আত্নহত্যা সম্পর্কে ইসলাম যা বলে
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৫৩ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
আত্মহত্যা নিঃসন্দেহে মারাত্মক অপরাধ। ইসলামি শরিয়তে আত্মহত্যা করা হারাম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ وَلاَ تَقْتُلُواْ أَنفُسَكُمْ إِنَّ اللّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।’(সূরা: নিসা, আয়াত: ২৯)।
পরবর্তী আয়াতে রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَانًا وَظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيهِ نَارًا وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللّهِ يَسِيرًا
‘আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ৩০)।
আরো পড়ুন>>> হজের সওয়াব মিলবে যেসব আমলে
ইমাম ওয়াহেদী ও হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এ আয়াতগুলোর তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না। কেননা তোমরা একই দিনের অনুসারী অতএব, তোমরা যেন একই দেহ। কিন্তু আর একদল আলেম বলেন, এ আয়াতে আত্নহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ মতটিই সটিক।
কেননা আমর ইবনুল আস (রা) হতে বর্ণিত এক হাদিসে এ অভিমতের সর্মথন পাওয়া যায়, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) এর পরিচালিত নেতৃত্বে ‘যাতুস সালাসিল’ যুদ্ধের ময়দানে থাকা অবস্থায় এক শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। সেই রাতে গোসল করলে আমার মারা যাওয়ার আশংকা ছিল। সে অবস্থায় তায়াম্মুম করতঃসাথীদের নিয়ে ফজর নামাজ পরলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ঘটনা খুলে বললে তিনি আমায় বলেন, হে আমর তুমি তোমার সাথীদের নিয়ে অপবিত্র দেহে নামাজ আদায় করেছ। আমি তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে গোসল না করার কারণ অবহিত করলাম। সেই সঙ্গে বললাম আমি কোরআনও পরেছি আল্লাহ পাক বলেছেন, তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আর কোনো মন্তব্য না করে বরং হেসে দিলেন। এ দ্বারা প্রমাণিত হয়, হজরত আমর (রা.) এ আয়াতের অর্থ আত্নহত্যা বুঝিয়েছেন, অপরকে হত্যা করা নয়। নবী করীম (সা.) ও এর সমর্থন করেন।
হজরত যুনদুল বিন আব্দুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেন: রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমদের পূর্বেকার লোকদের মধ্যে এক লোক আহত হয় এবং প্রচন্ড ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়ে, শেষে ছুরি দিয়ে নিজের হাত কেটে ফেলে, অধিক রক্ত ক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ পাক বলেনঃ আমার বান্দা আমাকে রেখে নিজেই নিজের ব্যাপারে ফায়সালা করেছে। আমি তার জান্নাত হারাম করলাম। (বুখারী, মুসলিম)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লোহার কোনো অস্ত্র দিয়ে আত্নহত্যা করবে, সে জাহান্নামে বসে সেই অস্ত্র দ্বারা নিজেকে কাটতে থাকবে। জাহান্নাম হবে তার চির আবাসস্থল। আর যে বিষপানে আত্নহত্যা করবে, জাহান্নামেও সে অনবরত বিষপান করতে থাকবে। পাহাড় বা উচুঁ স্থান থেকে যে ব্যক্তি ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করবে, জাহান্নামেও সে ব্যক্তি আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকবে। জাহান্নামই তার স্থায়ী ঠিকানা। (বুখারী ওমুসলিম)।
হজরত সাবিত বিন যাহহাক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার সমান। কোনো মুমিন ব্যক্তিকে অহেতুক কাফের ঘোষণা করা, তাকে হত্যায় পর্যায়ভুক্ত। আর যে ব্যক্তি কোনো জিনিস দিয়ে আত্নহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সেই জিনিস দিয়েই তাকে শাস্তি দেয়া হব। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী)।
সহীহ হাদিসে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়ে,তীব্র যন্ত্রনায় তারাতাড়ি মৃত্যুর জন্য আপন তরবারীর দ্বারা আত্নহত্যা করেছিল। তার ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন, সে জাহান্নামী।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ ধরণের জঘন্যতম কর্ম থেকে নাজাত দান করুন এবং গুনাহসমূহ মাফ করে দিন। আল্লাহুম্মা আমিন।