শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ২৩ ১৪৩১   ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেখে নিন সালমান শাহ’র ভিজিটিং কার্ড

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:১৯ এএম, ২৩ জুন ২০১৯ রোববার

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা চিত্রনায়ক সালমান শাহ। পূর্ণদৈর্ঘ্যে চলচ্চিত্রে, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ক্যারিয়ার তার। হিসেবটা ৩ বছর ৫ মাস ১২ দিনের আর ২৭ টি চলচ্চিত্রের। এই স্বল্প সময়েই দেশ কাঁপিয়েছেন সালমান শাহ। তার বিদায়ের এতো বছর পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টেলিভিশনের প্রতিবেদন দেখলে বোঝা যায় কতটা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এ নায়ক। মানুষ এখনো তাকে নায়ক হিসাবে মনে করেন।

হঠাৎ তার রহস্য জনক আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন চলচ্চিত্র প্রেমীরা। তারপরেও অনেক নায়ক এসেছেন পেয়েছেন জনপ্রিয়তাও কিন্তু সালমানের যে উদ্ধমতা, ফল আর প্রভাব তার ধারের কাছেও কেই নেই। কেন জানি এক সিন্ধতা প্রভাব আর নিষ্পাপ ছায়া তার মুখ মন্ডলে। তাই হয়তো সালমান এখনো আগের মতোই প্রানবন্ত, উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে আছেন বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গনে।

প্রয়াত এই নায়ককে নিয়ে দর্শকের বাড়তি আগ্রহ বরাবরই দেখা গেছে। তার অগণিত ভক্তরা আজো প্রিয় নায়ককে খুঁজে বেড়ান তার কর্মের উপর। প্রিয় নায়কের স্মৃতি ধরে রাখতে ভক্তরা তার জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। অনেকে প্রিয় নায়ককে শ্রদ্ধা জানাতে তার কবর জিয়ারত করতে ছুটে সিলেটে। 

 

প্রিয় এই নায়ককে নিয়ে লিখলেও তার ভক্তদের বাড়তি আগ্রহের কোনো কমতি থাকে না। নায়কের লেখা চিঠি, ব্যবহার করা সানগ্লাস, কিংবা ছবি নিজের সংরক্ষণে রাখেন অনেকেই। তেমনই একজন সালমান শাহ ভক্ত নাহিদ ইমন। যিনি কিনা সালমান শাহ'র মতোই কপালে বাঁধেন রুমাল। বাড়ি ভর্তি সালমান শাহ'র ছবি। এমনকি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও সালমান শাহের ছবি দিয়ে অলঙ্কিত করে রেখেছেন তিনি।

সম্প্রতি তার ফেসবুক ওয়ালে দেখা গেল প্রয়াত এই নায়কের ভিজিটিং কার্ড। দুটি ভাগে বিভক্ত ভিজিটিং কার্ড এ দেয়া ছিলো নায়কের নাম, পেশা, টেলিফোন নাম্বার সহ আরো নানা তথ্য। ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, অমর নায়ক সালমান শাহ্'র ভিজিটিং কার্ড...!!!এটি আমাদের জন্য প্রিয় নায়কের রেখে যাওয়া অমূল্য স্মৃতি..! অনেকেরই অদেখা এই দুর্লভ জিনিসটি..!!বুকের ভেতর এই ভিজিটিংকার্ড টি অনেক যত্ন করে আগলে রেখেছেন সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহ ভাই।

 

 

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জের দারিয়া পাড়ায় নানার বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন সালমান শাহ। পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরীর পরিবারের বড় ছেলে সালমান। যদিও তার পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে ‘সালমান শাহ্’ বলেই পরিচিত ছিলেন।

সালমান শাহ্ মিডিয়ায় পদার্পন হানিফ সংকেতের হাত ধরেই। শুরুটা মিউজিক ভিডিও দিয়ে হলেও একে একে কাজ করেন বিজ্ঞাপন চিত্র ও নাটকে। কিন্তু চলচ্চিত্র জগতে সালমানের আসাটা ঠিক যেন এলাম দেখলাম আর জয় করলাম এর মতো। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ দেশের পেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল সালমান অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এতে সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনায় সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন সে সময়ের জনপ্রিয় মডেল মৌসুমী। শুরু হয় সালমানের পথ চলা।

 

 

শুরুতেই নড়ে চড়ে বসলেন বাংলার দর্শক। বক্স অফিসে হিটের তালিকায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এরপর একে একে মুক্তি পায়, ‘অন্তরে অন্তরে, স্নেহ, দেনমোহর, তুমি আমার (এই চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মত সালমানের বিপরীতে কাজ করেন শাবনূর), সেই থেকে জুটি হয়ে কাজ করেন ‘সুজন সখি, বিক্ষোভ, স্বপ্নের ঠিকানা, মহামিলন, বিচার হবে, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, জীবন সংসার, চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভিতর আগুন সহ মোট ১৪ টি চলচ্চিত্র। এছাড়া অন্যান্য মিলে সর্বমোট ২৭ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সালমান।

মাত্র ৩ বছর ৫ মাস ১২ দিনে ২৭ চলচ্চিত্র। কিন্তু বেশ শক্ত একটা জায়গা করে নিয়েছিল এ অভিনেতা। শুরুটা মৌসুমীর বিপরীতে হলেও কাজ করেন শাবনূর, শাবনাজ, লিমা, বৃষ্টি, শিল্পী ও শ্যামা সঙ্গে। এদের মধ্যে শাবনুরের সঙ্গেই ২৭ টি চলচ্চিত্রের ১৪ টিতে কাজ করেন।

 

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আব্দুর রহমান ও নায়ক রাজ রাজ্জাকের পরেই সালমান একমাত্র নায়ক যিনি সর্বমহলে তৈরি করেছিলেন তার গ্রহণযোগ্যতা। হয়ে উঠেছিলেন তরুনদের স্টাইল আইকন, তরুণীদের স্বপ্নের নায়ক। এতো কিছুর পরও পারিশ্রমিকের হিসাব কষতে বসেনি কখনো।

হঠাৎ করেই ১৯৯৬ইং সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনক না ফেরার দেশে পাড়ি জমান চির সবুজ এ নায়ক। ফিরে আর আসবেন না কখনোই তবুও সিনেমা প্রেমীদের কাছে সালমান বেঁচে থাকবেন স্বপ্নের নায়ক হয়ে।