বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুজিব কোটেই ছয় দফা!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:০০ এএম, ১৬ জুন ২০১৯ রোববার

স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার ডাকে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর যা যা প্রিয় ছিল, তা দেশের সব মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু পোশাকের ভেতর পরতেন সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর ৬ বোতামের কালো কোট। বিশেষ করে এ কোটই বঙ্গবন্ধুর নামে চলতে শুরু করে। কোটটি পরবর্তীতে ‘মুজিব কোট’ নামে বেশি পরিচিতি পায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাকে যারা ভালোবাসতেন, তারাই পরবর্তিতে এ ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার শুরু করেন। ব্যাপারটা এমন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করার চেষ্টা।

 

 

‘মুজিব কোট’ বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মাঝেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এ কোটকে ব্যবহার করছেন। বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের কাছে, এই কোট ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মুজিব কোট ছাড়াও মোটা ফ্রেমের চশমা, চুরুটের পাইপও বঙ্গবন্ধুর আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বঙ্গবন্ধু ঠিক কত সাল থেকে কালো কোট পরা শুরু করেছিলেন তার কোনো নির্দ্রিষ্ট সময়সীমা পাওয়া যায়নি। তবে বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, আগরতলা (১৯৬৮) মামলার সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু এ কালো কোট পড়া শুরু করেন।

 

মুজিব কোট কি এবং কেন বঙ্গবন্ধু এটা পরিধান করতেন? — এ প্রশ্নের উত্তর অনেক মুজিব কোট পরিধানকারী আওয়ামী নেতারাও সঠিকভাবে জানেন না। 

যদি সত্যিকার অর্থেই জানতেন তা’হলে মুজিব কোটের মূল বৈশিষ্ট্যকে বিকৃত করে অমর্যাদা করতেন না। এক নেতাকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা আপনি মুজিব কোট পড়েন কেন?’

 

 

নেতা মুজিব কোটের আসল রহস্য জানতেন না। তাই তিনি স্বভাবসুলভ জবাব দিয়েছিলেন, ‘এটা বঙ্গবন্ধু পড়তেন, তাই আমিও পড়ি। এটা একটা আদর্শ।’ আসলে বঙ্গবন্ধু পড়তেন বলে এটি আদর্শ নয়, আদর্শ ছিলো এই কোট পড়ার পেছনে রয়েছে এক গভীর চিন্তাধারার রহস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দিনকে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক কাছ থেকে দেখলেন, কথাও বললেন দীর্ঘক্ষণ। কথা শেষে উঠে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যখন তার কালো কোটটি গায়ে জড়াচ্ছিলেন তখন ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ৬টি বোতাম রয়েছে। যা এ ধরনের অন্য কোটের বোতামের চেয়ে কম। 
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কোটের বোতাম ৬টি কেন?’

উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এমন প্রশ্ন এর আগে আমাকে আর কেউ করেনি। তুই প্রথম। এ ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক।’ মুজিব কোটে ছিলো ৬টি বোতাম। মুজিব কোটের ৬ বোতাম মানেই শেখ মুজিবের ৬ দফা। স্বধীনতা ঘোষণার পূর্বে শেখ মুজিবের গায়ের কোটটি মুজিব কোট হিসেবে তেমন খ্যাতি লাভ করেনি। কালো হাতাকাটা বিখ্যাত কোটটি তখনও লাভ করেনি কালজয়ী কোনো নাম।হাতাবিহীন, হাইনেক, নিচে দুটি পকেট, কালো রঙের কোট – সংক্ষপে এটাই মুজিব কোট। 

 

 

এ কোট পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সর্বোপরি নিজেকে বাঙালির ফ্যাশন ‘আইকন’ হিসেবে বিশ্বের দরবারে হাজির করেছেন। মুজিব কোট শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পছন্দের পোষাক ছিল না; এর নির্মাণ শৈলিতে প্রতিফলিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চেতনা ও আদর্শ। মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশি আন্দোলন ও বিদেশি পণ্য বর্জন থেকে যেমন দেশি সুতায় বোনা মোটা কাপড় খাদির আবির্ভাব ঘটেছিল। 

তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশি চেতনা, দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা, সোজা কথায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ মোড়ানো মুজিব কোটের আবির্ভাব ঘটেছিল।