ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে দারুচিনি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:০০ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
দারুচিনিকে আমরা মসলা হিসেবেই জানি। খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধে আলাদা মাত্রা এনে দিতে এর জুড়ি নেই। বিশেষ করে যেকোনো মাংস রান্নাতেই দারুচিনির গুঁড়ো কিংবা আস্ত দারুচিনি না দিলে তরকারির স্বাদই হয় না। তাছাড়া মিষ্ট জাতীয় কোনো খাবার যেমন: সেমাই, পায়েস, হালুয়া ইত্যাদি খাবারে দারুচিনি ব্যবহার না করলে সুন্দর একটা গন্ধ আসে না। শুধু রান্নাতে নয়, শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্য দারুচিনি অনেক উপকারি। দারুচিনি সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেষজ। দারুচিনিতে রক্তের শর্করার শোধকসহ অসাধারণ ওষুধি গুণাবলী রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং স্নায়ুবিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। দারুচিনির বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে দারুচিনি: দারুচিনি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।ডায়বেটিস রোগীদের জন্য দারুচিনি খুবই উপকারি। যারা টাইপ ২ ডায়বেটিসে ভুগছেন তাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী উপাদান হিসেবে দারুচিনি খেতেই পারেন। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুচিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া দারুচিনি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। আর এ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষত সারাতেও এ মসলা বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ওজন কমাতে দারুচিনি: যারা ওজন কমাতে চান তাদের খাবারের তালিকায় দারুচিনি রাখতেই পারেন। কারণ দারুচিনি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে ও হজমে সাহায্য করে। এ উপাদান দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ওজন কমানো নিয়ে যারা চিন্তিত তারা দারুচিনি খেতে পারেন। এমনকি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে দারুচিনি। যারা প্রতিদিন দারুচিনি খান তাদের স্মরণশক্তি তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দারুচিনি অবশ্যই খেতে পারেন।
এসিডিটির সমস্যা: প্রায় সব মানুষেরই এ সমস্যাটি কম বেশি রয়েছে। এ সমস্যাকেও দূর করতে পারে দারুচিনি। এটি পেটের জন্য ভীষণ উপকারি। এটি এসিডিটির সমস্যা দূর করে ও পেটের ব্যথা উপশম করে থাকে। এসিডিটি রোধ করতে মধুর সঙ্গে দারুচিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে দারুচিনি গুঁড়ো করে নিলে খেতে সুবিধা হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে দারুচিনি। এর নানাবিধ উপাদান দেহের ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধ করে থাকে। লিউকোমিয়া ও লিমফোমা ক্যান্সারের প্রভাব কমাতেও সাহায্য করে। সেই সঙ্গে বাত ও আস্টিওকোলেসিস দূর করতে পারে দারুচিনি। কারণ দারুচিনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ। যা হাড় গঠন, রক্ত ও শরীরের অন্যান্য কোষ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যাদের শরীরে খনিজ উপাদানের অভাব থাকে তাদের বাত ও আস্টিওকোলেসিসের সমস্যা হতেই পারে। প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ এ দারুচিনি খেলে বাত ও আস্টিওকোলেসিসের সমস্যা অনেকটাই দূরে চলে যাবে।
মাথা ব্যথা: দারুচিনি মাথা ব্যথাও দূর করতে পারে। যখন মাথা ব্যথায় খুব কষ্ট পান তখন যদি দারুচিনি দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে খান তবে মাথা ব্যথা নিমিষেই দূরে চলে যাবে। অনেকেই পেটের অসুখে ভুগে থাকেন। পেটের অসুখ বেশির ভাগই হয় ব্যাকটেরিয়াজনিত। ব্যাকটেরিয়াজনিত পেটের অসুখ থেকে বাঁচতে দারুচিনি খেতে পারেন। দারুচিনিতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান পেটে ব্যাকটেরিয়ার কারণে যেসব অসুখ হয়, তা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। দারুচিনির চা, তেল, গুঁড়ো ইত্যাদি পেটের বিভিন্ন সমস্যা থাকে বাঁচাতে সাহায্য করে। এক কথায়, পেটের যেকোনো অসুখ থেকে রক্ষা করতে পারে দারুচিনি।
এছাড়া দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান। যা শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির সমস্যা দূর করতেও দারুচিনি খুবই উপকারি। দারুচিনির তেল চুইনগাম, মিট চকলেট, মাউথ ওয়াশ, টুথপেস্ট তৈরি ব্যবহার করা হয়। কারণ দারুচিনি দাঁতের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে থাকে। ঠান্ডাজনিত রোগ, পেশি সংকোচনের কারণে ব্যথা ও শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করে দারুচিনি। খাদ্য বিষক্রিয়া থেকে আক্রান্ত হলে দারুচিনি খেলে অনেক উপকার পাবেন। এ মসলা পাকস্থলী ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দমনে সাহায্য করে। এমনকি ঠান্ডার কারণে গলা ব্যাথা বা খুসখুসে কাশিতে মধু চায়ের সঙ্গে দারুচিনি মেশালে আরাম পাওয়া যায়।