সঙ্গির হাত ধরে রাখলে নিমিষেই পালিয়ে যাবে অসুখ!
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৪২ পিএম, ৩ জুলাই ২০১৯ বুধবার
জীবনে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা হয়া, তার সঙ্গে সম্পর্কে বাঁধা পড়া ও একত্রে বাস করা, এগুলো সবই যদি সুখী জীবনের ছবি হয়, তা হলে সুস্থ জীবনের ছকটাও ঠিক এর সঙ্গেই হাত ধরাধরি করে আছে। আর এই ‘হাত ধরা’-তেই মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি লুকিয়ে আছে বলে দাবি চিকিৎসাবিজ্ঞানের।
সঙ্গীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশের সহজ পন্থা অনেক আছে। তার মধ্যে অন্যতম স্পর্শ। হাতে হাত রাখা, তালুতে বন্দি করে রাখা সঙ্গীর তালু, আর এ ছোট্ট ভালবাসায়তেই নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে হৃদরোগ, ব্যথা বেদনা, ব্যস্ত জীবনের স্ট্রেস। হ্যাঁ, এমনটাই দাবি মনোবিজ্ঞানীদের। তবে শুধু বলার জন্যই নয় বরং ভালবাসার উপযুক্ত যুক্তিও দেখিয়েছেন তারা।
লস অ্যাঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকদের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে এমনই তথ্য। কয়েক হাজার দম্পতির মধ্যে একটি পরীক্ষা চালান তারা। তাতে দেখা যায়, ভালবাসা বোঝাতে হাতে হাত রাখেন এমন দম্পতির প্রায় ৭৫ শতাংশই সঙ্গীর চাহিদা ও অব্যক্ত কথা প্রায়শই বুঝে যান। বাকি ২৫ শতাংশ অল্প ইঙ্গিতেই বোঝেন সঙ্গীর মনের কথা।
গবেষণার আয়োজক ম্যাথু হার্টেনস্টেনের মতে, শুধু মানসিক বোঝাপড়াই নয়, লাভ হরমোন অক্সিটোসিন ক্ষরণে সাহায্য করে হাতের উপর হাত রাখার অভ্যাস। এই উষ্ণতাতেই যৌন জীবন, একে অন্যের সহমর্মী ও বিশ্বাসী হয়ে ওঠার ঝোঁক বাড়ে।
আর বিশ্বাস, ভালবাসা ও সহমর্মিতা এলে যে মানসিক চাপ উধাও হবে এ তো স্বাভাবিক। সারাদিনের কাজের চাপ, ক্লান্তি-বিরক্তি এ সবই সরিয়ে দিতে পারেন শুধু এক ছোঁয়ায়। নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার আর এক অসাধারণ উপায় বলে একে ব্যাখ্যা করেছেন মনোবিদ অমিতাভ মুখার্জি।
শুধু মনের চাপই নয়, শরীরে ব্যথা-বেদনার ঔষধ যে ভালবেসে হাত ধরার মধ্যে লুকিয়ে আছে, তা বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করেছেন কলোরাডো বোল্ডার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। তাদের দাবি এতে যে ফিল গুড হরমোন ক্ষরিত হয়, মরফিনের মতো বেদনানাশক ওষুধের চেয়েও তা শক্তিশালী।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে দিনের অন্তত পাঁচ-দশ মিনিট সঙ্গীর হাত ধরে বসে থাকেন এমন মানুষদের ক্ষেত্রে ব্যথা-বেদনায় ভোগার সম্ভাবনা কমে যায় প্রায় ৬৫ শতাংশ। এখানেও প্রায় বারোশো দম্পতির উপর পরীক্ষা চালান গবেষকরা।
বিহেভিওরাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাতে হাত রাখার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তচাপ। হার্টের অসুখকেও দূরে রাখে। বিশেষ করে অত্যধিক চাপ ও রাত জাগার অভ্যাস থাকলে এই দাওয়াই কিছুটা ক্ষতিপূরণ করে হার্টের।
মানসিক চাপ কমাতে এই উপায় তুলনাহীন! হাতে হাত রাখার মাধ্যমে সঙ্গীর প্রতি যে উষ্ণতার বার্তা যায়, তাতে সে বেঁচে থাকার বাড়তি টান ও বিপদকে মোকাবিলা করার মানসিক শক্তি পায় বলে দাবি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকদের। এই মতে সায় রয়েছে কলকাতার মনোবিদদেরও।
মনোবিদদের দাবি, ভালবাসা বজায় রেখে হাতে হাত রাখার উপকারিতা অসীম। আর এই কাজের জন্য কোনো কারণও লাগে না। বরং নিজেদের মধ্যের সুসম্পর্ক ও বোঝাপড়াই যথেষ্ট। এমনকি সাময়িক অশান্তি বা ঝগড়ার পর এই অভ্যাস ভেঙ্গে দিতে পারে অনেক অভিমানও, দাবি বিজ্ঞানীদের। তাই ভেঙে পড়া সম্পর্ককে বাঁচাতেও এর জুড়ি নেই।