ঘুমন্ত অবস্থায় দ্রুত সমস্যার সমাধান বের করা সম্ভব!
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ১৯ জুন ২০১৯ বুধবার
কেউ জেগে স্বপ্ন দেখে আবার কেউ ঘুমিয়ে। জেগে স্বপ্ন দেখাটা অনেকটা ইচ্ছার প্রতিফলন বা একটি বাগধারা। তবে মানুষ প্রতিনিয়তই ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু কিছু স্বপ্ন মনে থাকে আবার কিছু কিছু স্বপ্ন আমরা দেখার ১০ মিনিটের মধ্যেই ভুলে যাই। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন আমরা আসলে কেন স্বপ্ন দেখি? সেই আদিকাল থেকেই মানুষ স্বপ্ন নিয়ে তোলপাড় করে আসছে।
খ্রীস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মেসোটপিয়ান রাজারা নিজেদের স্বপ্ন মোমের উপর লিখে রাখতেন এবং বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সেই স্বপ্নের অর্থ খোজার চেষ্টা চালাতেন। এর প্রায় এক হাজার বছর পরে মিশরীয়রা বিভিন্ন কমন স্বপ্নের অর্থ নিয়ে বই লিখেছিল। এমনকি বর্তমানেও স্বপ্নের অর্থ খুঁজতে রয়েছে হাজার হাজার বই। এমনকি স্বপ্নের অর্থ নিয়ে কাজ করে এমন মানুষও রয়েছে। কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে এত হৈ চৈ করলেও বেশিরভাগ মানুষই আমরা স্বপ্ন কেন দেখি তা জানিনা। তাহলে জেনে নেয়া যাক স্বপ্ন দেখার কিছু কারণ সম্পর্কে-
স্বপ্ন দেখার কারণ সম্পর্কে জানার পূর্বে জেনে নিতে হবে স্বপ্ন আসলে কী? স্বপ্ন ঘুম চক্রের একটি পর্যায় যেখানে মানুষ বাস্তব কিংবা অবাস্তব সব জিনিস দেখে বা অনুভব করে থাকে। ঘুম চক্রের এই পর্যায়কে আর ই এম বা র্যাপিড আই মুভমেন্ট বলা হয়ে থাকে। কোনো ঘুমন্ত মানুষের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গভীর ঘুমে সেই মানুষের চোখের পাতা নড়ছে। এই অবস্থাই র্যাপিড আই মুভমেন্ট। সাধারণত ঘুমের ৯০ মিনিট পরে র্যাপিড আই মুভমেন্ট শুরু হয় এবং পুরো ঘুম চক্র জুড়ে বিভিন্ন সময়ে এই র্যাপিড আই মুভমেন্ট পর্যায় আসে। যখন মানুষ মগ্ন থাকে স্বপ্নের অভ্যন্তরে। এ কারণেই এক ঘুমের অভ্যন্তরে মানুষ কয়েকটি স্বপ্ন দেখতে সম্ভব। স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা শুরু হওয়ার কয়েক হাজার বছর পেরিয়ে গেলে বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন দেখার কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে সক্ষম হয়নি। তবে বিজ্ঞানের কল্যাণে বর্তমানে স্বপ্নের কারণ সম্পর্কে অনেক তত্ত্বই রয়েছে।
স্বপ্ন দেখার কারণ নিয়ে সবথেকে জনপ্রিয় ধারণা হল মানুষ নিজের অবচেতন ইচ্ছা পূরণে স্বপ্ন দেখে থাকে। মানুষের মস্তিষ্কের মূলত দু’টি প্রধান অংশ রয়েছে। যার একটি কন্সাস মাইন্ড এবং অন্যটি আনকন্সাস মাইন্ড। কন্সাস মাইন্ডে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনীয় সকল স্মৃতি বা কর্মকান্ড জমা হয়। অপরদিকে আনকন্সাস মাইন্ড হল মস্তিষ্কের এমন অংশ যা প্রয়োজনীয় কিন্তু সকল ক্ষেত্রে বা পরিস্থিতিতে কাযে লাগে না এমন সব স্মৃতি বা কর্মকান্ড জমা হয়। আনকন্সাস মাইন্ডে জমা হওয়া স্মৃতি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা থাকে না। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে এসকল স্মৃতি বা কর্মকান্ড থেকে তথ্য নিয়েই মানুষ সমস্যার সমাধান করে থাকে। ১৮৯৫ সালে বিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করে, আমাদের প্রতিদিনের দেখা অশংখ্য স্মৃতি একত্রে জমা হয়ে তা আনকন্সাস মাইন্ডের মাধ্যমে গুপ্ত ইচ্ছায় রুপান্তরিত হয়। স্মৃতির এই রূপান্তরিত অবস্থাই হল স্বপ্ন। একারণেই আমারা স্বপ্নে আমাদের বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া এবং তার পরিপূর্ণতা দেখে থাকি।
তবে সম্প্রতি গবেষণায় স্বপ্ন নিয়ে আরো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি কোনো সমস্যা সম্পর্কে মানুষকে ঘুমের মধ্যে ভাবতে দেয়া হয় বা ওই সমস্যা নিয়ে কেউ স্বপ্ন দেখে তবে অন্যান্য মানুষের তুলনায় ওই মানুষটি দশ গুণ দ্রুত সময়ে সেই সমস্যার সমাধান বের করতে পারে। কারণ আমাদের ব্রেনের এমন অনেক অংশ রয়েছে যা শুধুমাত্র ঘুমন্ত অবস্থাতেই কাজ করে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা পর্যাপ্ত ঘুমের কথা বলে থাকে এবং অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞানীরাও স্বপ্নের মাধ্যমে সমাধান করেছে জটিল সব সমস্যা। এছাড়াও স্বপ্ন দেখার আরেকটি কারণ হল মস্তিষ্ককে সতেজ রাখা। আমাদের মস্তিষ্ক যাতে ঘুমের মধ্যে সতেজ এবং কর্মক্ষম থেকে শরীরের অন্যান কাজ সঠিকভাবে করতে পারে তাই উত্তেজক সব স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্কের লাখ লাখ নিউরন সেলকে সতেজ রাখা হয়ে থাকে। স্বপ্ন নিয়ে এসকল তত্ব সত্য হলেও ঠিক কি কারণে মানুষ স্বপ্ন দেখে তা এখনো অজানা। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতি তে খুব শিগগিরই এই রহস্যের উদ্ঘাটন হবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা।