পরিকল্পনায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের মধ্যে ২ কোটি ৮৭ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আওতায় এখন পর্যন্ত ১৬ লাখ ৭ হাজার ৫৮৪টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তীতে ২ কোটি ৭০ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬টি প্রিপেইড মিটার বাস্তবায় করা হবে। 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সব প্রিপেইড মিটার বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়সহ অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া কারিগরি বিষয়ে রফতানিকারক দেশের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এবং হেক্সিং, চীনের যৌথ উদ্যোগে সরকারের অনুমোদনক্রমে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ম্যানুফ্যাকচারিং/অ্যাসেম্বলিং কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন জানান, এই কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বাংলাদেশে সব বিদ্যুৎ গ্রাহকদেরকে সহজে সরবরাহ করা যাবে। ফলে আমদানির জন্য সময় নষ্ট হবে না। এ কোম্পানির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ওজোপাডিকো তথা বাংলাদেশ স্মার্ট প্রিপেইড মিটার উৎপাদন ও বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানে কারিগরি জ্ঞান অর্জনে স্বনির্ভর হবে।