ব্রেনের যত রোগ ও চিকিৎসা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:০৪ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
মাইগ্রেন বা শিরপীড়া
মাথাব্যথা মানেই যে মাইগ্রেন তা কিন্তু নয়। মাইগ্রেন রোগের কিছু ভিন্ন লক্ষণ আছে যা সাধারণ মাথাব্যাথা থেকে আলাদা। এ রোগের উৎস ও উপসৰ্গ দুটিই আলাদা। অনেকেরই হয়তো হঠাৎ হঠাৎ মাথাব্যাথা উঠে। এই মাথাব্যাথা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। মাইগ্রেন প্রধানত তিন ধরণের। যথা- ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন, সাধারণ মাইগ্রেন ও ক্লাস্টার মাইগ্রেন।
ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন: এই ব্যথা শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন- বমি ভাব অথবা বমি হয়, চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি সমস্যা।
সাধারণ মাইগ্রেন: সাধারণ মাইগ্রেনের ব্যথা শুধু মাথার উপরি ভাগে হয়। বমি হওয়া, বমির ভাব হওয়া এই উপসর্গগুলো দেখা যায়। সাধারণ মাইগ্রেনের ব্যথায় আমরা মাত্র ৫০ ভাগ লোক আক্রান্ত হই।
ক্লাস্টার/জটিল মাইগ্রেন: মস্তিস্কের কাণ্ডের রক্ত সরবারাহ কমে যায় এবং কমে যাওয়ার ফলে এই উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- মাথা ঘোরা, কথায় জড়তা বা কথা বেজে পরা, চোখে ডাবল দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ
১. মাথার একপাশ বা উভয় পাশে তীব্রভাবে ব্যথা হয়।
২. কোনো ব্যথা ৩-৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং এই সময়ের মধ্যেই বড় তুলে শেষ হয়ে যায়।
৩. আবার কোনো কোনো ব্যথা সপ্তাহ ধরে থাকে।
৪. বমি-বমি ভাব বা ব্যাথা বেশি তীব্র হলে বমি পারে।
৫. দৃষ্টি শক্তির গোলযোগ হতে পারে।
খাবার ও চিকিৎসা
১. একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
২. যে স্থানে ব্যথা বেশি অনুভূত হচ্ছে, সেখানে বরফ বা ঠাণ্ডা সেক দিন।
৩. মাথার নিচে ও কাঁধে বালিশ রেখে হেলান দিয়ে থাকুন।
৪. যেখানে ব্যথা খুব তীব্র, সেখানেও বালিশ দিয়ে জোরে চাপ দিয়ে থাকতে পারেন।
মাথাব্যথা
প্রত্যেক মানুষেরই কম-বেশি মাথাব্যথা হয়। কিন্তু মাঝে মাঝেই মাথা এতটাই অসহনীয় পর্যায়ে পৌছে যায় যে, সেটা সহ্য করার ক্ষমতা মানুষ হারিয়ে ফেলে। তখন মাথাব্যথা কমাতে অনেকেই প্যারাসিটামল খেয়ে থাকে। কিন্তু সবসময় অতিরিক্ত প্যারাসিটামল গ্রহণে দেখা দিতে পারে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
রোগের কারণ
অপর্যাপ্ত ঘুম, টেনশন, অতিরিক্ত কাজের চাপ, প্ৰেশার কমে যাওয়া, শরীরে পুষ্টির অভাব, রোদ ইত্যাদি কারণে মানুষের মাথা ব্যাথা হতে পারে। এছাড়া টেনশন, পরীক্ষা বা চাকরির অত্যন্ত চাপ, মানসিক অশান্তি, বাস বা গাড়িতে অনেকক্ষণ যাত্রা করা।
রোগের লক্ষণ
১. হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হতে পারে।
২. মাথার মধ্যে দপ দপ করে।
৩. কখনো বমি হতে পারে।
