রোহিঙ্গা সংকট : `চীন ব্যর্থ হলে তাদের মুখ রক্ষা হবে না`
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:৪০ এএম, ৩ জুলাই ২০১৯ বুধবার
পাঁচ দিনের এক সরকারি সফরে চীনে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে আশা করা হচ্ছে।
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর চীনে এটাই তার প্রথম সফর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, চীনের কাছে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অগ্রগতির সম্ভাবনা আছে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশী ফয়েজ আহমেদ।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু চীন এখানে সংযুক্ত হয়েছে তাই তারা অবশ্যই চেষ্টা করবে যে এটা যেন একটি সফল পরিণতির দিকে যায়।
'তারা চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টাকে একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।'
বাস্তবে সেই চেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। কেননা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং চুক্তি হলেও আসল যে কাজ অর্থাৎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, সেটা এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে মিয়ানমার যেন তাদের নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা এবং মান-মর্যাদার নিশ্চয়তা দিতে পারে, প্রধানমন্ত্রী সে ব্যাপারে চীনের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং চীনও চেষ্টা করবে সমাধান বের করতে কেননা এর সঙ্গে এখন তাদের ভাবমূর্তি জড়িয়ে পড়েছে, বলেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর দেশ এই চীন। এখন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তাদের প্রচেষ্টা যদি সফল পরিণতির দিকে না যায়, তাহলে তাদেরও তো মুখ রক্ষা হবে না।
তিনি বলেন, 'পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর দেশ এই চীন। এখন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তাদের প্রচেষ্টা যদি সফল পরিণতির দিকে না যায়, তাহলে তাদেরও তো মুখ রক্ষা হবে না।'
তার মতে, বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো জন্য বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করতে চীনের সহায়তা চাইতে পারে।
চীনের নেতৃত্বে যদি একটা আন্তর্জাতিক দল তৈরি হয়, যারা এই নিশ্চয়তা দেবে, তাহলে দ্রুত সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করেন মুনশী ফয়েজ আহমেদ।
'বাংলাদেশ চীনকে জানাতে পারে যে তারা যেন উদ্যোগ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক দল গঠন করে, যারা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও তাদের মান-মর্যাদা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো তদারকি করবে'।
এদিকে বিনিয়োগ, ভৌগলিক ও রাজনীতির কারণে চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের আগে থেকেই বেশ সু-সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করার ব্যাপারে চীনের এই ইচ্ছা কতোখানি থাকবে - সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে তিনি আরও জানান যে, চীন নিজ স্বার্থেই মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইবে।
কেননা তাদের যেসব অংশীদার রয়েছে, তারাও চায় মিয়ানমারের পরিবেশ যেন শান্তিপূর্ণ ও বিনিয়োগবান্ধব হয়। সেই সঙ্গে চীনও চাইছে মিয়ানমারে তাদের যেসব বিনিয়োগ আছে, সেগুলো যেন শঙ্কামুক্ত থাকে, বলছেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
এছাড়া আরাকান রাজ্যে তাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। যাদের কেউই এখন সেখানে নেই। সবাই পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসায় আরাকান রাজ্যের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যার অর্থ রোহিঙ্গারা ওই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি ছিল।
মুনশী ফয়েজ বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে ঘিরে সবার স্বার্থই জড়িত। যারা ওখানে কাজ করবে, বিনিয়োগ করবে, এতে তাদেরই লাভ হবে।
মিয়ারমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দফায় দফায় বৈঠক হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন আজও শুরু করা সম্ভব হয়নি।
তবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে চীনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি শক্তি প্রয়োগ বা কঠোর হতে পারছে না।
মিয়ানমারের সাধারণ মানুষও এই সংঘাতের অবসান চায়। কেননা এতে চীন ও প্রতিবেশী দেশগুলো মিয়ানমারের মানুষের জন্য নানামুখী সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে তিনি।