যমুনায় বাড়ছে পানি গিলছে ঘর-বাড়ি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৪৩ এএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার
নদীতে জোয়ারের পানি আসার শুরুতেই যমুনায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা করলেও তা ঘূর্ণন স্রোতের তোড়ে যমুনায় ভেসে যাচ্ছে। ফলে বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইলের মামুদনগর ইউপির ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের শিকার হয়ে এরমধ্যে সহস্র্রাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, বৃষ্টির ঢলে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় মামুদ নগর ইউপির বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে পাউবো’র আপদকালীন তহবিল থেকে ১২টি স্প্যানের জায়গা নির্ধারণ করে প্রতি স্প্যানে তিন হাজার পিস করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জরুরি কার্যক্রম হিসেবে গত ১৭ জুন থেকে ওইসব স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনার বাম তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মামুদ নগর ইউপির সাতটি গ্রাম ভাঙনের শিকার হয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে- কুকুরিয়া, কেশব মাইঝাইল, মাইঝাইল, সোনা মাইঝাইল, বার বাড়িয়া, চালা বাকলা ও বানিয়াপাড়া। এসব গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ভাঙনের কবলে পড়ে পাট, ধান, বাদাম সহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি এরমধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসময়ের ভাঙনের শিকার হয়ে আরো পাঁচ শতাধিক পরিবার অনত্র চলে যায়। ভরা বর্ষায় যমুনার যৌবনী স্রোতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই গবাদিপশুসহ ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
ভাঙন কবলিত এলাকার আব্দুল হাই, করিম শেখ, জিন্নত সরকার, আ. সামাদ, রহম আলী সরকারসহ অনেকেই জানান, প্রমত্তা যমুনা সর্বগ্রাসী। প্রতিবছরই এ অঞ্চলের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি কেড়ে নেয়। মামুদ নগর ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের পুরোটাই বর্তমানে যমুনার পেটে। এ ওয়ার্ডের দুই হাজার ৭শ’ ভোটারের প্রত্যেকের পরিবারই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা নিজেরা অন্যত্র বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। দুইটি হাইস্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, গোরস্থানসহ অনেক প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পাঁচটি মসজিদ, তিনটি গোরস্থানসহ পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে।
কুকুরিয়া গ্রামের করিম শেখ জানান, তার নিজের এক খাদা(১৬ বিঘা) ফসলি জমি যমুনা গ্রাস করেছে। তিনি আগেই বাজারের পাশে বাড়ি করেছিলেন। বর্তমানে সেই বাড়িটিই তার একমাত্র সম্বল।
একই গ্রামের আবু সাইদ জানান, তাদের পরিবারের ১৫০ বিঘা জমি ছিল সবই যমুনার পেটে চলে গেছে। তিনি করটিয়ায় বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছেন। আসলে মাটির টান বড় টান। কাউকে যেন ঘর-বাড়ি হারাতে না হয়। তাদের সবার দাবি, কুকুরিয়া থেকে উজানে চার কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
তারা আরো জানান, বর্ষার শুরুতেই ভাঙন শুরু হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে ভাঙন কবলিত ৫৫০মিটার এলাকায় ১২টি স্প্যানে ৩৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলছে। পাউবো’র ধারণা ছিল, এতে পানির স্রোতের গতি পরিবর্তিত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে যাবে। পানির স্রোতের গতি কিছুটা পরিবর্তিত হলেও ওই স্প্যানগুলোর মাঝখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো স্প্যানের জিও ব্যাগ দেবে যমুনার তলদেশে চলে গেছে। ফলে জিও ব্যাগের অন্য স্প্যানগুলোও যমুনায় দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মামুদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাজেদুর রহমান তালুকদার জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙনে মামুদ নগর ইউপির মানুষ দিশেহারা। একদিকে যমুনার করাল গ্রাস অন্যদিকে ধলেশ্বরীর বিরামহীন ভাঙনে ইউপিবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। কুকুরিয়া থেকে উজানে চার কিলোমিটার এলাকাব্যাপী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলে যমুনার ভাঙন থেকে এ ইউপির মানুষ রেহাই পেত। তিনি দ্রুত ওই বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কুকুরিয়া থেকে উজানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হবে। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ওই এলাকায় ১২টি স্প্যানে ৩৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলার কারণে পানির স্রোতের গতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে গেছে। তবে দুই স্প্যানের মাঝে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় সেখানেও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আরো পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রাখা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সাহায্যে পাউবো সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।