বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অসম্মানের অপর নাম বডি শেমিং

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার

কোন দোকানের চাল খাও, কোরবানির খাসির মতো মোটা? 
তুমি এত শুকনা কেন, আবার শাড়ি পরো, মনে হয় কাঠির সঙ্গে জড়ানো লম্বা কাপড়! 
কোনো ভালো মেয়ে এভাবে হাসে অথবা হিজড়াদের মতো হাঁটো কেন?  
কালো-ফর্সা, বেটে-লম্বা নিয়েও অনেক বাজে টিপ্পনী করা হয়।

 

আমরা এই কথাগুলোর সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। কাউকে হয়ত মজা করে হাসি-ঠাট্টার ছলেই বলা হয় সিরিয়াস কিছু না ভেবেই। তবে যাকে বলা হয়, তার জন্য বিষয়টা কতটা অপমানের এটা কি বোঝার চেষ্টা করেছি কখনো? 


ফিগার সচেতনতার নামে আধুনিক সমাজে অন্যকে হেয় করার যেন এক ধরনের বাজে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। 

বন্ধু-আত্মীয় বা কলিগ যেই হোক এভাবে হেয় করে কথা বললে কখনোই সে প্রিয় থাকতে পারে না। এই বোধটাও খুব জরুরি। আর যাকে প্রতিনিয়ত কথাগুলো বলা হয়, তার জন্য এটা অপমানজনক, এতে করে দেখা দিতে পারে হতাশা তিনি ভুগতে পারেন হীনম্মন্যতায়। 

বডি শেমিং করে অনেকেই চান প্রিয়জনের জীবনে ভালো পরিবর্তন আনতে। কিন্তু মানুষকে অপমান করে কি শোধরানো সম্ভব? এসব করে তার তো লাভ খুব একটা হয় না। বরং বডি শেমিং-এর শিকার হয়ে তিনি অনেক সময় জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। যার পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। 

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই আমেরিকাতে প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন চেহারা সুন্দর করতে এবং স্তনের আকৃতি বৃদ্ধি করতে। এরসঙ্গে ছেলেদের জন্য রয়েছে সিক্সপ্যাক ফিগার, মেয়েদের বিজ্ঞাপনের মডেলের মতো স্কিন, কালার, ফিগার। 

কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন, বিজ্ঞাপনে যে ছবিগুলো আমরা দেখি, তা প্রথমে কয়েকঘণ্টায় মডেলকে মেকআপ করা হয়। অনেক লাইটের ব্যবহার হয় ছবি তোলার সময়। ছবি তোলেন দেশের নামকরা ফটোগ্রাফাররা, এরপর হয় আসল কাজ, মানে শত শত ছবির ভেতর থেকে বেছে নেওয়া হয় মাত্র কয়েকটি, এগুলোকে এডিট করা হয় যত্ন নিয়ে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে। এবার বলেন কতটুকু আসল সৌন্দর্য আমরা দেখি, আর সেই মরিচিকার জন্য নিজেদের নিয়ে থাকি হতাশায়? 

পাবর্তী আহমেদসহ কয়েকজন হিজড়া
আমাদের সমাজে সবথেকে বেশি অবহেলা-তুলনা করে কথা বলা হয় হিজড়াদের নিয়ে। 
ইঞ্জিনিয়ার পাবর্তী আহমেদ(হিজড়া)। তিনি দুঃখ করে বাংলানিউকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি এমন কথা। আমার সঙ্গে যখন কোনো বন্ধু হেঁটে যেত সে হয়ত হিজড়া নয়, কিন্তু তাকেও মানুষ গালি দিত হিজড়া বলে। হিজড়া মানব সমাজের বৈচিত্র্য অথচ তাকে ছোট করে আত্মসম্মানবোধে আঘাত দিয়ে বিকৃত আনন্দ নেয়ার চেষ্টা দেখি। এটা কষ্ট দেয়, অপমানিত বোধ করি। 

অন্যের কথা কান দেয়ার কিছু নেই, নিজেকে ভালো বাসুন। পৃথিবীর সবাই সুন্দর-মানুষের আসল সৌন্দর্য তার মনে। আর সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে তার আচরণে-কাজে।