শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জানেন কি, শিশুর সুন্দর জীবনের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে ঘুমেই!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৫৩ এএম, ২২ জুন ২০১৯ শনিবার

শিশুদের ঘুমকে অনেকেই বেশি গুরুত্ব দেন না। কিন্তু জানেন কি, আপনার শিশুর সুন্দর জীবনের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এই ঘুমেই। শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, তাদের শরীরে লেপটিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। এই হরমোনের কাজ হল খিদে নিয়ন্ত্রণ করা। এর ক্ষরণ কমে গেলে, মস্তিষ্ক শরীরকে খিদে নিয়ন্ত্রণ করার সিগন্যাল পাঠাতে পারে না। ফলে বাচ্চারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেতে থাকে।ফলে সৃষ্টি হয় এই সমস্যা। এটি শুধু যে শারীরিক সমস্যারই জন্ম দেয় না, একই সঙ্গে মানসিক সমস্যাও ডেকে আনে।

কোন বয়সে কতটা ঘুম জরুরি
> ০-৩ মাসের বাচ্চাদের জন্য দিনের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এই সময়টা তাকে ঘুমাতে দেয়া খুবই দরকারি। মায়ের সঙ্গে তার বন্ধনটাও এই সময় তৈরি হয়। সেটাও ঘুম কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। জেগে থাকার সময়টাও যেন সকালের দিকে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।

> ৪ থেকে ১১ মাস বয়সি বাচ্চাদের জন্য দিনের মাথায় ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুম দরকার। এই সময় থেকে ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া দরকার। প্রতিদিন যেন শিশু একই সময়ে ঘুমায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এসময় তাকে একা ঘুমানোর অভ্যাসটাও শুরু করুন।

 

> ১ থেকে ২ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন ১১ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুমাতে দেয়া উচিত। এই বয়সে রাতে ভয় বা দুঃস্বপ্ন দেখাটাও খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তবু নির্দিষ্ট সময় তাকে একা ঘুমাতে দেয়া উচিত। কারণ এই বয়সেই সামাজিক বোধগুলো জন্মাতে শুরু করে। ঘুম কম হলে যা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

> ৩ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমাতে দেয়া উচিত। খেয়াল রাখুন ঘুমের সময় যেন নড়চড় না হয়। আর শিশুর শোয়ার ঘরে টেলিভিশন একদমই রাখবেন না।

> ৬ থেকে ১১ বছরের বাচ্চাদের ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুম দরকার। এসময়ে শোয়ার ঘর থেকে টেলিভিশন এবং কমপিউটার দূরে রাখা উচিত।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে যে যে সমস্যাগুলো হয়
১. পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ রোধ হতে পারে। যা ভবিষ্যতের জন্য খুবই সমস্যার।

২. শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের ক্ষরণ শুধুমাত্র ঘুমের সময়ই হয়। ঘুমে টান পড়লে শিশুর বৃদ্ধির হারও কমে যায়।

 

৩. কম ঘুমালে শরীরে লেপটিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। যা হল খিদেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দরকারি হরমোন। এই হরমোনের অভাবে খিদের উপর আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ফলে শিশু বেশি খায় এবং ওজন বাড়তে থাকে।

৪. কম ঘুমালে শিশুর শরীরে কোর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এতে শিশু মানসিক ভাবে খুব চাপে থাকে এবং নতুন কিছু শেখার প্রতি তার আগ্রহ কমে যায়।

৫. কম ঘুমালে শিশুর শরীর ক্লান্ত থাকার কারণে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে অল্পতেই ঠান্ডা লাগা বা অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়।

সঠিক পরিমাণে ঘুমালে শিশুর যে যে উপকার হয়
শেখার ক্ষমতা বাড়ে : যে শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমায়, তার শেখার ক্ষমতা বাড়ে। খুব সহজেই সে নতুন কিছু শিখতে পারে। একদম ছোট বয়স থেকেই তাদের মধ্যে মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও এই দলের শিশুদের বেশি পারদর্শী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি পরবর্তী সময়ে এই দলের শিশুরা পড়াশোনাতেও বেশি মনোনিবেশ করতে পারে। মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষেত্রে এরা অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে।

 

দ্রুত বৃদ্ধি: ঘুমালে শিশুর শরীরে সেই সব হরমোনের ক্ষরণ হয়, যেগুলো তার বৃদ্ধিতে কাজে লাগে। তাই যে শিশু যত বেশি ঘুমায়, সে তত তাড়াতাড়ি বাড়ে। এমনকি তার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম ঘুমানো শিশুদের থেকে বেশি। কারণ পর্যাপ্ত ঘুম বাইরের জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরকে তৈরি করে তোলে। পরবর্তী সময়ে এই শিশুরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।

মন ভালো থাকে : যে সব শিশুরা পর্যাপ্ত ঘুমায় তাদের শরীরে এনার্জি বা শক্তির পরিমাণ অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি হয়। ফলে তারা একেবারেই ঘ্যানঘ্যানে হয় না। বরং তাদের মেজাজ অন্য শিশুদের তুলনায় ভালো থাকে।  

মিশুকে স্বভাবের: যে সব শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমায় তারা সহজেই অন্যের সঙ্গে মিশতে পারে এবং নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো: যে সব শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমায়, তাদের হৃদযন্ত্রও শক্তিশালী হয়। পরবর্তী সময়ে বা বেশি বয়সে তাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যার আশঙ্কাও কমে।