বৈদিক ধর্ম ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) (১ম পর্ব)
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:২০ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
বৈদিক (হিন্দু) ধর্মের শাস্ত্রসমূহে ধর্মের শেষ অবতার কল্কি অবতারের যে বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে, তা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নির্দেশ করে মর্মে কতিপয় হিন্দু ও মুসলিম পণ্ডিত মনে করেন।
ঋগ্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, উপনিষদ ও ভবিষ্যপুরাণের কতিপয় শ্লোকের উদ্ধৃত দিয়ে তাঁরা বলেন, বৈদিক (হিন্দু) ধর্মের শেষ অবতার যিনি কল্কি অবতার নামে অধিক পরিচিত, তিনি সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সাধারণ হিন্দুদের ধারণা কল্কি অবতারের আগমন শীঘ্রই ঘটবে। তবে মুসলমানদের বিশ্বাস কল্কি অবতারের আগমণ ১৪০০ বৎসর পূর্বেই হয়েছে। কল্কি অবতারের আগমণ সম্পর্কে ভাগবতে বলা হয়েছে, কল্কিরূপে যে অবতার আবির্ভূত হবেন, তিনি সমস্ত ধর্মমতের মহাসমন্বয় ঘটিয়ে সমগ্র মানব গোষ্ঠিকে বিশ্বায়নের যুগে এক বিশ্বজনীন আদর্শে সুসংগঠিত করবেন। অন্যান্য অবতারের তেজ যদি এক সূর্যের সমান হয় কল্কির তেজ হবে সহস্র সূর্যের সমান। (পীযুষ কান্তিঘোষ, চুম্বকে অনুকুল চন্দ্র ও তার বাণী- ০৮ পৃ)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের বহু পূর্বে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে বৈদিক (হিন্দু) ধর্ম ও ইহুদী ধর্ম যথাক্রমে ভারতবর্ষে ও প্যালেষ্টাইনে এবং খ্রিষ্টান ধর্ম প্রথম শতাব্দী থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে এশিয়া আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করে।
কল্কি অবতারের বৈশিষ্ট্য-
ক) জন্মস্থান-
কল্কি পুরাণে (২/৪) বলা হয়েছে যে, কল্কি অবতার সম্ভল গ্রামের প্রধান পুরোহিত পুত্র বিষ্ণুযশার ঔরসে ব্রাক্ষণ কন্যা সুমতির গর্ভে জন্ম গ্রহণ করবেন।
“সম্ভল বিষ্ণুযশো গৃহে প্রাদুর্ভবাম্যহম সুমতাং মাতরিবিভো কন্যায়ং ত্বান্নদেশতঃ”
কবি ভক্তদাসের ভাষায়- বিষ্ণুযশা পিতা মম ধার্মিক ব্রাক্ষ্মণ সুমতি জননী মম অতি পুণ্যবতী, সম্ভল গ্রামেতে হয় আমার বসতি। (কল্কি পুরানম- ১২-১৩ পৃ)
সম্ভল অর্থ নিরাপদ স্থান, গ্রাম অর্থ শহর। সম্ভল গ্রামের অর্থ হচ্ছে নিরাপদ শহর। পৃথিবীতে একমাত্র মক্কাই হচ্ছে নিরাপদ শহর। কল্কি অবতারের পিতার নাম বিষ্ণুযশ। বিষ্ণু শব্দের অর্থ সৃষ্টিকর্তা। যশ শব্দের অর্থ দাস বা ভৃত্য। সংস্কৃত শব্দ “বিষ্ণুযশ” অর্থ হচ্ছ্ ইশ্বরের দাস বা ভৃত্য। যার আরবী পরিভাষা হচ্ছে “আব্দুল্লাহ”।
কল্কি অবতারের মায়ের নাম সুমতি সৌ-ম্যবতী, সংস্কৃত ভাষায় সু অর্থ উত্তম এবং মতি অর্থ অন্তর। সুমতি শব্দের অর্থ হচ্ছে সুন্দর অন্তর বা শান্ত ও মননশীল স্বভাবযুক্তা। অর্থাৎ সুমতি আরবী পরিভাষায় হচ্ছে আমেনা! হজরত সুহাম্মদ (সা.) এর পিতার নান আব্দুল্লাহ ও মাতার নাম আমেনা। আর মক্কা শহরের প্রধান পুরোহিত হলেন আব্দুল মোত্তালিব। তার গৃহে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল্লাহর ঔরসে ও আমিনার গর্ভে হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন।
খ) জন্মস্থান-
কল্কি অবতার সম্ভলদ্বীপে জন্মগ্রহণ করবেন।
“সম্ভল গ্রামমুখস্য ব্রাক্ষ্মণ্যস্য মহাত্বন, ভবনে বিষ্ণুযশসো কল্কি প্রাগূদুর্ভবিষ্যতি।”
অর্থাৎ, সম্ভল দ্বীপের নিরাপদ শহরের প্রধান পুরোহিতের মহৎপুত্র বিষ্ণুযশের ঔরসে কল্কি অবতার জন্মগ্রহণ করবেন। (ভাগবত পুরাণ- ১২/২/১৮)
বৈদিক (হিন্দু) শাস্ত্রপুরাণ মতে পৃথিবীকে সাতটি দ্বীপে ভাগ করা হয়েছে।
১- ভারতবর্ষ, তিব্বত ও মায়ানমার (বার্মা) নিয়ে হলো জাম্বদ্বীপ।
২- বেলুচিস্তান ও আফগানিস্তান নিয়ে হলো কারুঞ্চদ্বীপ।
৩- ইউরোপ হলো শাকদ্বীপ।
৪- আফ্রিকা হলো কাশদ্বীপের অন্তর্ভূক্ত গোমেদদ্বীপ।
৫- আরব ও এশিয়া মাইনর হলো সম্ভলদ্বীপ।
৬- রাশিয়া ও চীন নিয়ে হলো শাকদ্বীপের অন্তর্ভূক্ত পুস্করদ্বীপ।
৭- মক্কা নগরী সম্ভলদ্বীপে অবস্থিত।
গ) জন্ম তারিখ-
কল্কি পুরাণে বলা হয়েছে, কল্কি অবতার মাধব মাসের দ্বাদশী শুক্ল পক্ষে জন্মগ্রহণ করবেন।
“দ্বাদশ্যং শুক্লপক্ষস্য মাধবে মাসি মাধবঃ”।
বিক্রমী পঞ্জিকা মতে মাধব মাস হলো বৈশাখ বা ফাল্গুন (বসন্তের মাস)। মাধবের আরবী পরিভাষা হচ্ছে রবি। অর্থাৎ রবিউল আওয়াল মাস। আর দ্বাদশ হলো (১২) বার। অর্থাৎ নবী (সা.) রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করবেন।
ঘ) নরাশংস-
বৈদিক (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের গ্রন্থ ঋগ্বেদ-এর বিভিন্ন শ্লোকে কল্কি অবতারকে “নরাশংস” হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। যেমন-
“নরাশংসঃ প্রতি ধামন্যঞ্জন তিস্র দিবঃ প্রতি মহৃা স্বর্চি”। (ঋগ্বেদ- ২/৩/২ ও ১/১৪২/৩)
অর্থাৎ নরাশংস নামক পুরুষ অগ্নিসুন্দর শিখা বিশিষ্ট হবে। নিজ মহিমায় প্রতিটি আহুতি স্থানে দিপ্যমান হবেন। ঋগ্বেদের বিভিন্ন শ্লোকে “নরাশংস” শব্দটি রয়েছে। সংস্কৃতে নর শব্দের অর্থ মানুষ, আর আশংস অর্থ প্রশংসিত। নরাশংস শব্দের অর্থ প্রশংসিত মানুষ। যার আরবী পরিভাষা হলো “মুহাম্মদ”।
স্বর্চি অর্থ হলো সুন্দর কান্তিময় পুরুষকে বুঝানো হয়েছে। যার মুখমন্ডল থেকে জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয়ে সকল গৃহ আলোকিত হবে এবং বিশ্বব্রাক্ষ্মন্ড তার প্রভাবে প্রভাবিত হবে। সংস্কৃতে “নরাশংস স্বর্চি” তিনি, যিনি মানব জাতিকে আধ্যাত্মিকতার উচ্চ স্তরে নিয়ে সত্যের পথ দেখিয়েছেন। ইসলামে নবী মুহাম্মদ (সা.) এ ধরণের একজন সুন্দর চেহারার জ্যোতিময় মানুষ ছিলেন, যার প্রভাবে অধিকাংশ মানুষ প্রভাবিত হয়ে সত্য অনুসন্ধানে লিপ্ত রয়েছে।