ডিজিটালে রূপ নিচ্ছে বিমানবন্দর সড়ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৪৪ এএম, ২১ জুন ২০১৯ শুক্রবার
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বা চীনের সাংহাই শহরের মতো রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কও রূপ নিচ্ছে ডিজিটালে। বনানী লেভেলক্রসিং থেকে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কে ডিজিটাল সেবার সুবিধা রেখে অবকাঠামো স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে। সড়কের পাশে থাকছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসহ ১০টি যাত্রী ছাউনি। এছাড়া এই ছয় কিলোমিটার সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন ফ্রি ইন্টারনেট।
বুধবার বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণ শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় মতো কাজ শেষ করতে। ফুটপাথে লোহার শিকল দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে। ইট-পাথরের সুড়কি দিয়ে নানা আলপনাও করা হয়েছে ফুটপাতে। আগের সড়ক বাতি বদলে লাগানো হয়েছে এলইডি বাতি। পাশাপাশি ১০টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনিও বসানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে কুর্মিটোলা হাসপাতালে সামনে, শ্যাওড়ায়, খিলক্ষেতে, বিমানবন্দরের আগে কাউলায় ও বিমানবন্দর মোড়ে হচ্ছে দু’টি করে ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি।
এসব যাত্রী ছাউনিতে থাকছে এলইডি টিভি, ওয়াইফাই, এটিএম বুথ, মোবাইল রিচার্জ, ওয়াশরুম এবং কয়েন দিয়ে পণ্য কেনার আধুনিক সুবিধা। থাকছে নামাজ পড়ার কক্ষ, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পৃথক জায়গা ও ফ্রি বিশুদ্ধ পানির সুবিধা।
এছাড়া থাকবে ডিজিটাল ডাস্টবিন বক্স। যেখানে ময়লা ফেললেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চলে যাবে নিচে। থাকবে ডিজিটাল বোর্ড। এতে নির্দেশনা দেয়া থাকবে কোন বাস কোথায় যাবে, সময়সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের এ প্রকল্পে রাস্তার দু’পাশে থাকছে দৃষ্টিনন্দন বাগান, স্মৃতিস্তম্ভ, ঝরনাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। যার জন্য বনানী মোড়ে চলছে ফুল গাছের চারা লাগানোর কাজ। ডিজিটাল এলইডি বোর্ডে সবসময় বিভিন্ন ধরনের উপদেশমূলক লেখা প্রদর্শন করা হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ছয় কিলোমিটার সড়কে ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগিয়ে সবুজ সড়ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। দেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ লাগানো হবে। সারা বছরই ফুলে শোভাবর্ধন করবে এখানে। এ ছাড়াও সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি কৃত্রিম ঝরনা বসানো হবে।
এরই মধ্যে সড়কটির সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য বনানীতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কুড়িলে একটি সাব-কন্ট্রোল রুম ও অভিযোগ কেন্দ্র থাকবে। সড়কটির দেখাশোনার দায়িত্বে সার্বক্ষণিক থাকবে ৩০ জন গার্ড। ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সওজের ১০ বছরের চুক্তি হয়েছে। ১৫০০ সিসি ক্যামেরায় পুরো সড়ক তদারকির আওতায় থাকবে।
এ ব্যাপারে জনপদ অধিদফতরের ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের মত করতেই ডিজিটাল এ সড়কটি তৈরির কাজ চলছে। তিনি বলেন, ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটিই হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল-সবুজ সড়ক। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত স্থানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিজেদের বিজ্ঞাপন দেবে এবং ১০ বছর তারা এটা দেখাশোনা করবে।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এ সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ করছে ‘ভিনাইল ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে এ টাকা সরকারের দিতে হচ্ছে না। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে এই খরচ তুলে নেবে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এ সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়, যা চলতি মাসেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।