বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিশু-কিশোরীদের স্ত্রী হিসেবে কিনতে পাওয়া যায় যেখানে

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ২১ জুন ২০১৯ শুক্রবার

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো কিছু কুপ্রথা ও অমানবিক রীতিনীতি চালু আছে যা সর্বজননিন্দীত। আর এমনই এক বর্বর প্রথা চালু আছে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে, যেখানে ‘মানি ওয়াইফ’ বা অর্থের বিনিময়ে অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়েদের স্ত্রী হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়!

বিশেষত দেশটির ক্রস রিভার রাজ্যের অবানলিকু অঞ্চলের বিসিভ গ্রামের আদিবাসীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। ওই সম্প্রদায়ের নাম অনুসারে তাদের গ্রামের নামও বিসিভ দেয়া হয়েছে। প্রাদেশিক রাজধানী ক্যালাবার থেকে সড়কপথে সেখানে যেতে প্রায় আট ঘণ্টা সময় লাগে। সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাদের ‘মানি ওয়াইফ’ বা ‘স্ত্রী ক্রয়’ প্রথার কথা প্রকাশিত হলে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।               

অবুধা পর্বতের ছায়াতলে বেড়ে ওঠা এই গ্রামকে বলা হতো ঘুমন্ত গ্রাম। কিন্তু সেখানেই যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এমন মর্মান্তিক দাসত্ব প্রথা। যেখানে কন্যাদের মাত্র ৫-৬ বছর বয়সে তাদের পিতা-মাতারা বয়জ্যেষ্ঠ কোনো পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। 


 

 

 

মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র টাকা-পয়সার লোভে পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদেরকে এমন অন্ধকার পথে ঠেলে দিচ্ছেন। যদিও আদিবাসী নেতারা বিষয়টি এখন আর চালু নেই মর্মে দাবি করছেন, কিন্তু দেখা গেছে, স্বয়ং গোত্রপতিরাই এখনো একাধিক অপ্রাপ্তবয়স্কা স্ত্রী গ্রহণ করে বসে আছেন।

পাঁচ বছর বয়সী মিরাকেলের ‘মানি ম্যারিজ’ সম্পন্ন হয়েছিল কিছুদিন আগে। বিয়ের পর তার উপর স্বামীর পৈশাচিক যৌন নির্যাতন নেমে এসেছিল। কিন্তু তার সৌভাগ্য; স্থানীয় একটি মিশনারি সংস্থার সহায়তায় তিনি তার স্বামীর হাত থেকে মুক্ত হতে পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি একটি মিশনারি সংস্থার সঙ্গে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, আমি নিজেই একজন জ্বলন্ত প্রমাণ যে, এখনো ‘মানি ম্যারেজ’ চালু আছে।

মিরাকেলের বিয়ের ঘটনাটি অনেক বেশি মর্মান্তিক। কেননা তার বড় বোনকেও সেই লোক স্বল্প বয়সে টাকার বিনিময়ে বিয়ে করেছিল। মিরাকেলের বিয়ের পর সেই বোনকে তালাক দিয়ে দেয় তার স্বামী। অর্থাৎ তাকে তার বড় বোনের সাথে ‘পরিবর্তন’ করে মাত্র। এক্ষেত্রে সেই স্বামীর অজুহাত, মিরাকেলের বড় বোন সন্তান উৎপাদনে অক্ষম, তাই মিরাকেলের পিতা-মাতাই তাকে তার বড় বোনের স্বামীর হাতে তুলে দেন।

 

এরকম আরেক দুর্ভাগা যুবতীর নাম রোজ ইনিয়েতি। যদিও তিনি নয় বছর আগে তার কথিত ‘মানি হাজবেন্ডের’ হাত থেকে উদ্ধার হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমার বয়স যখন মাত্র ৭ বছর, তখন আমার বাবা মারা যান। এরপর আমার বয়স ১০ বছরে উপনীত হলে আমার মা আমাকে টাকার বিনিময়ে বিয়ে দেন। পরবর্তীতে একটি মিশনারি সংস্থা আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।  

আরেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এসব মেয়েরা বিয়ের পর প্রায় সব প্রকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। কেননা তাদের বাজারে পণ্য বেচা-কেনার মতো করে বিনিময় করা হয়; অনেক সময় পুরস্কার হিসেবে আদান-প্রদান করা হয়। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে আদিবাসী তরুণী ডরথির জীবনে। 


 

 

ডরথি জানান, পিতা-মাতা ও স্থানীয় লোকজন মিলে তাকে একজন পুরুষের কাছে তুলে দিয়েছিল। সেই লোক তাকে ঘুমানো ব্যতীত আর কোনো কাজে লাগাতো না। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন। সেই দুর্বিষহ স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, লোকটি বললো, সে আমার সাথে ঘুমাবে। কিন্তু আমি বললাম, সম্ভব নয়। কেননা তার সন্তানরাও আমার থেকে বয়সে বড়। এ কথা বললে সে আরো লোকজন লোক জড়ো করলো এবং আমাকে তার সঙ্গে ঘুমাতে বাধ্য করলো।

 

‘তিনজন পুরুষ ও একজন নারী আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে সেই লোকটির সাথে শুইয়ে দেয়। আমি সেই রাতেই গর্ভবতী হয়ে পড়ি। তখন আমার বয়স ১২ বছরও অতিক্রম করেনি। এই বয়সে গর্ভবতী হওয়া যেকোনো নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডরথি-মিরাকেলের মতো আরও অসংখ্য নারীর জীবনের গল্পটা এমন নির্মম। একই ঘটনা ঘটেছে হ্যাপিনেসের জীবনেও। তার বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর, তখন  তাকে অর্থের বিনিময়ে পা ফিলিপস নামের একজন পুরুষের সাথে বিয়ে দেয় হয়। কিন্তু বিয়ের পর তার উপরে নেমে আসে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তাকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয় এবং সেখানে তার ওপর নিয়মিত যৌন নির্যাতন চালানো হয়।