সন্তান মুটিয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন করণীয়
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:৪৪ এএম, ৩০ জুন ২০১৯ রোববার
বর্তমানে শিশুরা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। খেলাধুলা ও নির্মল পরিবেশের ছোঁয়া না পাওয়ার কারণে শহুরে শিশুরা ক্রমেই মুটিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক জীবনে ব্যস্ততার ছায়া পড়েছে বাড়ির খুদে সদস্যটির উপরেও। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা গুণে পারদর্শী হয়ে উঠতে গিয়ে তাদের হাতেও সময় বড় কম। আর এই সময়ে ব্যস্ততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মা-বাবারা পড়েছেন ফ্যাসাদে। কখনো বা শিশুর ঘুম কমিয়ে দিতে হচ্ছে সিলেবাসের চাপে। ফলে স্ট্রেসজনিত হতাশা, মানসিক অসুখ গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ছে শিশুর জীবনে। আর এসব ডেকে আনছে শিশুর খাওয়ার অনিয়ম, কম ঘুম, অবৈজ্ঞানিক ডায়েট। ওবেসিটি বেড়ে যাওয়ার জন্য মূলত এসব কারণই দায়ী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুদের মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরাও এমন একটি পরীক্ষা করেন। এর আগেও ৩ থেকে ১২ বছর বয়সী হাজার খানেক শিশু নিয়ে এমনই আর একটি পরীক্ষা করেন এই ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। ২০১৭ সালে করা পরীক্ষাতেও ৩ বছর বয়সীদের জন্য টিভি দেখার সময়, খাওয়া, ঘুম সব নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। ওবেসিটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, এদের মধ্যে ৪১ শতাংশ শিশু শোওয়ার সময় মেনে চলত, ৪৭ শতাংশ নির্দিষ্ট সময় খেত ও ২৩ শতাংশ শিশু টিভি দেখার নিয়ম মানত। প্রায় ১১ বছর বয়সে দেখা যায় পরীক্ষারত শিশুদের মধ্যে ৬ শতাংশ ওবেসিটির শিকার। তারাই নিয়ম মানতে ব্যর্থ হয়েছে সার্বিকভাবে। এবারও প্রায় ১২ হাজার শিশুকে নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা যায়, নিত্য অনিয়মই তাদের ওজন বাড়িয়ে চলেছে হু হু করে।
ওবেসিটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চিকিৎসকরাও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘ছোটবেলা থেকেই শিশুকে নির্দিষ্ট নিয়মে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। মা-বাবাকেও মানতে হবে কিছু নিয়ম। রান্না করতে ইচ্ছে করছে না বলে শিশুকে যথেচ্ছ সাপ্লিমেন্ট বা হেলথ ড্রিঙ্ক খাইয়ে রাখা, কিংবা যখন তখন বায়না করলেই চকোলেট দিয়ে বায়না মেটানো, ঘুম থেকে তুলে পড়তে বসানো এ সব অভ্যাস বদলাতেই হবে। ওবেসিটি নিয়ে প্রথম থেকে না ভাবলে তা বড় সমস্যায় ফেলবেই। তাই কিছু নিয়ম প্রথম থেকে মানা উচিত।’
খাওয়া: পুষ্টিবিদের কাছে যান শিশুকে নিয়ে। ওর নির্দিষ্ট বয়সে ডায়েট চার্ট ঠিক কেমন হবে তা মেনে চলুন তাদের পরামর্শ মতো। ডায়েট মানেই শিশুর সব প্রিয় খাদ্য বাদ, এমন নয়। চাইল্ড ডায়েটে চকোলেটও থাকে। তাই ভয় নেই।
স্ট্রেস: মানসিক চাপ বাড়তে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ করবেন না। সকলের মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি সমান হয় না। পড়াশোনা দিয়েই যে বড় হতে হবে এমনো নয়। বরং ওর আগ্রহের জায়গা খুঁজে বার করুন। সেটাতেই জোর দিন। অনেক অভিভাবক বুঝেই উঠতে পারেন না সন্তান কিসে আগ্রহী। অন্য কারো সঙ্গে কখনো তুলনা করবেন না।
ফাস্ট ফুড: বায়না মেটাতে যখন তখন বাড়িতেই নুডলস বা ফ্রোজেন ফুড এনে বানিয়ে দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তাতে রাশ টানুন। প্যাকেটবন্দি সুপ ও ঠান্ডা পানীয়ও এড়িয়ে চলুন। এসবে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও সোডিয়াম ফ্যাট বাড়াবেই বাড়াবে। একান্তই না পারলে হাত-রুটি, মুড়ি, ওটস, চিঁড়ের পোলাও, সপ্তাহান্তে একটু-আধটু লুচি এ সবে আস্থা রাখুন। নিয়ন্ত্রণ রেখে মিষ্টিও দিতে পারেন।
চকোলেট: বায়না মেটাতেই হোক বা খুদে দস্যিকে শান্ত রাখতেই হোক, সব সময় কথায় কথায় চকোলেট একেবারে নয়। দাঁতের ক্ষতি তো বটেই ওজনও হু হু করে বাড়তে পারে এতে। সপ্তাহে দু’টির বেশি চকোলেট বার (ছোট বা মাঝারি আকারের) দেবেন না। তাও যদি ডার্ক চকোলেট হয়, তো খুবই ভাল।
ফ্রিজের জল: ফ্রিজ খুলেই ঢকঢক করে ঠান্ডা জল নিজেও খাবেন না, বাচ্চাকেও দেবেন না। ঠান্ডা জল ওবেসিটির জন্য খুব দায়ী। এই অভ্যাসকে একেবারেই প্রশ্রয় নয়।
পর্যাপ্ত জল: শরীরে জলের অভাব হলে শরীরও সুযোগ বুঝে জল জমিয়ে রাখবে। এতেও শরীর ফোলে। তাই শিশুকে নিয়ম করে জল খাওয়ার অভ্যাস করান।
ভাত কম: সারা দিন ভাত পেটে পড়ল না বলে কান্নাকাটি করবেন না। ভাত কম খেলেই ‘ও কিছু খায় না’ বলে অকারণ দুশ্চিন্তাও নয়। ছোট থেকেই ভাত কম দিন। না দিলেও ক্ষতি নেই। ভাতের জায়গায় দু’-একটি রুটি খাক। ভাত খেলেও পরিমাণে কম দিয়ে সেই খিদে মেটান তরিতরকারি, মাংস, মাছ, পনির, দুধ, টক দই এ সব দিয়ে।
শরীরচর্চা: শুধু পড়াশোনা আর অন্যান্য গুণে দক্ষ করে তুলতে গিয়ে ওর ছুটোছুটি করার সময়টা কেড়ে নেবেন না। খেলার মাঠ সে ভাবে না থাকলে বা খেলার সঙ্গী না পেলে যে কোনও যোগাসন ক্লাসে বা সাঁতারে ভর্তি করে দিন। এটাকেও পেশার মতো নিয়ে নেবেন না। হালকা চালেই অভ্যাস চলুক, স্রেফ শরীর ঠিক রাখতে।