শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা জাতিসংঘের
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:১০ এএম, ২১ জুন ২০১৯ শুক্রবার
সফলভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাগত দক্ষতা ও নিয়মানুবর্তিতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মিশনের ফোর্স কমান্ডাররা। তারা বাংলাদেশকে ‘সবচেয়ে বিশ্বস্ত, সহায়তাকারী ও উদার’শান্তিরক্ষীর দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘের সামরিক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস লয়টের নেতৃত্বে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসমূহের ফোর্স কামান্ডাররা বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন পরিদর্শনের সময় এ কথা জানান।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন জানায়, জাতিসংঘ সদরদফতরে ১৭-২১ জুন চলতি ‘১৭তম হেড অব মিলিটারি কমপনেন্ট কনফারেন্স’ এর অংশ হিসেবে মিশনের ফোর্স কমান্ডাররা বাংলাদেশ মিশন পরিদর্শনে আসেন। জাতিসংঘে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ ৩৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলে শান্তিরক্ষা মিশনসমূহের ১২ জন ফোর্স কমান্ডার ছিলেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সুনাম এবং জাতীয়ভাবে অর্জিত বাংলাদেশের সু-অনুশীলনসমূহ সমন্ধে জানতে ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ সদরদফতর ফোর্স কমান্ডারদের প্রতিনিধিদল পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশ মিশনকে নির্ধারণ করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। তিনি অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ব্যাপক অবদানের কথা তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধিসহ আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ ও ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ জাতিসংঘের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা,টেকসই শান্তি ও পিস্বিল্ডিং কার্যক্রমে বাংলাদেশের নিবিড় অংশগ্রহণ বিশেষ করে পিসকিপিং মিনিস্ট্রিয়াল, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিশেষ কমিটি (সি-৩৪); নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২০০০ সালে গৃহীত রেজুলেশন ১৩২৫, রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট (আর২পি) এজেন্ডাসহ জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিসকিপিং (এ৪পি) ইনিশিয়েটিভ-এ বাংলাদেশের তাৎপর্যপূর্ণ ও ফলপ্রসূ অবদানের কথা তুলে ধরেন।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যৌন নির্যাতন ও এর অপব্যবহার রোধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরুল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুসহ জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত চ্যালেঞ্জসমূহ বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে বলেও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন,জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সামনের সারির একটি দেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৮১ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন ১ হাজার ৬১৬ জন নারী সদস্য। আর বর্তমানে ১০টি মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন ৬ হাজার ৫০০ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় এ পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন ১৪৬ জন আর আহত হয়েছেন ২২৭ জন।
এছাড়া বিগত ত্রিশ বছরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্যমণ্ডিত অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিকগুলোর কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিষয়ক দুটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
তথ্যসমৃদ্ধ চমৎকার আয়োজন ও আতিথেয়তার জন্য শান্তিরক্ষা মিশনসমূহের ফোর্স কামান্ডারসহ প্রতিনিধিদলের সব সদস্য বাংলাদেশ মিশনকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাসহ জাতিসংঘ সদরদফতরে কর্মরত বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা।