মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বৈদিক ধর্মে হজরত মুহাম্মদ (সা.) (২য় পর্ব)

নিজস্ব প্রতিবেদন

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:২১ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

অশ্ব প্রদান-

“ত্বং গারুড়মিদং চাশ্বং কামগং বহুরুপনম”।
(কল্কি পুরাণ- (৩/২৪) তর্কালঙ্কার- ২৯ পৃ)

অর্থাৎ দেবতা প্রদত্ত কামগামী ও বহুরুপী অশ্বে আরোহণপূর্বক কল্কি অবতার অতিদ্রুত একস্থান হতে অন্যস্থানে গমন করিবেন।

কবি ভক্তদাস অবতারের এ বিষয়টি পয়ার ছন্দে বলেন,

বেগবান শ্বেত যাহার বাহন
হস্তে অসি ধারণ করত,
যেইতন ত্রিলোকের রক্ষাকার্যকরে সর্বক্ষণ,
যাঁর দ্বারা কলিনাশ হবে নিশ্চয়।

উল্লেখ্য যে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) হজরত জিবরাঈল আঃ. এর সাথে “বোরাক” নামক একটি দ্রুতগামী প্রাণীর পিঠে আরোহণ করে মক্কার কা’বা ঘর থেকে জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদে গমন করেন। বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদে দু’ রাকআত নামায আদায় করে “বোরাকে” চড়ে সপ্তম আকাসে “সিদরাতুল মুনতাহা” নামক স্থানে পৌছেন ও আল্লাহর সাথে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে কথা বলেন। সাদা ঘোড়া সাধারণত আরব দেশে পাওয়া যায়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর এ ধরণের সাদা ঘোড়া ছিল।

মামাহ ঋষি-

বৈদিক (হিন্দু) শাস্ত্র ঋগ্বেদের ১ম মন্ডলে ১৯টি শ্লোকে “মামাহ” ঋষি নামক একজন অবতারের উল্লেখ আছে। যেমন-

“তন্নো মিত্র বরণো মামাহস্ত সিন্ধুঃ পৃথিবী উত দৌ”

অর্থাৎ মিত্র বরুণ মামাহ, আদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী ও দূৎ আমাদের রক্ষা করুন।

“মামাহ” শব্দটি সংস্কৃত নয়। ইহা আরবী ভাষা থেকে উৎপন্ন হয়ে সংস্কৃত ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে “মামাহ” রূপ ধারণ করে সে ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। “মামাহ” শব্দটি মূলত মুহাম্মাদ শব্দের অপভ্রংশ। “মামাহ” নামে হিন্দুদের কোন দেবতা নেই।

দশ সহস্ত্র সৈনিক- 

অন স্বন্তাসৎ পতিমামহে মেগাবা চেতিষ্ঠো অশুরো মঘোনঃ।

ত্রৈকৃষ্ণো অগ্নি দশভিঃ সহৈস্ত্রৈ বৈশ্বানর ত্র্যুরুপশিচকেত। (ঋগ্বেদ- ৫/২৭/১)

অর্থাৎ হে মানবগনের অধিনায়ক বৈশ্বানর! সাধুগনের রক্ষক, জ্ঞানবান, অসুর এবং ধনবান ত্রিকৃষ্ণ পুত্র ত্র্যরুণ নামক রাজর্ষি আমাকে শকটযুক্ত গোদ্বয় এবং দশ সহস্ত্র সুবর্ণ প্রদান করে খ্যাতিলাভ করছেন।

হিন্দুধর্মের বিশেষজ্ঞ ডঃ বেদ পধকাশ উপাধ্যায় ও মাওলানা আব্দুল হক বিদ্যার্থীর মতে ঋগ্বেদের এ শ্লোকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে বুঝানো হয়েছে।

উপরোক্ত শ্লোকে যে দশ সহস্র সৈনিকের কথা বলা হয়েছে তা মক্কা বিজয়ের সময়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে থাকা সৈনিকদের বোঝানো হয়েছে। এ দশ সহস্র সৈনিক সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে মক্কা অভিযান কালে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গী ছিলেন। কেননা বিশ্বের ইতিহাসে কোনো নবী বা অবতারের সাথে দশ সহস্র সৈন্য কখনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি।

 

পরোক্ষ জ্ঞান-

বৈদিক (হিন্দু) শাস্ত্রসমূহে নরাশংসের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে তিনি একজন পরোক্ষ জ্ঞনসম্পন্ন মহামানব। এ পরোক্ষ জ্ঞান কী? এ পরোক্ষ জ্ঞান বলতে প্রত্যাদেশ বুঝানো হয়েছে। প্রত্যাদেশের আরবী শব্দ ওহী । হজরত মুহাম্মদ (সা.) ওহী বা পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন লাভ করেছিলেন। এছাড়া পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা বলে দিতে পারতেন। ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে পারস্য সম্রাট পারসিক ধর্মাবলম্বী সূর্য পুজারী খসরু পারভেজ কর্তৃক একেশ্বরবাদী খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস পরাজিত হলে মক্কার কাফের কুরাইশরা উল্লাসিত হন। 

কিন্তু হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে নির্ভিকভাবে ঘোষনা দেন যে, তিন থেকে নয় বৎসরের মধ্যে রোমান বাহিনী পারস্য বাহিনীকে পরাজিত করে জেরুজালেম পুনর্দখল করবে। নবী (সা.) এর এ ভবিষ্যত বাণী ৬২৩-৬২৪ খিধষ্টাব্দে সত্যে পরিণত হয়। রোমান সম্রাট, পারস্য সম্রাটকে হারিয়ে জেরুজালেম দখল করে।

দেবতা কর্তৃক সহায়তা প্রধান- 

বৈদিক (হিন্দু) শাস্ত্রে কল্কি পুরাণে বলা হয়, ধর্মের প্রসারে কল্কি অবতার দেবতাদের সহায়তা পাবেন।

যাত যয়ুং ভুবং দেবাং  ̄স্বাং শাবতরণ রতা
রাজানৌ মরুদেবাপী স্থাপয়িষ্যাম্য হং ভবি

অর্থাৎ হে দেবগণ! তোমরা পৃথিবী আগমণ পূর্বক স্ব স্ব অংশে অবতীর্ণ হও। আমি পুণর্বার মরু ও দেবাপি নামক রাজদ্বয় পৃথিবীর শাসন কর্তৃত্ব স্থাপন করিব।

এ শ্লোকে ঈশ্বর সত্য ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য দেবতাদিগকে পৃথিবীতে প্রেরণ করে যুদ্ধে অংশ গ্রহণের নির্দেশ দেন।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বদর ও খন্দকের যুদ্ধে মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত ফেরেশতাদের দ্বারা সহায়তা পেয়ে যুদ্ধে জয়লাভ করে ইসলামের পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে ফেরেশতাদের দ্বারা সহায়তার বিষয়টি পবিত্র কুরআনে সূরা আলে ইমরান এর ১২৩-১২৪ নং আয়াতে উল্লেখ আছে।