৪. দুর্বলতা, নিম্ন রক্তচাপ, ঘুম না হওয়া কিংবা অত্যাধিক গরমের চাপেও মাথা ধরতে পারে।
খাবার ও চিকিৎসা
১. প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাবার অভ্যাস থাকতে হবে।
২. অপর্যাপ্ত ঘুম মাথাব্যথা কারণ হতে পারে।
৩. কাজের চাপ খুব বেশি হলে প্রতিদিন সকালে হালকা ব্যায়াম করুন। এতে মন সবসময় প্রফুল্ল থাকবে।
৪. ঘুমাবার আগে কমপক্ষে ৩ গ্লাস পানি পান করে ঘুমাতে হবে।
পারকিনসন রোগ
এটি স্নায়ুর একটি জটিল রোগ। ব্রেনের আংশিক দুর্বলতা এই রোগের কারণ। পারকিনসনিজমকে রোগ না বলে সহ লক্ষণ সমষ্টি বলা যেতে পারে।
রোগের কারণ
মস্তিষ্কের সাদা অংশের মধ্যে অবস্থিত ভৌমিক গ্রন্থির আঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি এই রোগের প্রধান কারণ। তাছাড়া গুরু মস্তিষ্কের টিউমার, ম্যাঙ্গানিজ বা কপার বিষ প্রভৃতি কারণেও এই রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ
১. হাত-পা ও শরীরে কাঁপুনি দেখা যায়। অনেক সময় মাথা কাঁপে।
২. মাংশপেশী শক্ত হয়ে যায় এবং রোগী ধীরে ধীরে হাঁটে, কখনো বা থামে।
৩. চলার সময় হাত শরীরের সাথে থাকে, নড়ে না।
৪. হাঁটু ভাজ করে বসতে পারে না। পায়ের গোড়ালি মাটি পর্যন্ত পৌঁছায় না।
খাবার ও চিকিৎসা
১. উপরের লক্ষণগুলো কোনো মানুষের থাকলে তাড়াতাড়ি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্বাবধানে চিকিৎসা করাতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করালে পরে এই রোগ সারানো কঠিন হয়ে পড়ে।
২. আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন সরিষার তেল মালিশ করলে উপকার হয়।
বাত রোগ
গাউট বা বাত বাত খুব পরিচিত একটি রোগ। এই রোগে দেহের ছোট ছোট জোড়া আঙ্গুল, পায়ের বুড়ো আঙুলের গিড়া বা গোড়ালি আক্রান্ত হয়। যেকোনো বয়সের লোক এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগের কারণ
১. বিশেষ খাবার থেকে শরীরে রক্তের মধ্যে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি পেয়ে টিস্যুর মধ্যে জমা হলে জোড়ায় ব্যথাসহ ফুলে উঠে।
২. তৈলাক্ত মাছ, মাছের ডিম, মাংসের ঝোল, কলিজা প্রভৃতি খাবারে পিউরিন বেশী থাকে। সেখান থেকে ইউরিক এসিড তৈরি হয়।
৩. অতিরিক্ত মদ্যপান ও মাংস খাওয়া।
রোগের লক্ষণ
১. হঠাৎ করে পায়ের বৃদ্ধা আসলে বা পায়ের গিরার জোড়া আক্রান্ত হয় এবং অত্যাধিক ব্যথা হয়।
২. অল্প অল্প জ্বর এই রোগের প্রধান লক্ষণ।
৩. ব্যথা কমে যাবার পর আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়।
৪. হাঁটুর জোড়া, পায়ের গোড়ালি, নখের জোড়া, হাতের কব্জি, কুনুই প্রভৃতি স্থানে প্রবল ব্যথা অনুভব করা।
খাবার ও চিকিৎসা
১. অভিজ্ঞ অর্থোপেডিক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে হবে।
২. রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
৩. বেশি পরিশ্রমের কাজ কমাতে হবে।
৪. আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন সরিষার তেল বা গরম পুরাতন ঘি মালিশ করলে উপকার হয়।