বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ 

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:৩৫ এএম, ২০ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার

আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘স্টেপ উইথ রিফিউজি’। আর এমন সময় দিবসটি পালিত হচ্ছে, যখন বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে শরণার্থীর সংখ্যাও। বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা চাপ নিয়ে দিবসটি পালন হবে।

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ছয় কোটি মানুষ শরণার্থী। এটি এযাবৎ কালের শরণার্থী সংখ্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড। মূলত যুদ্ধ, জাতিগত সন্ত্রাসই সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ। বাংলাদেশেও জাতিগত সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নিয়েছে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী। এই আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো জানায়, তারা দ্রুত নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। একটি স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে ফিরে গিয়ে মাতৃভূতিতে নিশ্বাস ফেলতে চায় রোহিঙ্গারা। তারা এই দেশের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে আমাদের দেশ রাখাইনে ফিরে যেতে চাই। এজন্য আমাদেরকে সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা,  মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নিয়ে শিগগিরই আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ সরকার।’

১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামেনি এখনও। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে এদেশে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে তাদের ব্যাপক আগমন ঘটে। রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণভয়ে পালিয়ে আসে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছে। উখিয়া ও টেকনাফে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে সরকার।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘যতই সাহায্য সহযোগিতা পাই না কেন, ভিন দেশে কি কারও ভালো লাগে? এই রোহিঙ্গা বস্তিতে কোনও রকম থাকলেও মনটা রাখাইনে চলে গেছে। কবে আমরা আমাদের দেশে ফিরতে পারবো সে আশায় আছি। জানি না আল্লাহ আমাদের ওপর কতটুক সহায় হন। আমরা এখনও স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যেতে।’

এমন শরণার্থী ক্যাম্পের জীবন চান না রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু মাঝি, ফয়েজ মাঝি, উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুর মোহাম্মদ, সুফিয়া বেগম টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের দুদুমিয়া ও নয়াপাড়া ক্যাম্পের শফিউল্লাহসহ সচেতন অনেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘শুধু, শরণার্থী দিবস পালন করলেই হবে না। রোহিঙ্গারা একটি স্থায়ী সমাধান চায়। তারা চায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হোক, যাতে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়। তারা আর বাংলাদেশে বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। কক্সবাজারের বসবাসরত অধিকাংশ রোহিঙ্গাই স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। তারা মনে করে, আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।’

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াতেই আটকে আছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আমি মনে করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। তা না হলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান কোনও দিন হবে না।’

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের সব সংস্থা কেন্দ্রীয় ও ক্যাম্প পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করবে। তবে আইওএম যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে এবং তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাবে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের যে ঐতিহাসিক ভিত্তি, ঐতিহাসিক সম্পর্ক সেসব বিষয়গুলো নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’

কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। কারণ, আমাদের দেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি বিশাল বোঝা। আমরা বিভিন্ন কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছি না। আমরা চাই, বিশ্ববাপী শরণার্থী সমস্যার সমাধান হোক।’