বাস্তুচ্যুত মানুষ সাত কোটি ছাড়িয়েছে: জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:০৬ পিএম, ২০ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার
যুদ্ধ, নিপীড়ন এবং সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২০১৮ সালে ৭ কোটি ছাড়িয়েছে। এসব বাস্তুচ্যুতদের তিনটি বড় দলে পৃথক করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বুধবার তাদের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রথম দলটি হচ্ছে শরণার্থী, যার মানে হচ্ছে সেসব মানুষ যারা সংঘর্ষ, যুদ্ধ ও নিপীড়নের কারণে নিজের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫৯ লাখে পৌঁছেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৫০০, ০০০ বেশি। এই সংখ্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ৫৫ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী যারা জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির অধীনে সেবা পাচ্ছেন।
দ্বিতীয় দলটি হচ্ছে আশ্রয় প্রার্থী সেসব মানুষ যারা নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা গ্রহণ করছেন কিন্তু শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার আবেদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা ৩৫ লাখ।
তৃতীয় এবং সর্ববৃহৎ দলটি হচ্ছে সেসব মানুষ যারা নিজ দেশের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত, যাদের সংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ। এ দলটিকে সাধারণত আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ বলা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য যে পরিমাণে সমাধান পাওয়া যাচ্ছে এর চেয়েও বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সামগ্রিক বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ। শরণার্থীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সমাধান হছে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারা। অন্যান্য সমাধানের মধ্যে রয়েছে আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকরণ অথবা তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরিত হওয়া। কিন্তু ২০১৮ সালে মাত্র ৯২ হাজার ৪০০ শরণার্থীকে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে। ৫৯৩, ৮০০ জন শরণার্থী নিজ দেশে ফিরে যেতে পেরেছেন, এবং ৬২, ৬০০ জন স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, প্রতিটি শরণার্থী পরিস্থিতির সঙ্গে, যেখানেই হোক না কেন, যতদিন ধরেই চলুক না কেন, সেখানে সমাধানের ওপর জোর দেয়া অব্যাহত থাকতে হবে এবং মানুষের নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো সরাতে হবে।
‘এটি একটি জটিল কাজ যেখানে ইউএনএইচসিআর অব্যাহতভাবে জড়িত আছে, তবে এক্ষেত্রে সবার মঙ্গলের জন্য সব দেশকেই একত্রিত হতে হবে। এটা আমাদের সময়কালের বৃহৎ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম।’
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস গ্লোবাল ট্রেন্ড রিপোর্টের বিষয়ে বলতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদাকে বাংলাদেশের প্রতি আরো সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে বলেন।
তিনি আরো বলেন, আজকে প্রকাশিত এই সংখ্যাগুলো আবারো প্রমাণ করে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা যারা নিজের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল তাদের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের উদারতা।
স্টিভেন করলিস বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য ২০১৯ সালের প্রথম দিকে প্রস্তাবিত জয়েন্ট রেস্পন্স প্ল্যান রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন মেটাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাংলাদেশিদের সাহায্য করতে ৯২ কোটি ডলার চেয়েছিল। আজ অবধি, সেই আবেদনের এক চতুর্থাংশেরও কম পরিমাণ অর্থায়িত হয়েছে।
এটা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় বিশেষ করে আমরা যখন ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং বর্ষা মৌসুমের দিকে প্রবেশ করছি যেখানে উচ্চ বাতাস ও ভারি বৃষ্টি শরণার্থীদের বাসস্থানকে প্রায় প্রতিদিনই ক্ষতির ঝুঁকিতে রাখে।
জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য দিতে এবং শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণের জীবনমানকে উন্নত করতে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর জন্য দরকারী অর্থায়নের ব্যাবস্থা অবশ্যই চলমান রাখতে হবে।