খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ সালমান জড়িত: জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৫০ পিএম, ২০ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানসহ জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার আলামত পেয়েছে জাতিসংঘ।
বুধবার সংস্থাটির বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডবিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড দাবি করেছেন, পর্যাপ্ত বিশ্বাসযোগ্য আলামত বিশ্লেষণের পর খাশোগি হত্যাকাণ্ডে বিন সালমানসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তারা জড়িত বলে নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় তিনি যুবরাজ ও তার ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছেন। এছাড়া খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের তদন্তের মুখোমখি হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
ক্যালামার্ড বলেছেন, ‘জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি পূর্বপরিকল্পিত ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ডের দায় সরাসরি সৌদি সরকারের।’
গেল বছরের ২ অক্টোবর একজন তুর্কি নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গিয়ে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাশোগি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ ধ্বংস করে দেয়ার জন্য তার মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেঁটে এসিড দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
প্রথমে রিয়াদের পক্ষ থেকে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করা হলেও তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করতে থাকে। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ওঠে। এক পর্যায়ে খাশোগি কনস্যুলেট ভবনে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে এ হত্যার সঙ্গে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। রিয়াদ দাবি করে যে, কিছু ‘স্বেচ্ছাচারী’ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
খাশোগি হত্যার ঘটনায় ১১ জন সন্দেহভাজনকে বিচারের মুখোমুখি করার কথা জানিয়ে আসছে সৌদি সরকার। তবে তাদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে অত্যন্ত গোপনে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি শুনানি হয়েছে।
তবে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি মিস ক্যালামার্ড ছয় মাস ধরে চালানো তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করে আবারো ওই হত্যাকাণ্ডে সৌদি আরবের তরুণ ও প্রভাবশালী যুবরাজের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিলেন।
এর আগে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রধান জিনা হ্যাসপেল তার সংস্থার তদন্তের জের ধরে হোয়াইট হাউজকে জানিয়েছিলেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের নির্দেশ ছাড়া খাশোগির হত্যাকাণ্ড সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া, তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনী বহু তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে শুরু থেকেই বলে এসেছে, বিন সালমানের সরাসরি নির্দেশে খাশোগি নিহত হয়েছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিন সালমানের সঙ্গে করা হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি রক্ষার স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে নীরবতা পালন করছেন।
এদিকে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের এ প্রতিবেদন বরাবরের মতোই প্রত্যাখান করেছে সৌদি সরকার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটা নতুন কিছু নয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই মানবাধিকার পরিষদের দূত বারবার প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনে অনেক স্পষ্ট দ্বন্দ্ব এবং ভিত্তিহীণ অভিযোগ রয়েছে যা এর গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।