বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে খুশি গৃহহীনরা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:১৪ এএম, ৫ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

কৃষিকাজ ও পানের বরজে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করেন খুলনার রূপসা উপজেলার তালতলা গ্রামের মলয় দাস। ‘জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পে’ ঘর পেয়ে খুশি তিনি।

শুধু মলয় দাসই নন, বাড়ি না হলেও অন্তত একটু দেয়ালের ঘরে থাকতে পেরে খুশি ওই গ্রামের বরুণ হালদার, কাজদিয়া গ্রামের নবকুমার সেনসহ অনেকে।

এক লাখ টাকার মধ্যে যে ঘর দেয়ার কথা ছিল তার নকশা ছিল শুধুমাত্র টিনশেডের। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইলিয়াছুর রহমানের উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটিকে করা হয় সেমিপাকা ঘর।

ডিজাইন পরিবর্তন করে ঘরের মধ্যেই টয়লেট স্থাপন করার মধ্য দিয়ে অন্তত অন্ধকার রাতে ঝুঁকি নিয়ে আর বাইরে যেতে হবে না সেখানকার মানুষগুলোকে।

এভাবেই রূপসাসহ খুলনা জেলার আটটি উপজেলায় এগিয়ে চলেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মসূচি। যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশটি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম।

জেলার ফুলতলা বাদে বাকি আটটি উপজেলায় ‘জমি আছে ঘর নাই’, ‘জমিও নাই ঘরও নাই’, এবং ‘গুচ্ছগ্রাম’ এ তিন ধরনের আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

খুলনা জেলা প্রশাসনের তথ্য কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৭টি আশ্রয়ণে ১৪৫টি ব্যারাকে বর্তমানে এক হাজার ১৯৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ (ফেইজ-২) প্রকল্পে ২২টি আশ্রয়ণে ১৭৪টি ব্যারাকে বর্তমানে এক হাজার ৫০৫টি পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে। আর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে পাঁচটি আশ্রয়ণে ৮৯টি ব্যারাকে পুনর্বাসিত হয়েছে ৩৮৭টি পরিবার।

তিনি আরো জানান, খুলনা জেলায় ৪৪টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪০৮টি ব্যারাকে বর্তমানে তিন হাজার ৮৫টি পরিবার রয়েছে। তবে খালি আছে ৫৫০টি ইউনিট।

অপরদিকে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের সহকারী তথ্য অফিসার মো. আতিকুর রহমান মুফতি জানান, খুলনার আটটি উপজেলায় মোট ২৭টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র রয়েছে। এ বছরের এপ্রিল মাসে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৫ লাখ ২১ হাজার ৫শ’ টাকা, আশ্রয়ণ প্রকল্প (ফেইজ-২) এক কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার এবং আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ৫২ লাখ টাকা ঋণ বরাদ্দ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিপন্ন মানুষের আশ্রয় ও আবাসন নিশ্চিত করা, ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইলিয়াসুর রহমান বলেন, এক লাখ টাকা করে যে বাজেট সরকার থেকে দেয়া হয়েছে তা দিয়েই নির্দিষ্ট ডিজাইনের বাইরে গিয়ে কিছু একটা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে রূপসা উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো তৈরি করার ক্ষেত্রে।

তিনি আরো বলেন, সমাজের হতদরিদ্র মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর এটিই সর্বোৎকৃষ্ট সুযোগ। এই সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্যই টিনের বেড়ার পরিবর্তে দেয়াল দেয়া এবং সংযুক্ত টয়লেট করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। যেটি এরই মধ্যেই অনেকের কাছে ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন বলেও প্রতীয়মান হয়েছে। যে কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকার উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এসে দেখে এর আদলে তাদের উপজেলাতেও ঘর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি তার জন্য একটি বড় প্রাপ্তি বলেই মনে করেন তিনি। 

দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজ-আল-আসাদ বলেন, উপজেলার তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৪৮টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ফেইজে ৭২টি, দ্বিতীয় ফেইজে ৬৭টি এবং তৃতীয় ফেইজে ৭০৩টি পরিবার রয়েছে।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, উপজেলায় ফেইজ-২ এর আওতায় একশ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। গুচ্ছগ্রামে ১৭০টি ঘর দেয়া ছাড়াও আরো একশ’ পরিবারকে ঘর দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এভাবেই খুলনার নয়টির মধ্যে আটটি উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দরিদ্র মানুষগুলো খুঁজে পাচ্ছেন তাদের বসবাসের ঠিকানা। এজন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা এর উদ্যোক্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।