বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিয়ানমারে যুদ্ধাপরাধের নতুন অভিযোগ জাতিসংঘ তদন্তকারীর

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:০৪ এএম, ৫ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধাপরাদের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের এক তদন্তকর্মকর্তা। 

মঙ্গলবার মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে মিয়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ইয়াঙ্গি লি এ অভিযোগ করেন। - খবর দ্য টেলিগ্রাফ

তিনি বলেন, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অস্থিতিশীল প্রদেশগুলোর বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার লংঘন করে নতুন যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে।  এ অভিযোগের ফলে আগে থেকেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের পাল্লা আরো ভারি হবে।

 

বিধ্বস্ত রাখাইন ও চিন প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এখনো জাতিগত বিদ্রোহীদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে পশ্চিমাঞ্চলীয় এ প্রদেশ দু’টিতে ফের অভিযান চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ চালাচ্ছে এমন অভিযোগ এনে গেল ২২ জুন থেকে মিয়ানমার সরকার সেই অঞ্চলের মোবাইল ইন্টারনেট সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। 

এছাড়া কোন সাংবাদিক এমনকি জরুরী মানবিক সহায়তা সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্তদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না সেখানে। ফলে সেখানে এখন কি হচ্ছে তা নিয়েও তা নিয়েও ব্যাপক উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ।


 

ছবি: ইয়াঙ্গি লি

ছবি: ইয়াঙ্গি লি

 

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে’ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অভিযানে ব্যাপক খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বলে পরে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছিলেন।

ইয়াঙ্গুনের সরকার এসব বর্বরতার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবেই ওই অভিযান চালানো হয়েছিল।

রাখাইন ও চিনে মোবাইল ফোন ‘ব্ল্যাক আউটের’ মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সম্ভবত বড় ধরনের কোনো মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গেল সপ্তাহে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন লি।

মঙ্গলবার তিনি ওই আশঙ্কার বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে হাজির করেন।

“রাখাইন প্রদেশের উত্তরে ও দক্ষিণাঞ্চলীয় চিন প্রদেশের একাংশে আরাকান আর্মির সঙ্গে (সেনাবাহিনীর) যে সংঘর্ষ গত কয়েক মাস ধরে চলছে, তা বেসামরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। তাতমাদাও (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) ও আরাকান আর্মির অনেক কাজই মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে; মানবাধিকার লংঘনের পাশাপাশি সম্ভবত এগুলো যুদ্ধাপরাধের মাত্রাও ছুঁয়েছে,” বলেন তিনি।

 

পালেতোয়ার ১২ নির্মাণশ্রমিক এবং বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে ৫২ গ্রামবাসীসহ অনেক বেসামরিক লোককে আরাকান আর্মি অপহরণ করেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে জানান লি।

অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাসাজশ আছে এমন সন্দেহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও রাখাইনের অসংখ্য বাসিন্দাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আটক অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছে বলেও দাবি তার।

এপ্রিলে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বাঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি ছুড়েছিল বলেও জানান জাতিসংঘের এ বিশেষজ্ঞ।
চলতি বছর সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজারের মতো লোক পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন বলেছেন, তার দেশের সরকার অগাস্ট পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে এবং সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে।